বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

ওমানে নির্যাতনের শিকার বশিরের পাশে 'ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম অনুপ্রেরণা-২'

শুক্রবার, মার্চ ১২, ২০২১
ওমানে নির্যাতনের শিকার বশিরের পাশে 'ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম অনুপ্রেরণা-২'

মোঃ এমদাদ উল্যাহ, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা : বশির আহমেদ(৪৬)। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের সুলতান আহমেদের পুত্র। বশির আহমেদ ২০১৭ সালে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে জীবিকার তাগিদে পাড়ি দেন ওমানে। স্বপ্ন ছিল-‘পরিবারের দুর্দশা দূর করবে। সমাজের অন্য সব মানুষের মতো দুই বেলা দুই মুঠো ভাত ভালোভাবে খেতে পারবে’।

সব কিছু ঠিক করে তিনি বৈধভাবে বিদেশ যান। পড়ালেখা না থাকা ও দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশে যে কাজ দেওয়ার কথা ছিল সেই কাজ তিনি পাননি। বিদেশ যাওয়ার পর সবকিছুতে তাঁর প্রতিকুল অবস্থা বিরাজ করে। কোন রকম আধা বেলা বা এক বেলা খেয়ে কাজ কর্ম করেন। তিনি কাজ করার পরও নিয়মিত বেতন পেতেন না। যার ফলশ্রুতিতে তিনি নিজে চলতেও অনেক কষ্ট হতো। দেশে থাকা পরিবারের সদস্য জন্য তিনি কোন টাকা পাঠাতে পারতেন না।

পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় আকামা করতে না পারায় কিছু দিন যাওয়ার পর তিনি ওই দেশে অবৈধ হয়ে যান। অবৈধ হয়ে যাওয়ার কারণে তিনি আর আগের মতো ফ্রি-ভাবে চলাফেরাও করতে পারতেন না। ফলে অনেক কষ্টের মধ্যেই তাকে জীবন যাপন করতে হয়েছে।

 অবশেষে তিনি ওই দেশের পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দীর্ঘ আট মাস জেলে ছিলেন। জেল খাটা শেষে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয় ওমান সরকার। ওমানের জেলে থাকা অবস্থায় তিনি নানা অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হন। ফলে তিনি বর্তমানে শরীরের মধ্যে ভীষণ ব্যাথা অনুভব করেন। পারেন না ভারী কোন কাজ করতে।

কে বা কারা জানতো বিদেশ যাওয়া তাঁর এবং পরিবারের জন্য আশির্বাদ না হয়ে অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে? বর্তমানে তিনি দেশে পরিবার নিয়ে চরম দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছেন। তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে খুবই অসহায়ভাবে সংসার জীবন পরিচালনা করছেন। 

এমন খবর পেয়ে এনজিও সংস্থা ব্র্যাক 'মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম অনুপ্রেরণা-২ প্রকল্পের' ফিল্ড অর্গানাইজার আলা উদ্দিন সরেজমিন পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি কথা বলেন ওমান ফেরত প্রবাসী বশির আহমেদ ও এলাকাবাসীর সাথে। এলাকাবাসী তাঁর জন্য সহযোগিতা করতে 'ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম অনুপ্রেরণা-২ প্রকল্পের' প্রতি আহবান জানায়। 

ওমানে নির্যাতনের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত বশির আহমেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে কাজ শুরু করে ব্র্যাক। সর্বশেষ গত বুধবার প্রকল্পের কর্মকর্তারা রয়েল ড্যানিস দূতাবাসের অর্থায়নে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মিরশ^ান্নী গরু বাজার থেকে বাছুরসহ একটি গাভী ক্রয় করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ভিপি মাহবুব হোসেন মজুমদারের উপস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী বশির আহমেদের নিকট হস্তান্তর করেন।

 এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম অনুপ্রেরণা-২ প্রকল্পের হেড অফিসের ইকোনমিক রিএন্টিগ্রেশন ম্যানেজার ওয়ান নাই, কুমিল্লা জেলা কো- অর্ডিনেটর আবদুর রহিম, অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য বেলায়েত হোসেন মজুমদার, প্রকল্পের ফিল্ড অর্গানাইজার মোঃ আলা উদ্দিন, স্থানীয় মাস্টার কাউসার আহমেদসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

অসহায় অবস্থাকালে ব্র্যাক অনুপ্রেরণা-২ প্রকল্পের উদ্যোগে বাছুরসহ গাভী পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বশির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ওমানে অত্যাচার নির্যাতনের সময়ে মনে হয়েছিল এ জীবন শেষ। কিন্তু আট মাস জেল খেটে দেশে ফিরে বিমান বন্দরে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের বিভিন্ন উদ্যোগ দেখে আশা জেগেছিল-ব্র্যাকের মাধ্যমে সহযোগিতা পাবো। সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় ও 'ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম অনুপ্রেরণা-২ প্রকল্পের' কর্মকর্তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাছুরসহ গাভী পেয়েছি। ফলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সুন্দরভাবে জীবন কাটবে, ইনশাআল্লাহ’।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম অনুপ্রেরণা-২ প্রকল্পের ফিল্ড অর্গানাইজার মোঃ আলা উদ্দিন বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতারণা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে অনেকেই ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম অনুপ্রেরণা’র অর্থায়নে স্বাভলম্বী হয়েছেন। আমরা প্রবাসীদের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সকলের উচিত নিরাপদ অভিবাসনের জন্য দক্ষ হয়ে বৈধ উপায়ে বিদেশ যাওয়া। এছাড়া অভিবাসন সংক্রান্ত যে কোন তথ্য জানতে দেশ ও বিদেশ থেকে ব্র্যাকের টোল ফ্রি ০৯৬১০১০২০৩০ নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান তিনি’।

সময় জার্নাল/এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল