বুধবার, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
এহসান রানা, ফরিদপুর: ফরিদপুরে এবার আমন ধানের আবাদ বেড়েছে। চলতি মৌসুমে সরকারি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ হয়েছে ৬ হাজার হেক্টর বেশি। কিন্তু হঠাৎ করে খুচরা বাজারে ইউরিয়া সারের দাম বেড়ে গেছে। ফলে কাঙ্খিত উৎপাদন নিয়ে শঙ্কিত জেলার চাষীরা।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, ফরিদপুর জেলা সদরসহ নয়টি উপজেলায় মাসিক ইউরিয়া সারের চাহিদা তুলনায় এমনিতেই সরবরাহ হয়েছে অর্ধেক। অনেকেই আবার চড়া দামে সার পাবেন কি না তা নিয়েও সংকিত। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমের কারণে খুচরা বাজারের এর প্রভাব পড়েছে বলে ব্যবসায়ীদের ভাষ্য।
এদিকে, কৃষক বলছেন সারের দাম বেড়েছে, ডিলার বলছেন বড়েনি। ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দি গ্রামের কৃষক মোঃ নাসিম মোল্লা প্রতি বস্তা সার কিনেছেন ৯০০ টাকা দরে। তিনি জানান, গত কয়েকদিন আগে তিনি ইউনিয়নের উচা বাজার থেকে ওই সার কেনেন। ১৬ টাকার জায়গায় প্রতি কেজির দাম বাড়িয়ে নিয়েছেন ১৮ টাকা।
নগরকান্দা উপজেলার ফুলসূতী ইউনিয়নের বাউতিপাড়া গ্রামের কৃষক নাসির হোসেন জানান, প্রতি বস্তা সার ৯২৫ থেকে ৯৫০ টাকায় কিনতে হয়েছে।
সালথা উপজেলার আমনচাষী টুলু মিয়া জানান, হঠাৎ করে সারের চাহিদার পাশাপাশি দামও বেড়ে গেছে। তাই চাহিদা মতো সার কিনতে পারি নাই। দেখি সামনে দাম কমলে তারপর সার কিনে জমিতে ছিটাবো। আর তা না হলে জমির চাহিদার থেকে কম পরিমাণ সার দিতে হবে। আর এ কারণে ফলন কমার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে বলে অনেকেই শঙ্কিত।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের ডোমরাকান্দি এলাকার চাষী নিজাম খলিফা জানান, বাজারে সারের ঘারতি রয়েছে যে কারেন দর কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি। যে কারণে সার কনেছি কম।
অনুসন্ধানে আরো জানাগেছে, জেলায় সারের ডিলার আছেন ৯৬ জন। খুচরা সার বিক্রেতা আছেন ৭২৯ জন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ফরিদপুরে বছরে ইউরিয়ার চাহিদা ৭৭ হাজার মেট্রিক টন। বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৩৯ হাজার মেট্রিক টন।
ফরিদপুরের টেপাখোলা মহল্লার খুচরা সার বিক্রেতা মেসার্স মৃধা ট্রেডার্সের মো. লিটন মৃধা বলেন, হয়তো ডিলারদের কারসাজিতে সারের দাম বাড়ছে। উপায় না পেয়ে কৃষকেরা বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের ফরিদপুর শাখার সভাপতি আব্দুস সালাম বাবু বলেন, ডিলার পর্যায়ে সারের দর কম-বেশি হয়নি, তবে খুচরা বাজারে কিছুটা দর বেড়েছে।
তিনি বলেন, আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের জেলার ইউরিয়ার চাহিদা যা ছিলো সেতুলনায় সরবরাহ কম হয়েছে ৪ হাজার মেট্রিকটন। এই কারণে হয়তো দামের কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। তবে ডিলার পর্যায়ে নয়, খুচরা বাজারে।
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. হযরত আলী জানান, এ জেলায় সারের সংকট হওয়ার কথা নয়। চলতি আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর। কিন্তু সেখানে আবাদ হয়েছে ৭০ হাজার ২৯৪ হেক্টর।
তিনি আরও বলেন, চারা রোপনের সময় সার কিটনাশকের দাম স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু কয়েক দিন হলো হঠাৎ করেই খুচরা বাজারে ইউরিয়ার সারের দর কিছু বেড়েছে। তবে এই দর বেশি দিন থাকবে না বলে জানান এই কর্মকর্তা। আমন মৌসুমে আগষ্ট মাসের ইউরিয়া সারের চাহিদা ছিল ৫ হাজার ২০০ মেট্রিক টন এবং সেপ্টেম্বর মাসের চাহিদা ৪ হাজার ৫০২ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ৫ হাজার ৭০২ মেট্রিকটন।
সময় জার্নাল/এমআই