শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

শিশুদের ৯ ধরনের ক্যান্সার ও লক্ষণ সমূহ

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ২, ২০২১
শিশুদের ৯ ধরনের ক্যান্সার ও লক্ষণ সমূহ

ডা. মোহাম্মদ মাসুমুল হক :

আমরা অনেকেই ভেবে থাকি ক্যান্সার শুধু বয়স্কদের হয়ে থাকে, এটি আসলে ভুল ধারণা। যেকোন বয়সেই একজন ব্যক্তি ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। শিশুদের ক্যান্সার বলতে মূলত শূন্য থেকে ঊনিশ বছরের কম বয়সীদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়াকেই বুঝানো হয়। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীতে প্রতিবছর প্রায় ০৪ লাখ শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। তবে উন্নত বিশ্বে যথাযথ চিকিৎসা ও উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রায় ৮০ ভাগ শিশুই ক্যান্সার থেকে সম্পূর্ণ ভালো হয়। যদিও নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর চিত্রটা অনেকটাই আলাদা, এখানে আক্রান্তদের মাঝে সুস্থতার হার মাত্র ১৫-৩০ ভাগ। বাংলাদেশে শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত ও মৃত্যু হারের কোন সরকারি পরিসংখ্যান না থাকলেও বিভিন্ন গবেষণা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার অনুমিত হিসাবে ধরা যায়, প্রতি বছর প্রায় ৯০০০ থেকে ১২০০০ পর্যন্ত শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, যার একটি বড় অংশই মৃত্যুবরণ করে থাকে। 



শিশুরা কেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ঃ

শিশুদের ক্যান্সারে আক্রান্তের পিছনে মূল কারণ এখনো অজ্ঞাতই বলা যায়। তবে জিনগত কারণ, ভেজাল খাদ্য (মূলত খাবারে কৃত্তিম রঙের ব্যবহার), সুনির্দিষ্ট কিছু ভাইরাসের সংক্রমণ, পিতামাতার ধূমপানের অভ্যাস, ক্ষতিকারক রাসায়নিক / কিটনাশকের সংস্পর্শ, এজবাস্টোস, তেজস্ক্রিয় রশ্মি ইত্যাদি শিশুদের ক্যান্সারের ঝুঁকিকে বৃদ্ধি করে।  

শিশুদের প্রধান ক্যান্সার ও তার লক্ষণ সমূহঃ

১) লিউকেমিয়াঃ  চলিত ভাষায় ‘ব্লাড ক্যান্সার’ নামেই বেশী পরিচিত। শিশু কিশোরদের মাঝে এই ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। ঘন ঘন জ্বর,রক্ত স্বল্পতা, ঘাড়, বোগল, কুচকিতে চাকা/ গোটা, মাড়ি,নাক থেকে রক্তপাত, খাবারে অরুচি, ওজন হ্রাস, শরীরে বা হাড়ে ব্যথা, চামড়ায় ছোট দানা বা ছোপ ইত্যাদি এই ক্যান্সারের লক্ষনগুলোর মাঝে অন্যতম।  

২) ব্রেন টিউমারঃ  তীব্র মাথাব্যথা, দৃষ্টি শক্তি কমে আসা, বমি, চলাফেরার মাঝে ভারসাম্যহীনতা, খাবার চিবুতে সমস্যা, জ্বর, খিঁচুনি, হঠাৎ অজ্ঞান হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়।

