মাহবুবুল হক খান, দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুরে পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে উল্টো অপহরণ মামলার আসামী হলেন জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার নান্দেড়াই গ্রামের মোঃ মোজাফফর হোসেনের ছেলে আল জেহাদুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টায় দিনাজপুর প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল জেহাদুল ইসলাম বলেন, আমি নিজ গ্রামে বাড়ীর পাশে রাস্তায় একটি মুদিখানা দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করছিলাম। আমার এক সময়ের ঘনিষ্ট বন্ধু চিরিরবন্দর উপজেলার পশ্চিম হোসেনপুর গ্রামের মোঃ আবেদ আলীর ছেলে মোঃ আরিফুল ইসলাম (২৭) আমাকে জানায়, দিনাজপুর শহরে অবস্থিত মেরিনোভা ক্লিনিকের ব্যবস্থানা পরিচালক মোঃ আব্দুল হাকিমের আমার সু-সম্পর্ক আছে। তার সাথে সরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের জানাশুনা ও যোগাযোগ আছে। কিছু টাকা খরচ করলে তোমার একটা ভাল চাকরীর ব্যবস্থা করে দিতে পারবো। এইর প্রেক্ষিতে গত ২৫-০১-২০১৩ তারিখ আরিফুল ইসলাম, তার ৩ সহযোগি পার্বতীপুরের হোসেনপুর গ্রামের মৃত ছপির উদ্দিনের ছেলে মোঃ আবেদ আলী (৪৮), চিরিরবন্দরের গোবিন্দপুর সরকার পাড়া গ্রামের মৃত সেকেন্দার আলী ছেলে মোঃ আনোয়ার হোসেন (৬০) ও দিনাজপুর শহরের মেরিনোভা ক্লিনিকের ব্যবস্থানা পরিচালক মোঃ আব্দুল হাকিম (৪৭) আমার মুদিখানা দোকানে আসেন। তাদের সাথে আলোচনার পর ৩,০০,০০০/=(তিন লক্ষ) টাকা দিলেই আমাকে যে কোন একটা সরকারী চাকুরীর ব্যবস্থা করে দিবে মর্মে ঠিক হয় এবং আমি ও আমার পিতা তাদের কথায় উক্ত টাকা দিতে রাজি হই। কিন্তু তাৎক্ষনিক এত নগদ টাকা নেই বলে জানালে তারা বলে এখন তোমার কাছে যা আছে তাই দাও, পরে বাকি টাকা দিলেই হবে জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে আল জেহাদুল ইসলাম বলেন, আরিফুলের কথা মত আমার মুদিখানায় থাকা ব্যবসার নগদ ১,৮০,০০০/= (এক লক্ষ আশি হাজার) টাকা স্বাক্ষিগণের উপস্থিতিতে তার হাতে দেই। এ সময় আব্দুল হাকিমকে গ্রহিতা ও আমাকে দাতা দেখিয়ে একশত টাকা মূল্যের তিনটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে “ধারের টাকার চুক্তিপত্র” নামে একটি চুক্তিপত্র লিখে আব্দুল হাকিম নিজে স্বাক্ষর দিয়ে আমাকে দেন। এতে “চাকুরী দিতে না পারলে পরবর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে আমার নিকট
থেকে গ্রহণকৃত উক্ত পরিমাণ টাকা আমাকে ফেরত দিবে মর্মে অঙ্গিকার করা হয়।” পরবর্তীতে চাকুরী দেওয়ার নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আমাকে চাকুরী দিতে না পারায় আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করি। এ সময় তারা বিভিন্ন টালবাহানায় করে। এতে প্রায় ৮ বছর অতিবাহিত হয়ে যায়।
এদিকে আমি আর্থিক সংকটে পড়ায় চলতি বছরের ১০-০৮-২০২১ তারিখ দুুপুরে আমার মুদিখানার সামনে আরিফুলকে দেখতে পেয়ে তাকে চাকুরীর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করি এবং চাকুরী দিতে না পারলে আমার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে আরিফুল আগামী ৭ দিনের মধ্যে আমাকে একটা চাকুরীর ব্যবস্থা করবে বলে জানায়। অন্যাথায় আমার টাকা ফেরত দিবে। তার দেওয়া সেই ৭দিন সময় অতিবাহিত হলেও আমাকে চাকুরী দিতে ব্যর্থ হয়। পরে আমি আরিফুলের
নিকট টাকা ফেরত চাইলে আবারো টালবাহানায় সময় ক্ষেপন করে।
সর্বশেষ গত ২৩-০৮-২০২১ তারিখ দুুপুর আনুমানিক ১২টায় আমার মুদিখানার সামনে আরিফুলকে দেখতে পেয়ে আমি টাকা ফেরত চাইলে আরিফুল মোবাইলে মোঃ আবেদ আলী ও আনোয়ার হোসেনকে আমার দোকানের সামনে ডেকে নিয়ে আসেন। এ সময় আমি তাদের নিকট আমার পাওনা এক লক্ষ আশি হাজার টাকা চাইলে তারা উক্ত টাকা দিতে অস্বীকার করে এবং বলে যে, যদি তাদের নিকট আবারো টাকা চাই তাহলে তারা আমার জানমালের ক্ষতিসহ মামলা করবে। এই কথা বলে তারা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। এখান থেকে গিয়ে আমাকে ভিকটিম দেখিয়ে ২৩-০৮-২০২১ তারিখে তাদের কাছে মুক্তিপন দাবী করেছি মর্মে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে স্থানীয় পার্বতীপুর থানায় একটি মামলা করে। মামলা নং-৩৪, জি আর নং-৩০১/২০২১ (পার্বতীপুর), আর, তারিখ-২৫-০৮-২০২১ইং। এবং বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রট’র সামনে আমাকেসহ ৩/৪নং স্বাক্ষী মোঃ আমিনুল ইসলাম ও হারুন সরকারকে জড়িয়ে ১৬৪ ধারার একটি মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি তৈরী করেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে পার্বতীপুর থানা পুলিশ আমিনুল ইসলামকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করে। বর্তমানে আমিনুল ইসলাম জেলহাজতে রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আল জেহাদুল ইসলাম বলেন, পরবর্তীতে আমি গত ১৯-০৯-২১ ইং তারিখ দঃ বিঃ এর ৪২০/৪০৬/৩৪ ধারায় ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ধারায় জেলা দিনাজপুরের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-৪ চিরিরবন্দরে একটি মামলা দায়ের করি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি দ্রুত তার পাওনা টাকা ফেরতসহ উল্লেখিত প্রতারকদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন শৃঙ্খলাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তার পরিবারের সদস্য মোঃ আশরাফ আলী শাহ, মোঃ আলতাফ হোসেন, আব্দুল মোতালেব, মামনুল ইসলাম, আবু তাহের শাহ ও জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
সময় জার্নাল/এমআই