বুধবার, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
মোঃ আশ্রাফুল আলম ভূঁইয়া :
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে প্রতিবছর দেশে তো নানাভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়। বহুদিন পর তিনি দেশের বাইরে গিয়ে বিদেশের মাটিতেও অর্থাৎ জাতিসংঘ ভবনের সামনে বৃক্ষ রোপণ করেছেন। এটি অনেক চমৎকার একটা কাজ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বৃক্ষপ্রেমী, তিনি সবুজায়নকে ভালোবাসেন এটি খুব সহজেই অনুমেয়। তিনি চট্টলাবাসীর আকুতি বুঝবেন।
দুঃখজনক হলেও সত্যি দীর্ঘ আড়াই বছর যাবৎ করোনায় জনগণের জীবনযাত্রার নাভিশ্বাস তার উপর এখনো বাড়তি দুশ্চিন্তায় চট্টগ্রামের সচেতন নাগরিক সমাজের মানুষগুলো। নগরীর ফুসফুসখ্যাত চট্টগ্রামের সিআরবি রক্ষা আন্দোলনের এখনো কোন সুরাহা হয়নি। যার ফলে আন্দোলনকারীরা নিশ্চিন্তে ঘরে ফিরতে পারছে না।
আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একচিলতে সবুজাভ জায়গাটাও যদি বেনিয়াদের দখলে যায় তার জন্য উৎকন্ঠিত আবালবৃদ্ধবনিতা। চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় পিপিপি উদ্যোগের মাধ্যমে একটি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ এবং নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপন এর সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বস্তরের জনগণের একটি আন্দোলন সম্প্রতি দানা বেঁধে উঠছে।
চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্নস্থানের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও চট্টগ্রামের পরিবেশপ্রেমী পেশাজীবীরা বিভিন্ন সংহতি সমাবেশ ও মানববন্ধন করে যাচ্ছে সিআরবি রক্ষায়। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হবে এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অসুবিধা হবে এই হচ্ছে আন্দোলনকারী জনতার দাবি।
তাঁরা চান প্রয়োজনীয় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হোক তবে অন্যত্র স্থানান্তর করে। বিকল্প কয়েকটি স্থানের উল্লেখও তাঁরা করেছেন। দল মত নির্বিশেষে সিআরবি রক্ষায় চট্টগ্রামবাসী একই প্লাটফর্মে অবস্থান করছে এখন, যদিও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে এই ইস্যুতে কিছুটা বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে।
তবে, এই সিআরবিতে ছিল তৎকালীন আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের হেড অফিস। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় হেডকোয়ার্টার। এটি শহরের কেন্দ্রস্থলে অতি মনোরম পরিবেশে অবস্থিত, পাহাড় জঙ্গল পরিবেষ্টিত। এলাকাটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গেও সম্পর্কিত। মুক্তিযুদ্ধের প্রায় ১০ জন শহীদের সমাধিস্থল এখানে অবস্থিত বলে লোকমুখে শোনা যায়। চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের কথা আসলে সীবিচ, সিআরবি, ডিসি হিল এসব জায়গার কথা আসে। ইতিমধ্যে সীবিচের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে আধুনিকায়ন করা হলেও সেখানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আগের চেয়েও অনেক কমেছে গাছপালা না থাকায়। তাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে সিআরবি স্বয়ংসম্পুর্ণ।
পরিবেশ-প্রকৃতি ধ্বংস করে আদৌ কি কখনো সোনারবাংলা গড়া সম্ভব??
পরিবেশ প্রকৃতি বিনাশ সাধনের অভিপ্রায় হলো শিক্ষিত মাথায় মূর্খতার আচরণ ; যেক্ষেত্রে লুকিয়ে রাখা হয় বিশাল অবৈধ স্বার্থের গোপন পাঁয়তারা, তাইতো বলা যায়, প্রকৃত শিক্ষার বড্ড অভাব হলে কতিপয় ক্ষেত্রে এরকম পরিবেশ বিরোধী, দেশের স্বার্থ বিরোধী মানসিকতা তৈরী হতে পারে।
সিআরবির মতো এতো বিশাল সবুজ বলয় ধ্বংস করে কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার এত খায়েশ - তা যে কোন দেশের সাধারণ জনগণও অনায়াসে বুঝার ক্ষমতা রাখে।
আবহাওয়াবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, সবুজ বৃক্ষরাজী ও পাহাড়গুলো যদি দেশে ধ্বংস হয়ে পড়ে, তখন দেশে বহুবিধ বিপর্যয়ের আঘাত অনিবার্য হয়ে পড়ার আশংকা থাকে। আমরা সাহসী জাতি, তাই বলে কি সবুজের প্রাণ হরণ করা কি শোভা পায়! বড় অমানবিক বিষয় এটি, তাহলে সৃষ্টির সেরা জীবের আর কি পরিচয় রইলো! বনভূমি উজার, পাহাড় কাটা আর সবুজ বৃক্ষের বিনাশ সাধন দেশের সার্বিক উন্নয়ন টেকসই করার ক্ষেত্রে একসময় বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।।
তাই চট্টগ্রাম বাসীর প্রাণের দাবি সি আর বির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষায় সরকার সচেষ্ট হবেন। সরকার জনস্বার্থে সঠিক সিদ্ধান্তটি নিবেন। প্রকৃতির মাঝে বেড়ে উঠুক আমাদের সুস্থ প্রজন্ম।
লেখকঃ মোঃ আশ্রাফুল আলম ভূঁইয়া
উপদেষ্টাঃ 'বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম'
(বৃহত্তর চট্টগ্রাম শাখা)