এম.এ. এলাহী শিমুল: ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকের দিন। বাংলার আকাশ বাতাশ অশ্রু শিক্ত হওয়ার দিন। ১৫ আগস্ট আর শ্রাবণ মিলে মিশে একাকার হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর রক্ত আর আকাশের মর্মচেরা অশ্রুর প্লাবনে। ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট ভোরে যখন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে নিজ বাসভবনে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে বুলেটের বৃষ্টিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিলো তখন যে বৃষ্টি ঝরছিলো, তা ছিলো প্রকৃতিরই অশ্রুপাত। ভেজা বাতাশে কেঁদেছে সমগ্র বাংলায়। কাল থেকে কালান্তরে জ্বলবে এই শোকের আগুন।
বঙ্গবন্ধুকে দ্বৈহিক ভাবে হত্যা করা হলেও তার মৃত্যু নেই। তিনি চিরঞ্জীব। কেননা পাকিস্তান শাসক শোষনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় আন্দোলন ও সংগ্রাম ধারাবাহিকতায় তিনি এনে দিয়েছিলেন লাল সবুজের পতাকা। হাজার বছর ধরে যে স্বাধীনতা স্বপ্ন দেখেছিলো কখনো আর্য, মৌর্য, কখনো পাল কখনো সেন, কখনো সুলতানি কখনো মোগল, কখনো ব্রিটিশ। তারপর পাকিস্তানি শাসনের হাত থেকে স্বাধীনতার যে স্বপ্ন বাঙালি জাতি দেখেছিলো তা এনে দিয়েছিলো বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতার জন্য এ বাংলায় বার্তা দিয়েছিলেন সূর্যসেন, প্রীতিলতা কল্পনা দত্তরা। কিন্তু সেদিন এ স্বাধীনতা আসেনি। এই বাংলার স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলো নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু। খুদিরাম ফাঁসির মঞ্চেও স্বপ্ন দেখেছিলো স্বাধীনতার। তিতুমীর বাঁসের কেল্লায় যুদ্ধ করতে করতে আত্মহতি দিয়েছিলো মাওলানা মনিরুজ্জামান ফরাজী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলো। রজব আলী সিপাহী বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলো। কিন্তু সেদিন এই বাংলায় স্বাধীনতা আসেনি। অতপর পিতার রক্ত আর মায়ের অশ্রুসিক্ত এই বাংলায় টুঙ্গীপারার খোকা নামের ছেলেটি দীর্ঘ ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ কালজয়ী সেই ভাষণের মধ্য দিয়ে এই বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুজিবের নেতৃত্বে হাজারো বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ত্রিশ লক্ষ শহিদের ও দুই লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে আমরা পেয়েছি এই স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি ৭১ এর পরাজিত শত্রুরা ও তাদের দোষররা। সেই পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্রের বহিপ্রকাশ ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট।
সেদিন তারা শুধু বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে নয়, তার সঙ্গে তারা বাঙালি জাতির হাজার বছরের প্রত্যাশা অর্জন স্বাধীনতার আদর্শ গুলোকে ও হত্যা করতে চেয়েছিলো। মুছে ফেলতে চেয়েছিলো বাঙালির বীরত্বগাঁথার ইতিহাসকে। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে একের পর এক চক্রান্তের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর দুই এতিম কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকেও শেষ করে দিয়ে চেয়েছিলো। তারই অপপ্রয়াস ২১শে আগস্ট গ্রেনেট হামলা। এই হামলার মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূণ্য করতে চেয়েছিলো। ১৫ই আগস্ট শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের নিয়ে শেখ হাসিনার পাশে ভ্যানগাডের মত থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী শক্তি হিসেবে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে নিবেদিত প্রাণ সাবেক ছাত্রনেতাদের একটি আদর্শিক ঠিকানা বঙ্গবন্ধু সৈণিক লীগ। যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব বজলুর রহমান ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোস্তাককে খুন করার পরিকল্পনাকারী হিসেবে ১০ বছর জেলে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যার পাশে থাকার জন্য ১৯৯৫ সালে ১৫ আগস্ট যে দলটি প্রতিষ্ঠা করেন তার নাম বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ।
লেখক: যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-বঙ্গবন্ধু সৈণিক লীগ, কেন্দ্রীয় কমিটি। সদস্য-জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি, বঙ্গবন্ধু সৈণিক লীগ ও সাবেক ছাত্রনেতা।
সময় জার্নাল/এমআই