সর্বশেষ সংবাদ
শাহীন চৌধুরী ডলি *
২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত দেশে ' মুজিব বর্ষ ' পালিত হচ্ছে। মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে গতবছরের ১৭ মার্চ থেকে। ২০২১ সালে মুজিব বর্ষের সঙ্গে সমান্তরালে পালিত হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী।দুটি সালই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ ঐতিহাসিকের শতবর্ষ ও মানচিত্রের পঞ্চাশ।যদিও মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে প্রায় সকল আয়োজনই সীমিত।
১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনটিকে জাতীয়ভাবে ' জাতীয় শিশু দিবস ' হিসেবে পালন করা হয়। ১৭ মার্চকে জাতীয় শিশুদিবস ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা। ১৯৯৭ সাল থেকে দিবসটি পালন পালন শুরু হয় এবং এই দিনটিকে বাংলাদেশে সাধারণ ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের গুরুত্বপূর্ণ কোন দিনকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। বিশ্বের সব দেশে শিশু দিবস পালনের উদ্দেশ্য একটাই, দেশের শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দেয়া। বাংলাদেশে ' আন্তর্জাতিক শিশু দিবস ' পালিত হলেও জাতীয় শিশু দিবস ছিল না। ১৭ মার্চকে বাংলাদেশের জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণার কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, "জাতির পিতা জন্মদিন পালন করতেন না। তিনি শিশুদের খুবই ভালোবাসতেন। তাঁর জন্মদিনটাতে তিনি শিশুদের সাথে কাটাতে পছন্দ করতেন। ওইদিন শিশুরা দলবেঁধে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে যেত।এসব সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে তাঁর জন্মদিনটিতে জাতীয় শিশু দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।"
১৯৭১ সালে এক নদী রক্ত পেরিয়ে এবং লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, বহু নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পেয়েছি। ১৯৫২ সালে ভাষার জন্য আমরা যুদ্ধ করে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছি । আমাদের বাংলা ভাষা পৃথিবীর দেশে দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা রূপে আদায় করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাবাস করেছেন। বাংলা ভাষা আদায়ে আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রগামী থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই প্রথম বাঙালি একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়। প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠীর মুক্তির পেছনে কোন না কোন বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ভূমিকা থাকে তেমনি বাঙালি জাতির মুক্তির পেছনে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি একজন অবিসংবাদিত নেতা। তাঁর স্মরণীয় ভূমিকার কথা কখনো ভুলবার নয়। বাঙালি জাতির নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু কখনো দ্বিধান্বিত ছিলেন না। পাকিস্তানি জান্তাদের কাছে মৃত্যুর মুখেও বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপসহীন।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল 'লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান' স্লোগান দিয়ে। তাঁর ভুল ভাঙতে সময় লাগেনি। উপমহাদেশের রাজনৈতিক হাওয়া বদল ছাত্রনেতা শেখ মুজিব সহজেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। ন্যায় ও সুশাসন থেকে বিচ্যুত হয়ে শোষকের সংহারক মূর্তিরূপে আবির্ভূত হয় পাকিস্তানের স্বৈরাচার শাসকগোষ্ঠী। তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান আন্দোলনে যোগ দিলেও তিনি কখনো সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন ছিলেন না। ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ সমান মর্যাদার অধিকারী - মানবতার এ মহান মন্ত্র জীবনের প্রারম্ভেই তিনি আয়ত্ব করেছিলেন। বাঙালি জাতির এ আবহমান মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গীর পূর্ণ অধিকারী ছিলেন বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধুর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল বাঙালি জাতির সার্বিক মুক্তি হাসিল করা।