ঢাবি প্রতিনিধি: করোনা সংক্রমণের কারণে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সরাসরি একাডেমিক কার্যক্রম। সরকারি নির্দেশনায় ২০২০ সালের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলে পরবর্তীতে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাবি একাডেমিক কাউন্সিল।
কিন্তু বিপত্তি ঘটে পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে। করোনার শনাক্ত বেড়ে যাওয়ায় বেশ কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয় খোলার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটি সফল হয়নি। সর্বশেষ টিকা নেওয়ার সনদ দেখানো সাপেক্ষে গত ৫ অক্টোবর থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল খুলে দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার (১৭ অক্টোবর) শুরু হয়েছে সরাসরি ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম।
এদিন সকাল ৮টা থেকে ঢাবির বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষার্থীরা সশরীরে ক্লাস করতে ক্যাম্পাসে আসছেন। এদিকে দীর্ঘদিন পর সরাসরি ক্লাসে অংশ নিতে পেরে তারা খুবই উচ্ছ্বসিত। কলা অনুষদের সামনে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বাড়াতে নির্দেশিকা সম্বলিত ফেস্টুন বসানো হয়েছে। মাস্ক পরে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করছেন। রাখা হয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। লাইব্রেরি, ক্যান্টিন ও ক্যাফেটেরিয়ায় শিক্ষার্থীদের পদচারণা বেড়েছে।
অপরদিকে এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটসহ বেশ কয়েকটি বিভাগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরাসরি পরীক্ষা দিতে পেরে শিক্ষার্থীরা যেমন খুশি, তেমনি পরীক্ষা নিতে পেরে শিক্ষকরাও উৎফুল্ল।
ইনিস্টিটিউটের প্রভাষক রেজাউল আজিম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব বর্ষে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর প্রথম দিনের প্রথম প্রহরে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট এর সম্মান চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষার স্থিরচিত্র। প্রায় দুই বছর পর প্রিয় শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ক্লাসরুম, পরীক্ষার হল, আর প্রিয় ক্যাম্পাস। এ এক অদ্ভুত ভালোলাগা! স্মৃতি হয়ে থাকুক!’
তবে কিছু বিভাগে পরীক্ষার কার্যক্রম চলমান থাকায় ক্লাস শুরু হয়নি। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভূক্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহা. রুহুল আমীন বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরাসরি ক্লাস নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু আমাদের পরীক্ষার শিডিউল রয়েছে, ক্লাসের সূচি নেই। তবে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনে বিভাগে আসছে। আমাকে ই-মেইল করেছে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সশরীরে ক্লাস শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষ ঘুরে দেখেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য যে নানা ধাপ ও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সশরীরে ক্লাস শুরু হওয়ার মাধ্যমে তা পূর্ণতা পেল।
তিনি বলেন, একটি বিষয় খুবই আশাব্যঞ্জক যেসব শিক্ষার্থী ক্লাসে অংশ নিয়েছে তারা সবাই ভ্যাকসিনেটেড। ছেলে-মেয়েরা ক্লাসে ফিরতে পেরে খুবই উচ্ছ্বসিত। তারা যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসে অংশ নিয়েছে এটা সারা জাতির জন্য অনুকরণীয়। করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে, লস-রিকভারি প্লান অনুসরণ করে সে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া হবে।
হল খোলার ১২ দিনে কোভিড আক্রান্ত নেই: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হল মাস্টার্স ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় গত ৫ অক্টোবর। পরবর্তীতে ১০ অক্টোবর অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীরাও হলে ওঠেন। দুয়েকদিন পরে হল আগের রূপে ফিরে আসে। কর্তৃপক্ষ গণরুম বিলুপ্তের কথা বললেও বাস্তবে তা হয়নি। শিক্ষার্থীরা ঠিকই গণরুমে থাকছেন। পাঠকক্ষ ও ক্যান্টিন সবই সচল হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোন হলে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে কেউ করোনা আক্রান্ত হলে মেডিক্যাল সেন্টারে আইসোলেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এমআই