বুধবার, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
এম.পলাশ শরীফ, বাগেরহাট :
সদ্য সংগঠিত ইউপি নির্বাচনে বাগেরহাটের শরণখোলায় নির্বাচিত সদস্যরা তাদের শক্তির মহড়া দেখাতে শুরু করেছেন। গত ৩ দিনের ব্যবধানে উপজেলা চারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে ১০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী সহ প্রায় অর্ধশত নেতা কর্মী নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়ে শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ খুমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
আহতদের পরিবার সূত্র জানায়, ২০ সেপ্টেম্বর উপজেলা ধানসাগর ইউনিয়ন সহ ৩৬টি ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত নারী আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৫৮জন নারী ও ১৫১ জন পুরুষ প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন কিন্তু বেসরকারী ফলাফলে নির্বাচিত হয়ে অধিকাংশ ইউপি সদস্যরা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তাদের শক্তির মহড়া জানান দিতে শুরু করেন। এতে গত ০৩ দিনে উপজেলার ঝিলবুনিয়া, চালিতাবুনিয়া, উত্তর সাউথখালী, তাফালবাড়ী বাজার, বকুলতলা, দক্ষিণ রাজাপুর ও বগি এলাকায় ১০টি হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
সর্বশেষ গত ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে উপজেলার ছোট নলবুনিয়া এলাকার ছুটুখার বাজারে পরাজিত প্রার্থী ও ওই ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ জাকির হোসেন মুন্সী (৪৮) কে দেখে বিজয়ী ইউপি সদস্য হাইব্রীড আওয়ামীলীগ নেতা ও একই এলাকার বাসিন্দা মোঃ হেমায়েত হাওলাদারের ছেলে এবং শরণখোলা-মোড়লগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ হারুনুর রশিদ হাওলাদার (৪৫) ও আমতলী কামিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী মোঃ হাবিবুর রহমান তালুকদারের ছেলে মোঃ ফারুক হোসেন তালুকদারের নেতৃত্বে জাকির মুন্সীর উপর অতর্কিত হামলা শুরু করেন। এসময় হামলাকারীরা লোহার রড, হাতুড়ি ও দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি আঘাত জাকির সহ তিনজনকে অচেতন অবস্থায় রাস্তায় ফেলে রাখেন। পরে তার পরিবারের সদস্যরা জাকিরকে উদ্ধার করে প্রথমে শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে তাদের অবস্থার অবনতি ঘটে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদেরকে খুমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
জাকিরের ছোট ভাই মাসুদ হোসেন মুন্সী বলেন, আমার ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে সাবেক জামাত শিবিরের কর্মী মোঃ হারুন বর্তমানে হাইব্রীড আওয়ামীলীগের নেতা সেজে তার দলবল নিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শরণখোলা থানা পুলিশের এজাহার দাখিল করলেও রহস্যজনক কারণে মামলা নেয়নি পুলিশ। পরিচয় গোপন রাখা শর্তে স্থানীয় এক সমাজ সেবক বলেন, যারা এই ইউপি ভোট যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তারা সকলেই আওয়ামীলীগের লোক। ক্ষমতা পাওয়ার জন্য নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ বাড়ালে এক সময় গণতন্ত্র হুমকীর মুখে পড়বে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রাহুল রায় বলেন, নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে মাইকিং করা হয়েছে। এতে প্রতিহিংসায় না জড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে যারা বেশী বেপোয়ারা হয়ে উঠবে তাদের ফলাফল স্থগিত করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশন এর আছে। অতএব সাবধান হওয়া সকলের জন্য মঙ্গলজনক।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদন মোঃ গোলাম মোস্তফা মধু বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কোন কমিটি নাই। অতএব এই সহিংসতার বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নাই। তবে, অভিযুক্ত ইউপি সদস্য হারুন অর রশিদ বলেন, জাকির মুন্সীর উপর আমি ও আমার দলবল কোন হামলা করে নাই। উল্টো সে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেছেন। আমার নামে কেউ অভিযোগ করে থাকলে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
অন্যদিকে, শরণখোলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সাইদুর রহমান জানান, দু/চারটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছে। এছাড়া অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে কেই এজাহার দিলেই ঢালাও ভাবে মামলা নেয়া হয় না সকল মামলা তদন্ত সাপেক্ষে রেকর্ড করা হয়।
সময় জার্নাল/ইএইচ