অত্যন্ত স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির মুক্তির হাল ধরেন শক্ত নাবিকের মতন। তৎকালীন বৈশ্বিক টালমাটাল প্রেক্ষাপটে বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে বঙ্গবন্ধুর মতন একজন নেতার প্রয়োজন ও ভূমিকা ছিল অপরিহার্য। তিনি একই সঙ্গে ছিলেন মানবিক ও আপোষহীন। তাঁর সময়ের অনেক বাঘা বাঘা নেতৃত্বকে পেছনে ফেলে শেখ মুজিব সবার উর্ধ্বে উঠতে পেরেছেন ব্যক্তিক্রমী সাহস ও নিজস্ব স্বকীয়তায়। তাঁর সামগ্রিক ত্যাগ ও সাহসী নেতৃত্বের ফলেই আমরা পেয়েছি আকাঙ্খিত স্বাধীন ও সার্বভৌম লাল - সবুজের বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি।যখন দেশ স্বাধীন হয় তখনও তিনি পাকিস্তানের মাটিতে কারাবন্দি ছিলেন। তিনি দেশের স্বাধীনতার জন্য বহু জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছেন। বঙ্গবন্ধুর মত ত্যাগী নেতা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে মাতৃভূমির প্রতি আমাদের প্রতিটি নাগরিকের দায় রয়েছে। দায়িত্ব এবং কর্তব্য রয়েছে। জাতির পিতা একজন ক্ষণজন্মা বিশাল মাপের নেতা। বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সবচেয়ে বড় উপায় হল দেশপ্রেম। যার যার অবস্থান থেকে দেশের উন্নয়নে আমাদের নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে। জাতির জনকের স্বপ্নপূরণে ব্রতী হতে হবে। তবেই আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদিত হবে। বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনের বীরত্বগাঁথা, শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর সংগ্রামী মানসিকতা, বাংলাদেশের মানুষের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা, জীবনের সবক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর আপোষহীন মনোভাব - এই সকল গুণগুলো আজকে তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার দায়িত্ব আমাদের। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাওয়া স্বাধীনতাকে সবদিক থেকে অর্থবহ করে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে। দেশ গঠনে এবং দেশের স্বাধীনতা ধরে রাখতে সব প্রতিকূলতা পাশ কাটিয়ে বীরদর্পে এগিয়ে যেতে হবে।
বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি নিয়ে দেশের উন্নতির পথে কাজ চলছে। উন্নয়নের মহাসড়কে ডিজিটাল দেশের কাতারে চলমান দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। দল, মত, ধর্মীয় পরিচয় নির্বিশেষে মানুষের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত থাকলে আমরা পিছিয়ে পড়বো না। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদে দেশের অগ্রযাত্রা যেন রহিত না হয়, দেশের উন্নয়ন যেন স্থবির হয়ে না পড়ে সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। আমাদের আছে বিশাল যুবশক্তি, তাদের যথার্থভাবে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে। তাদের জন্য কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করে কৃষিতে উৎসাহিত করতে হবে এবং বিক্রয় ও বিপণনে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিদেশে কর্মরত প্রবাসীদের পাঠানো বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশের উন্নতিতে অবদান রাখছে। প্রবাসে এবং দেশে তাদের সুযোগ সুবিধার দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস দূর করতে হবে। নিজের সম্পদ ব্যবহার করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। ঘরে-বাইরে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশকে মাদকমুক্ত রাখতে প্রশাসনকে তৎপর থাকতে হবে। সংবাদপত্র এবং মিডিয়ার স্বাধীনতা থাকতে হবে।
বঙ্গবন্ধু নির্লোভ নিরহংকার পরোপকারী ছিলেন। তাঁর গুণগুলো করায়ত্ব করতে পারলে ভালো মানুষ হয়ে সমাজে অবদান রাখা সম্ভব। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সাড়ে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধির বাংলাদেশ ডাবল ডিজিট গ্রোথের দিকে এগিয়ে চলছে। দারিদ্র্যতা ১৮% এ নেমে এসেছে, মাথাপিছু আয় বাড়ছে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণে সব ধরনের সূচকের অগ্রগতি হয়েছে। দেশের মাথাপিছু আয় এখন ১ হাজার ৮২৭ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ এমন একটি সময়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সুপারিশ পেতে চলেছে, যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে জাতি।
বঙ্গবন্ধুর দেখা সোনার বাংলা দৃশ্যমান হওয়ার পথে। মুজিব বর্ষ পালনের শেষ লগ্নে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
লেখক : শাহীন চৌধুরী ডলি
সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক
ইমেইল, shaheen.babu1971@gmail.com
সময় জার্নাল/ইম
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল