সময় জার্নাল প্রতিবেদক: বৈজ্ঞানিক অধিবেশন ও এ্যাওয়ার্ড প্রদানসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় গবেষণা দিবস ২০২১ ‘মুজিব বর্ষের আহবান, গবেষণায় উত্তরণ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে উদযাপিত হয়েছে।
বুধবার (২৭ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এই মহতী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি শুভ উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউজিসির মাননীয় চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ, বিএমএর সম্মানিত সভাপতি ডা. মোস্তাফা জালাল মহিউদ্দিন।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সম্মানিত উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ জাহিদ হোসেন। গুরুত্বপূর্ণ এই অনুষ্ঠানে সিন্ডিকেটের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, ডিনবৃন্দ, বিভাগীয় চেয়ারম্যানবৃন্দ, শিক্ষক, চিকিৎসক ও ছাত্রছাত্রী এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অনুষদের ১৫ জন শিক্ষক, চিকিৎসককে গবেষণার জন্য রিসার্চ এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও চারজন শিক্ষক চিকিৎসককে ভাইস-চ্যান্সেলর এ্যাওয়ার্ড ২০২১ প্রদান করা হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রতিনিয়ত নতুন করে শিখতে হয়। ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে আরো বেশি করে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। সকল চিকিৎসককেই গবেষণার চর্চায় মনোযোগী হতে হবে। গবেষণায় দেওয়া অর্থ যাতে ফেরত না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের অর্জিত পুরানো জ্ঞান যাতে হারিয়ে না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি আরো বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যেই স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য করোনা ভাইরাসের টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারমান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা মানুষের জীবনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ায় অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথে এই গবেষণা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। গবেষণা কার্যক্রম আরো তরান্বিত করতে বেসরকারি খাতের এগিয়ে আসা উচিত। তিনি আরো বলেন, শুধু গবেষণার বরাদ্দ গ্রহণ করলেই হবে না, কি কি গবেষণা করা হলো তাও মানুষকে জানাতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন রোগ ও চিকিৎসা বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। গবেষণা করার জন্য ২০২০-২০২১ সালে ৭ শতাধিক শিক্ষক, চিকিৎসক ও ছাত্রছাত্রীদের গবেষণা কর্ম অনুমোদন দেওয়া সহ অনেককে গবেষণা মঞ্জুরী, থিসিস গ্রান্ট প্রদান করা হয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাকর্ম ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আপনার সবাই জানেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে দেশে গবেষণা বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। বর্তমানে আমরা গবেষণায় গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি, যেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় বিশ্বের বুকে রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
ইতিমধ্যে কোভিড-১৯ এর জেনোম সিকোয়েন্সিং গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছি। গবেষণায় দেখা গেছে মোট সংক্রমনের প্রায় ৯৮ শতাংশ হচ্ছে ইন্ডিয়ান বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। কোভিড-১৯ এর টিকা গ্রহীতাদের উপর গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছি। সেখানে দেখা গেছে টিকা গ্রহীতাদের ৯৮ শতাংশের শরীরে এন্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। পরবর্তী সময়ে এবিষয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ভারতের অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকা নিয়েছেন ৬ মাস পরে তাদের শরীরে এন্টিবডি উপস্থিতির হার পূর্বের তুলনায় মাত্র ৫ শতাংশ কমেছে। করোনা ভাইরাসের টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরে বুস্টার ডোজ নিতে হবে কিনা সে বিষয়ে গবেষণা চলছে।
তিনি বলেন, গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করতে আলাদাভাবে রিসার্চ সেন্টারসহ একাডেমিক ভবন গড়ে তোলা হবে। উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান উন্নত চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণায় আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সংযুক্তির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে এই প্রত্যাশা সবার। সবাই মিলে যার যে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সফল হবেই।
উপাচার্য আরো বলেন, সাধারণ রোগীদের দীর্ঘদিনের দাবি হলো জেনারেল ইমারজেন্সি অর্থাৎ সাধারণ জরুরি বিভাগ চালু করা। এবিষয়ে একটি সুখবর দিচ্ছি তা হলো আগামী ১লা নভেম্বর ২০২১ইং তারিখ সোমবার থেকেই সাধারণ জরুরি বিভাগ চালু করা হবে।
এমআই