৩) লিম্ফোমাঃ লসিকা গ্রন্থি বা লিম্ফ নোড এর ক্যান্সারকে লিম্ফোমা বলা হয়। মূলত দুই ধরনের লিম্ফোমা দেখা যায়, সাধারণত অল্প বয়সীদের মাঝে নন-হজকিন্স লিম্ফোমা আর একটু বেশি বয়সে হজকিন্স লিম্ফোমা দেখা যায়। জ্বর আর লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এই রোগের প্রধান লক্ষণ হিসাবে দেখা যায়। এই রোগের জ্বরের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ ধরণ পরিলক্ষিত হয়, তা হলো জ্বর মূলত রাতে আসে এবং বেশ ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যায়। এর সাথে সাথে রোগী ক্ষুধামন্দায় ও ভুগে থাকে ও ওজন হ্রাস হয়ে থাকে। আক্রান্ত লসিকাগ্রন্থির অবস্থানের ভিত্তিতে আরো কিছু লক্ষণ দেখা দেয়, যেমনঃ পেট ফুলে যাওয়া ও ব্যথা, কাশি,শ্বাসকষ্ট , মুখ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।

৪) উইল্মস টিউমারঃ কিডনির একধরণের টিউমার, যা শিশুদেরই হয়ে থাকে। পেট নিচের দিকে চাকা, খাবারে অনীহা, বমি, পেশাবের সাথে রক্ত যাওয়া, জ্বর, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়।

৫) অষ্টিওসারকোমা,ইউইং'স সারকোমাঃ  মূলত হাড়ের ক্যানসার। হাড়ে বা জয়েন্টে ব্যথা, প্রধান প্রধান জয়েন্ট ফুলে উঠা, হাটাচলা বা নড়াচড়া করতে অসুবিধা, জ্বর, ওজন হ্রাস ইত্যাদি এই ক্যান্সারের লক্ষণ হিসাবে প্রকাশ পায়। এই ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা না নিলে ফুসফুসে ছড়িয়ে পরার সম্ভাবনা থাকে, সেক্ষেত্রে কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ ও দেখা যায়।

৬) নিউরোব্লাস্টোমাঃ শরীরে এর কোন অংশে এর অবস্থান সেই অনুযায়ী এর লক্ষণে ভিন্নতা দেখা যায়। এর মাঝে মাথা ব্যথা, গলা /পেটে চাকা, শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন,মুখ, বুক, পেট, গলা, পায়ে পানি আসা, হাড়ে ব্যথা, পরিপাকে সমস্যা, চোখে দেখতে ও চোখের চারদিকে নীলচে হয়ে যাওয়া, চামড়ার নিচে গুঁটি ইত্যাদি লক্ষণ নিয়ে মূলত রোগীরা চিকিৎসকের কাছে আসে।

৭) রেটিনেব্লাস্টোমাঃ বাচ্চাদের অন্যতম প্রধান ক্যান্সার, যা চোখের রেটিনাকে আক্রান্ত করে। শিশুর চোখে সাদা ফোটার মতো দাগ দেখা যায়। এছাড়া চোখের পেশীর অসাড়তা, চোখ ট্যারা হয়ে যাওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ বেশী দেখা যায়। 

৮) হেপাটোব্লাস্টমাঃ সাধারণত পেটে ব্যথা ও চাকা, জ্বর, ডায়রিয়া, ক্ষুধামন্দা, ওজন হ্রাস, সারা শরীরে চুলকানি ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়। 

৯) স্পাইনাল কর্ড টিউমারঃ ঘাড়,পিঠ বা কোমড়ে ব্যথা, মলমূত্র ত্যাগে সমস্যা, হাটতে সমস্যা বোধ করা ইত্যাদি। এই ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুদের বয়স অনুপাতে বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়ে থাকে।

প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় সম্ভব হলে যথাযথ চিকিৎসায় শিশুদের বেশির ভাগ ক্যান্সারই সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। তবে এজন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ জনশক্তি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সর্বস্তরের মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, এন জি ও এমনকি ব্যক্তি পর্যায়ে সবাই সবার জায়গা থেকে এগিয়ে এসে একসাথে কাজ করলে অদূরেই শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার হ্রাস করা সম্ভব হবে।


লেখকঃ
ডা. মোহাম্মদ মাসুমুল হক 
ক্যান্সার প্রতিরোধ চিকিৎসক 
প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব, ক্যান্সার এওয়ারনেস ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল