কে বলে সমাজে ভাল মানুষ নেই? কিশোরগঞ্জ আসছিলাম একদিনের ট্যুরে। সাথে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আমার একমাত্র পুত্র জারিফ আশরাফী তায়েশ। রিজার্ভ অটোতে বিন্নাটি ইউনিয়নের ঢাকা-কিশোরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে যশোদল ইউনিয়নের স্বল্পদামপাড়া যাত্রা।
বাড়ীর কাছাকাছি এসে পাকা রাস্তার উপর অন্য যাত্রীদের উঠার সুবিধার্থে অটো ছেড়ে দেই। বাপ-বেটা অটো থেকে নেমে ড্রাইভারের ভাড়া মিটিয়ে তাকে ধন্যবাদ দিয়ে হাঁটা দেই বাড়ির উদ্দেশ্যে। তখন বেলা প্রায় ১১টা। কিছুক্ষণ পর যখন ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলাম ব্যাগটা কোথায়? তখন ও বললো আব্বু ব্যাগটাতো মনে হয় অটোতেই রয়ে গেছে। রাস্তায় গিয়ে দেখা গেলা অটো ঐ যাত্রীদের নিয়ে চলে গেছে। ঐ যাত্রীর আত্মীয়দের থেকে মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে যোগাযোগ করলে তারা বলে অটোতে তারা ব্যাগ দেখেনি। যাক হয়তো এ ব্যাগ আর পাওয়া যাবেনা এমনটাই মনে করে বাড়ীতে যে কাজে এসেছি, সে কাজে মন দিলাম।
ব্যাগে মূল্যবান দলিল দস্তাবেজ সহ কিছু কাগজ ছিলো। বিকাল ৩টার দিকে ব্যাগ সহ ড্রাইভার এসে হাজির। নাম তার আবু হানিফ ( লালগেঞ্জি পড়া ] বিন্নাটি ইউনিয়নের মুন্নাপাড়ায় তাঁর বাড়ি। ও বললো স্যার আপনি গাড়ীতে ওঠ।র সময় ব্যাগ থেকে স্যানিটাইজার বের করে গাড়ী স্প্রে করার সময় আপনার ব্যাগটা দেখেছিলাম। ৫/৬টা খেপ মারলাম কেউতো আমাকে বললোনা যে, পেছনে আপনার ব্যাগ। বিকাল হয়ে আসছে তখন একজন যাত্রী আমাকে বললো আপনার গাড়ীতে এখানে ব্যাগ রেখেছেন কেন? তখন আমি দেখলাম আপনার ব্যাগ। ব্যাগটিযে আছে তা এর আগে কেউ বলেওনি আবার কেউ নিয়েও নেয় নি। তাই আবার রওনা দিলাম আপনার উদ্দেশ্যে।
ব্যাগটি হাতে পেয়ে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করলাম। হানিফকে ধন্যবাদ দিলাম। ক্ষুদ্র করে তার আসার ভাড়াটা আর একটু ফ্ল্যাক্সি। ওর বিনয়ও ছিলো খুবই।
তার গাড়ীতে আসার সময় যতটা আলাপ করেছিলাম তাতে জানতে পেরেছিলাম ওর একাধিকবার অপারেশন হওয়াায় কঠিন কাজ করা সম্ভব নয়। তাই বসে বসে অটো চালায়। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন। শুভ কামনা সবার জন্য।
লেখক : ইতিহাসবিদ।