রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

বাঁশবুনিয়া গ্রাম থেকে পটুয়াখালী শহর (তিন)

রোববার, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১
বাঁশবুনিয়া গ্রাম থেকে পটুয়াখালী শহর (তিন)

জেসমিন আরা বেগম :
মায়ের বিয়ে
"তবু বলিয়াছি মার গলা ধরে, "মাগো, সেই কথা বল,
রাজার দুলালে পাষাণ করিতে ডাইনী করে কি ছল!
সাতশ' সাপের পাহারা কাটায়ে পাতালবাসিনী মেয়ে,
রাজার ছেলেরে বাঁচায়ে কি করে পৌঁছিল দেশে যেয়ে।" "
কবি সুফিয়া কামালের লেখা পল্লী স্মৃতি কবিতার এই লাইনগুলোর মত মাকে জড়িয়ে ধরে রূপকথা শোনার আবদার কখনো করা হয়নি। আমার মা কোন রূপকথার গল্প কখনো শোনার সুযোগ পেয়েছিলেন কি না বা তিনি আদৌ কোন রূপকথার গল্প জানতেন কি না তাও জানি না। তবে তাঁর জীবন কাহিনী রূপকথার চেয়ে কোন অংশে কম না, তাই মায়ের কাছে শুধু তাঁর ছোটকালের গল্প শোনার আবদার করতাম।
- মা তোমার কত বছর বয়সে বিয়ে হয়েছে?
- জানি না?
- তোমার মনে নাই?
- না।
শুনে আমি হেসে কুটিকুটি হই। এ কেমন বিয়ের কনে যার নিজের বিয়ের কথা মনে নাই?
- কবে শ্বশুর বাড়ি প্রথম আসলা?
- মনে নাই। তবে আমার এক চাচিশাশুড়ি সালেহার মা আমাকে বলছে, 'মেরধার ঝি, তোমার মায় তোমারে লইয়া পেরথম যহন আমাগো বাড়ি বেড়াইতে আইছে, তোমার মায় তোমারে কোলে লইয়া আটতো আর তোমার ঠ্যাং দুইডা দুই পাশে ঝোলতো'।
আমি বুঝতে পারি মায়ের বিয়ে বা তার পরবর্তীকালে শশুর বাড়ি আসার কথা কিছুই তাঁর মনে নেই। আমি যেন আমার মানসচক্ষে স্পষ্ট দেখতে পাই আমার নানি তার ৩-৪ বছরের শিশু কন্যাকে কোলে নিয়ে আমাদের বাড়ির উঠানে হাঁটছেন আর সেই শিশুটির লম্বা, ফর্সা দুই পা দুইদিকে দোল খাচ্ছে।
আমার নানি মারা যান প্রথমে, মায়ের বয়স হয়তো ৫-৬ বছর হবে। কারণ আমার মায়ের তাঁর মায়ের কথা কিছুই মনে নাই। তারপরে নানা আর একটা বিয়ে করেন। মায়ের সৎ মা ছিলেন গতানুগতিক সৎ মাদের মতই। তিনি মাকে আর মামাকে তেমন আদর করতেন না। তাই মা আর মামা তাঁদের মা মারা যাওয়ার পর থেকেই বেশিরভাগ সময় তাঁদের মামা বাড়িতে থাকতেন। মায়ের সৎ মায়ের এক ছেলে হওয়ার পরে আমার নানা মারা গেলেন।
আমার মা আর মামার এবাড়ি ওবাড়ি করতে করতে আর স্কুলে ভর্তি হওয়া হলো না।
আমার আব্বা একদিন তাঁর শশুরালয়ে গেছেন, তাঁর বয়স তখন নয় বা দশ বছর হবে। নানার ঘরের পিছনে রাস্তার পাশে ঘন জঙ্গল। আব্বা রাস্তা দিয়ে আসতে আসতে উপর দিকে তাকিয়ে দেখেন আম গাছের উঁচু ডালে বসে তাঁর বালিকা বধূ আম পাড়ছে। আব্বাকে দেখে বালিকা পালিয়ে গেলো লজ্জায়। (এই অংশটুকু আব্বার মুখ থেকে শোনা, তিনি একদিন তাঁর নাতি নাতনীদেরকে এই গল্প বলছিলেন। আমিও ওদের সাথে বসেছিলাম।)
নানা মারা যাওয়ার পরে আমার দাদা-দাদি ভাবলেন তাদের বাড়ির বউ এবাড়ি ওবাড়ি ঘুরে বেড়াবে কেন বউয়ের নিজের বাড়ি থাকতে! তাই তারা সিদ্ধান্ত নিলেন মাকে আমাদের বাড়িতে এনে রাখবেন। মা নয়/দশ বছর বয়স থেকে শ্বশুর বাড়িতে থাকা শুরু করলেন। মামুও তাঁর মামা বাড়ি আর আমদের বাড়ি মিলিয়ে থাকতে শুরু করলেন।

লেখক পরিচিতি :

জেসমিন আরা বেগম, 
কেমিকৌশলী, ১৩ তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য এবং বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। 
প্রাক্তন উপ-পরিচালক,  বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, (বিপিএটিসি)।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল