সময় জার্নাল প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিধন্য কক্ষ 'কেবিন ১১৭' উদ্বোধন করা হয়েছে। শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান বি ব্লকের দ্বিতীয় তলায় এ কেবিনের উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
ঐতিহাসিক এই উদ্বোধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএসএমএমইউর উদ্যোগে ও ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালসের সহায়তায় এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি। উদ্বোধক হিসেবে স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। আলোচক হিসেবে অংশ নেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায়, নজরুল সঙ্গীত শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক, নজরুল সঙ্গীত শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল, নজরুল স্মৃতিক্ষক উদ্বোধন উপ-কমিটির সদস্য সচিব ডা. এস এম ইয়ার ই মাহাবুব। আবৃত্তি করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জয়ন্ত চট্টপাধ্যায়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। এসময় সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যে কেবিনে চিকিৎসাধীন ছিলেন বিদ্রোহী কবির স্মৃতিধন্য সেই ঐতিহাসিক ১১৭ নম্বর কেবিন সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে এটা একটি আসাধারণ উদ্যোগ এবং আগামী দিনে নতুন প্রজন্মের জন্য আমাদের জাতীয় কবিকে জানতে ও জাতীয় কবির স্মৃতি সংরক্ষণে এই উদ্যোগ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, সঙ্কট মোচনে, অন্যায় ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে চিরকাল প্রেরণা দিবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের আদর্শ। বর্তমান সময়েও যেকোনো অশুভ তৎপরতার বিষয়ে আমাদেরকে সতর্ক থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও জাতীয় কবির আদর্শকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যেতে হবে।
উপাচার্য ডা. শরফুদ্দিন আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের ২২ জুলাই চিকিৎসকদের পরামর্শে বঙ্গবন্ধু ‘কবিভবন’ থেকে কবিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (তৎকালীন আইপিজিএমআর)'র ১১৭ নম্বর কেবিনে স্থানান্তর করেন। ১ বছর ১ মাস ৮ দিন এ কেবিনে চিকিৎসক ও নার্সদের নিবিড় যত্ন ও সেবা দেওয়া হয় মানবতার এই কবিকে। বিভিন্ন সময়ে কবির চিকিৎসায় যুক্ত ছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের তৎকালীন মহাপরিচালক ডা. মেজর এ চৌধুরী। পরবর্তী সময়ে জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম, ডা. নাজিমুদ্দৌলা, ডা. আশিকুর রহমান খান প্রমুখ। বঙ্গবন্ধুর অনুমতি নিয়ে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা দেন ডা. বায়েজিদ খান। কবির সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানে যুক্ত ছিলেন সেবিকা শামসুন্নাহার ও সেবক ওয়াহিদুল্লাহ ভুঁইয়া। এই ১১৭ নম্বর কেবিনেই বাঙালির পরমপ্রিয় কবির জীবনাবসান ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে শান্ত, সবুজ পরিবেশে সমাহিত করা হয়েছে তাঁকে। সব সুর থেমে যায়; কিন্তুর আজও মধুর বাঁশারী বাজে। তিনি আছেন আমাদের চেতনায়, অন্তরের অন্তঃস্থলে এবং থাকবেনও চিরকাল। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ ও বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রবাদপুরুষ। শোষিতের পক্ষে আর শোষকদের বিরুদ্ধে আজন্ম বিদ্রেহী কবি জীবন-সায়াহ্নে এসে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অমর কবির মৃত্যু নেই-কোটি বাঙালির কন্ঠে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়-এর ১১৭ নম্বর কেবিনটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের শেষ বিদায়ের স্মৃতিধন্য, বাঙালির তীর্থস্থান এবং এই কেবিনটি জাতীয় কবির স্মৃতিধন্য জাদুঘর হিসেবে উন্মুক্ত থাকবে।
অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকর, সাংবাদিক ও সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে অনন্য অবদানে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধ করেছেন। মাত্র ২৩ বছর বয়সে রচনা করেছেন অমর কবিতা ‘বিদ্রোহী’, যেখানে নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন-‘আমি চির বিদ্রোহী বীর-আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!’ অত্যাচারী ও উৎপীড়কের বিরুদ্ধে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন বিদ্রোহী। একইসঙ্গে কৃষক-শ্রমিক-মেহনতী মানুষের কল্যাণ ও মঙ্গলে নিবেদতি। বাংলাদেশের মহান মুক্তি সংগ্রামে তিনি ছিলেন প্রেরণা। মুক্তিযোদ্ধারা মহান এ কবির ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত করে নির্ভয়ে এগিয়ে যেতো রণাঙ্গণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বিজয় কেতন ওড়াতে, কন্ঠে তাঁদের প্রেরণাদায়ী গান-চল চল চল ...। তাঁর জন্মদিনটিকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক সূচনার দিন হিসেবে।
উপাচার্য আরও বলেন, ১৯৪২ সালে জাতীয় কবির নিউরোডিসঅর্ডারজনিত জটিল ব্যাধি ধরা পড়ে। এ ভয়ংকর রোগের কারণে ৩৪ বছরের বেশি সাহিত্য ও সঙ্গীত জগৎ কর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও ধূমকেতু, ভাঙার গান ও অগ্নিবীণার স্রষ্টা এ মহান কবির সাম্য-সম্প্রীতি-মানবতার বাণী আমাদের চিরকালেরই প্রেরণা।
সময় জার্নাল/এসএ