শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

মুদি দোকানি থেকে মানবপাচারকারী

বুধবার, অক্টোবর ১৩, ২০২১
মুদি দোকানি থেকে মানবপাচারকারী

নিজস্ব প্রতিবেদক: মেহেরপুরের গাংনী থানার কামন্দী গ্রামে মুদি দোকানি ছিলেন মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে টুটুল (৩৮)। প্রায়ই ঢাকা আসতেন। কোটিপতি হওয়ার লোভে শুরু করেন মানবপাচার। পরে রাজধানীর বাড্ডায় আলাদা নামে নিজেই তিনটি ওভারসিস এজেন্সি গড়ে তোলেন। এরপর টুটুল দেশের বিভিন্ন এলাকার বেশকিছু বেকার ও শিক্ষিত নারী-পুরুষকে মধ্যপ্রাচ্যে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।

শুধু তাই নয়, প্রতারক টুটুলের অন্যতম সহযোগী তৈয়ব আলী (৪৫) নিজেকে স্বনামধন্য একটি এয়ারলাইন্সের ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দিতেন। সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরির নামেও প্রতারণা করতেন তারা দুইজন।

মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) দিনগত রাত ১২টা থেকে বুধবার (১৩ অক্টোবর) সকাল ৮ টা পর্যন্ত বাড্ডা এলাকার লিংক রোডের টুটুল ওভারসিজ, লিমন ওভারসিজ ও লয়াল ওভারসিজ নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে মূলহোতাসহ মানবপাচারকারী চক্রের মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪।

চক্রের অন্য সদস্যরা হলেন- মেহেরপুর জেলার মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে টুটুল (৩৮), মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩৮), মো. লালটু ইসলাম (২৮), রংপুর জেলার মো. তৈয়ব আলী (৪৫), গোপালগঞ্জ জেলার শাহ্ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন লিমন (৩৮), পটুয়াখালীর মো. মারুফ হাসান (৩৭), শরয়িতপুর মো.  আলামিন হোসাইন (৩০) ও কুষ্টিয়া জেলার মো. আব্দল্লাহ আল মামুন (৫৪)।

অভিযান চালিয়ে ৪ জন ভিকটিম (২ জন পুরুষ এবং ২ জন নারী), ১০ টি পাসপোর্ট, ৭টি ফাইল, ৪টি সিল, ১৭টি মোবাইল, ৫টি রেজিষ্টার, মোবাইল সিম ৩টি, ৪টি ব্যাংকের চেক বই, ২টি কম্পিউটার, ৩টি লিফলেট এবং নগদ ১০ হাজার ৭০ টাকা জব্দ করা হয়।

বুধবার (১৩ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা টুটুল ও তৈয়বের নির্দেশে দেশের বেকার ও অস্বচ্ছল যুবক-যুবতীদের প্রলোভন দেখিয়ে সৌদি আরব, জর্ডান ও লেবাননসহ বিভিন্ন দেশের বাসাবাড়িতে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিত। এ পর্যন্ত চক্রটি অর্ধ শতাধিক মানুষকে অবৈধভাবে বিদেশে পাচার ও বিক্রি করেছে। এছাড়াও শতাধিক মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, টুটল ও তৈয়ব তাদের অফিসে ভুক্তভোগীদের বিদেশে বাসাবাড়িতে কাজের নামে পাঠানোর উদ্দেশ্যে টাকা নেওয়ার মিথ্যা রশিদ দিতেন। তারা প্রতি জনের কাছ থেকে ২-৫ লাখ টাকা করে নিতেন। প্রতারণার উদ্দেশ্যে এই পাচারকারী চক্রের কয়েকজন সদস্য নিজেদেরকে উচ্চশিক্ষিত বলে পরিচয় দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা ভুক্তভোগীদেরকে মধ্যগ্রাচ্যের বিভিন দেশের বাসাবাড়িতে কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে সেখান থেকেও টাকা নিতেন।

বিদেশে পাঠানোর জন্য লোকজনের কাছ থেকে পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্র সংগ্রহ করতেন। এতে করে ভুক্তভোগীদের মনে কোন সন্দেহ থাকত না। এই চক্রের কিছু সদস্য পাসপোর্ট অফিসের দালালদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ভিকটিমদের পাসপোর্ট তৈরি করে দিতেন। এরপর বিদেশে যাওয়ার জন্য লোক দেখানো মেডিক্যাল করা  হতো।

চক্রটি বিক্রির উদ্দেশ্যেও লোকজনকে বিদেশে পাঠাতো উল্লেখ করে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নারীদের বিদেশে বাসাবাড়িতে কাজের কথা বলে বিক্রি এবং পুরুষদের অমানবিক কাজে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের জেদ্দা ও রিয়াদ, জর্ডান ও লেবাননে বিক্রি করা হতো।

এতে অনেকেই বিদেশ যাওয়ার পর আর দেশে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন না। যাদেরকে বিদেশে পাঠাতে পারত না তারা টাকা ফেরতের আশায় অফিসে যোগাযোগ করলে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা না দিয়ে আত্মসাৎ করতেন চক্রের মূলহোতা টুটুল ও তৈয়ব।

প্রতারক টুটুল ও তৈয়বের উত্থান: র‌্যাব জানায়, এইচএসসি পাস টুটুল মেহেরপুরের গাংনী থানার কামন্দী গ্রামে মুদি দোকানি ছিলেন। মাঝে মাঝে ঢাকায় আসতেন। অল্পসময়ে প্রচুর টাকার মালিক হওয়ার লোভে ধীরে ধীরে মানবপাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে এবং দালাল হিসেবে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে লোক পাঠানোর কাজ করতে থাকে। পরবর্তীতে নিজেই রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় প্রতারণামূলকভাবে ‘টুটুল ওভারসিজ, লিমন ওভারসিজ ও লয়াল ওভারসিজ’ নামে ৩টি এজেন্সির অফিস খুলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বেকার ও শিক্ষিত বহু নারী ও পুরুষকে বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণা শুরু করে। তার এই অপকর্মে অন্যতম দালাল বা সহযোগী ছিলেন আবু তৈয়ব। তিনি কোন লেখাপড়া জানেন না। চায়ের দোকানি ছিলেন। টুটুলের প্ররোচনায় মানব পাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন এবং বহু লোককে প্রতারণামূলক ভাবে বিদেশে পাঠানো এবং দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিত।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল