সর্বশেষ সংবাদ
হাসান হামিদ
মিথ
নিয়ে মার্কিন লেখক জোসেফ জন
ক্যাম্বেল-এর একটি সুন্দর
উক্তি আছে। তিনি
বলেছেন, ‘’Myths are
public dreams, dreams are private myths’’. অর্থাৎ
মিথ হচ্ছে জনগোষ্ঠীর সামষ্টিক
কল্পনা, কল্পনা হচ্ছে ব্যক্তিগত
মিথ। আর
চর্যার কবি সরহপা ধর্মসাধনার
কিছু আনুষ্ঠানিকতার বিষয়ে নানা মিথকে
প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন :
“নগ্ন
থাকলেই যদি মুক্তি পাওয়া
যায়,
তাহলে
শেয়াল কুকুররাই বা তা পাবে
না কেন?
লোম
উৎপাটনেই যদি মোক্ষ হয়,
তাহলে
যুবতীর নগ্ন নিতম্বই বা
বাদ যাবে কেন?”
(অনুবাদ:
অলকা চট্টোপাধ্যায়)
চল্লিশ
বছর বাঘের পেটে থাকা
এবং তারপর এই গ্রহে
নেমে আসা আবু তোয়াব
একজন নগ্ন মানব।
নীলাক্ষি তীরের জনপদে তার
আবির্ভাবের সূত্র ধরে বিধৃত
কাহিনিতে আমরা এমন অনেক
কিছু ‘উজানবাঁশি’ উপন্যাসে পাই; যা আগে
আর দেখা যায়নি কোথাও। স্বকৃত
নোমান বর্তমান সময়ের আলোচিত ঔপন্যাসিক। পাঞ্জেরী
পাবলিকেশন্স থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত
হয়েছে তাঁর লেখা ‘উজানবাঁশি’
উপন্যাস। উপন্যাসটি
সংগ্রহ করে প্রায় দুই
সপ্তাহে পড়ে শেষ করলাম। লেখক
স্বকৃত নোমানের এখন পর্যন্ত প্রকাশিত
উপন্যাসের মধ্যে ‘উজানবাঁশি’ কলেবরে
সর্ববৃহৎ। এখানে
তিনি যে গল্পটি বলেছেন,
সেই গল্পের ভেতরও গল্প
আছে। আর
আমরা সবাই জানি, গল্প
শোনার আগ্রহ মানুষের সুপ্রাচীন;
এবং সেটা স্বভাবগত ভাবেই। প্রাগৈতিহাসিক
কাল থেকে মানুষের এই
আগ্রহের ফলেই বিভিন্ন সময়ে
নানা কাহিনির উদ্ভব হয়েছে।
অদূর
অতীতে স্বকৃত নোমানের দেওয়া
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, লেখা
শুরুর আগে তিনি যখন
বিষয় নির্বাচন করেন, তখন পূর্বে
কেউ লিখেননি বা যা নিয়ে
তেমন পরিপূর্ণ গল্প কেউ পাঠককে
এখনও বলেননি এমন বিষয়ের
ওপর তাঁর নজর থাকে। এর
মানে তিনি পাঠককে সবসময়
একেবারে পুরোপুরি সর্বজনের অজানা গল্প জানাতে
না চাইলেও সেই গল্পটি
বলতে চান যেটি আদতে
লুকানো কোনো গল্প।
আর এখানেই ঔপন্যাসিক হিসেবে
তাঁর সার্থকতা, যা এক বাক্যে
স্বীকার করতে হয়।
তিনি লেখা শুরুর আগে
তথ্য সংগ্রহ করেন।
কয়েক মাস কিংবা বছর
ধরে ভাবেন। লেখাটি
শুরুর আঙ্গিক খোঁজেন।
তারপর মাস কিংবা বছরব্যাপী
লিখেন। এরপর
সেটি পাঠকের কাছে আসে। একজন
সাধারণ পাঠক হিসেবে আমি
তাই নতুন কোনো উপন্যাস
পড়ার ক্ষেত্রে স্বকৃত নোমান আর
কী লুকানো বিষয় মহাকালের
শরীর থেকে টেনে প্রকাশ্যে
এনেছেন তা খোঁজার চেষ্টা
করি। তিনি
গল্প বলেন; তাঁর নিজস্ব
একটি স্টাইল আছে, সেই
স্টাইলে কোনো মুখোশ নেই। তাঁর
বলা গল্প নিয়ন্ত্রণ করে
পাঠকের আবেগ ও মনশ্চেতনা,
নিয়ে যায় উৎসে; এবং
সৃষ্টির একেবারে গহীনে। আমার
আজকের লেখাটি ‘উজানবাঁশি’ নিয়ে।
আমরা যারা উপন্যাস পড়ি তারা মোটামুটি এটা জানি যে, উপন্যাস হলো গদ্যে লেখা দীর্ঘ অবয়বের কথাসাহিত্য। এখানে পরিবেশ, বর্ণনা, রূপরেখা, চরিত্র, সংলাপ ইত্যাদি যখন মানুষের জীবনের কাহিনীকে সুন্দর ও স্বার্থকভাবে ফুটিয়ে তুলে তখন পাঠকের কাছে তা অনেকখানি বাস্তব বলে প্রতীয়মান হয়। ‘উজানবাঁশি’ উপন্যাসের শুরু হয়েছে এভাবে, ‘ধনুকের মতো বাঁক নিয়ে নীলাক্ষি যেখানে উজানগায়ে ঢুকেছে, ঠিক সেখানে, সেই ধনুকের পেটে যুদ্ধের মাঠের মতো বিশাল নয়নচর। যুদ্ধের মাঠই বটে। র্যাডক্লিফ যখন মানচিত্র আঁকেন নীলাক্ষিকে করেছিলেন পাক-ভারতের সীমানা। কিন্তু নদী তো চিরকাল অস্থির। ভাঙে, গড়ে। প্রতিনিয়ত গতিপথ বদলায়। নীলাক্ষিও বদলালো। ধীরে ধীরে সরে আসে পশ্চিমে, আর পুবে জাগিয়ে তোলে দুই শ কুড়ি একরের বিশাল চর। শুরু হয় চরের মালিকানা নিয়ে পাক-ভারত লড়াই। কেউ হারত না, কেউ জিততও না। কয়েক বছর পরই বাঁধত তুমুল যুদ্ধ। সেই কবে পাকিস্তান ভাঙল, বাংলাদেশ স্বাধীন হলো, অথচ এখনো মীমাংসা হলো না চর নিয়ে বাংলা-ভারতের বিবাদ। এখনো যুদ্ধ বাধে চরের মালিকানা নিয়ে। সেই যুদ্ধে গরু মরে, ছাগল মরে, পাখপাখালি মরে, কখনো কখনো মানুষও। তাই এই চরে কারো যাওয়া বারণ। গেলে খুলি উড়ে যাবে, বুক ঝাজরা হয়ে যাবে, ভুড়ি নেমে যাবে। এই পথে যাতায়াত কেবল সন্ন্যাসীদের। গেরুয়া বসন, মাথায় জটা, গলায় জপমালা, এক হাতে ত্রিশূল, অন্য হাতে বদনা। বিএসএফ বাধা দেয় না, বিডিআরও না। আইন তাদের জন্য শিথিল। কিংবা তারা আইনের আওতায় পড়ে না’।
এ
পর্যন্ত পড়েই বলে দেওয়া
যায়, এই উপন্যাসের উপজীব্য
একটি জনপদের মানুষের জীবন
আর এর কাহিনি নিশ্চিতভাবেই
বিশ্লেষণাত্মক, দীর্ঘ ও সমগ্রতাসন্ধানী। শুরুতেই
সার্থক চিত্রায়ণে যথার্থ ভাষা প্রয়োগও
আমরা লক্ষ করি।
পরবর্তীতেও ঘটনার সাথে এর
উপযুক্ত পরিবেশের সুনিপুণ চিত্র ফুটে উঠেছে
প্রত্যেক পরতে। যেমন,
‘ঠিক দুপুরে নেংটা মানুষটিকে
দেখা যায় কাটাখালের চরে। আখখেত
থেকে বেরিয়ে মরা গাঙের কাদাজল
ডিঙিয়ে সে পশ্চিম পাড়ে
ওঠে। হাঁটছিল
ধীরে, মাটির দিকে তাকিয়ে। একটিবার
ডানে-বাঁয়ে তাকাচ্ছিল না। যেন
হারানো জিনিস খুঁজে বেড়াচ্ছিল। শিশ্নটা
মরা টাকির মতো ঝুলছিল’। অর্থাৎ
অবলীলায় লেখক সবকিছু বলে
গেছেন, কোনো আড়ষ্টতা নেই।
‘উজানবাঁশি’
পড়া শেষে বুঝলাম, এর
প্লট বা আখ্যান অত্যন্ত
সুপরিকল্পিত ও সুবিন্যস্ত।
প্লটের মধ্যে ঘটনা ও
চরিত্রের ক্রিয়াকাণ্ডকে এমনভাবে বিন্যস্ত করেছেন লেখক, যা
বাস্তব জীবনকে প্রতিফলিত করে। ঔপন্যাসিক
স্বকৃত নোমান তাঁর জাদুকরি
দক্ষতায় এর কাহিনিকে আকর্ষণীয়,
আনন্দদায়ক ও বাস্তবোচিত করেছেন। সামগ্রিক
জীবনদর্শন, সংঘাত আর মিথের
মিশেল এই উপন্যাসটিকে অনন্য
উচ্চ মাত্রায় নিয়ে গেছে বলা
যায়। বইয়ের
ফ্ল্যাপেই বলা হয়েছে, বিশ
শতকের দ্বিতীয়ার্ধের সমাজ ও রাজনীতি,
রক্ষণশীলতা ও উদারপন্থা, জ্ঞান
ও নির্জ্ঞান এবং বহুমুখী সংস্কৃতির
দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে রচিত এই
উপন্যাস।
ঘটনা
ও চরিত্রের বর্ণনায় ঔপন্যাসিক স্বকৃত নোমান যথেষ্ট
সচেতন। তিনি
অত্যন্ত কৌশলীও। কয়েক
লাইন পড়ি, ‘মুসল্লিদের মতিগতি
দেখে বহু বছর পর
দাদা এবাদত রেজার ডাক
শোনার জন্য বাতাসে কান
পাতেন কায়েদ মাওলানা।
তার আদর্শের সঙ্গে এ এক
আশ্চর্য ফারাক। শরিয়তি
মানুষ হিসেবে তিনি বিশ্বাস
করেন না মৃতরা জীবিতদের
জন্য ভালো-মন্দ কিছু
করতে পারে। তিনি
পির-দরবেশদের অস্বীকার করেন না।
কিন্তু পির-দরবেশদের মৃত্যু
নেই- এ কথা মানতে
নারাজ। প্রত্যেক
মানুষকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে
হবে কেতাবের বাণী। পির-দরবেশরা তো মানুষ।
মাটির তৈরি মানুষ।
তাদের জন্যও মৃত্যু অবধারিত। যত
বড় পিরই হোক, মৃত্যুর
পর মাটিতে মিশে যাবে
তার অজুদ। মৃত্যু
মানেই জীবনের সমাপ্তি।
মৃতরা জীবিতদের জন্য ভালো-মন্দ
কিছু করার ক্ষমতা রাখে
না। অথচ
নিজেই তিনি বহু বছর
আগে মরে ভূত হয়ে
যাওয়া দাদাকে জীবিত ভাবেন। সংকটে
পড়লে তার ডাক শোনার
জন্য বাতাসে কান পাতেন। সত্যি
সত্যি এবাদত রেজা ডাক
দেয়। বলে
দেয় সংকট থেকে মুক্তির
উপায়’।
‘উজানবাঁশি’
উপন্যাসে চিত্রিত জায়গার নামগুলো দারুণ লেগেছে।
নীলাক্ষি তীরের উজানগাঁ, নয়নচর,
বিরলগঞ্জ, মধুগঞ্জ, গগনতলা, বসন্তপুর, কাঠিমারি কিংবা মেলাতলি।
সুন্দর এমন, যেভাবে লেখা
আর যতটা কল্পনা করা
যায়, তাতে মনে হয়
এ জায়গাগুলোতে মানুষের জীবনযাত্রা সতত নিরবতার দিকে
ধাবমান। প্রতিটি
ক্ষেত্রে চরিত্ররা কথা বলেছে, উঠে
এসেছে তাদের দ্বন্দ্বময় জীবন। আমরা
জানি, ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে সম্পর্কের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় সমাজসম্পর্ক। এই
সম্পর্কজাত বাস্তব ঘটনাবলি নিয়েই
‘উজানবাঁশি’র কাহিনি নির্মাণ
করেছেন লেখক। কেউ
কেউ মনে করেন, উপন্যাসে
ঘটনাই মুখ্য, চরিত্র সৃষ্টি
গৌণ। কিন্তু
প্রকৃতপক্ষে, ঘটনা ও চরিত্র
পরস্পর নিরপেক্ষ নয়, একটি অন্যটির
সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। মহৎ
ঔপন্যাসিক এমনভাবে চরিত্র সৃষ্টি করেন
যে, তারা হয়ে ওঠে
পাঠকের চেনা জগতের বাসিন্দা,
যেমনটি হয়েছে ‘উজানবাঁশি’
উপন্যাসে। এ
উপন্যাসের মোহন, কায়েদ মাওলানা,
মোখেরাজ খান, শাফাত, ফজলু,
অনাদি দত্ত, হানু বেপারি,
খাদেম রসুল, কালাগাজি, বাতেন
এরা আমাদের একেবারে চেনা
মানুষ।
‘উজানবাঁশি’
উপন্যাসের ঘটনা প্রাণ পেয়েছে
এই চরিত্রগুলোর পারস্পরিক সংলাপে। ঔপন্যাসিক
সচেষ্ট ছিলেন স্থান-কাল
অনুযায়ী চরিত্রের মুখে ভাষা দিতে। অনেক
সময় চরিত্রগুলোর আলাপের দ্বারা ঘটনাস্রোত
উপস্থাপন করেছেন লেখক।
আর এভাবে সার্থক সংলাপ
চরিত্রগুলোর বৈচিত্র্যময় মনস্তত্ত্বকে প্রকাশ করেছে।
আর ঔপন্যাসিক স্বকৃত নোমান ‘উজানবাঁশি’তে দেশকালগত সত্যকে
পরিস্ফুটিত করার অভিপ্রায়ে পরিবেশকে
নির্মাণ করেছেন। পরিবেশ
বর্ণনার মাধ্যমে চরিত্রের জীবনযাত্রার ছবিও কাহিনিতে ফুটিয়ে
তুলেছেন দারুণভাবে। এই
পরিবেশ মানে কেবল প্রাকৃতিক
দৃশ্য নয়; স্থান কালের
স্বাভাবিকতা, সামাজিকতা, ঔচিত্য ও ব্যক্তি
মানুষের সামগ্রিক জীবনের পরিবেশ।
যেমন, ‘মোহন বড় একটা
ধাক্কা খায়। স্মৃতি-বিস্মৃতির ধাক্কা। বুকটা
হুহু করে ওঠে।
মনে হয় কী যেন
হারিয়ে গেছে তার।
হারানো জিনিসটা খুঁজতে হবে।
আর বসতে ইচ্ছে করে
না তার। বিদায়
নিয়ে সে কাননডাঙা বাজারে
আসে। চা-পরোটা খেতে বসে
এক দোকানে। খেতে
খেতে ভাবে আশু করণীয়
নিয়ে। পরোটা
ভাজতে থাকা যুবক দোকানির
মুখ থেকে চোখ সরছে
না। লোকটা
হয়ত লেখাপড়া জানে না।
পত্রিকা পড়ে না, টিভি
দেখে না, দেশ-দুনিয়ার
কোনো খবরাখবর রাখে না।
তার নামে কোনো মামলা-মোকদ্দমা নেই। তার
আয়-রোজগার আছে, বাড়িঘর
আছে, বিবি-বাচ্চা আছে। সে
কতই না সুখী।
তার সুখ দেখে নিজেকে
বড় অসুখী মনে হচ্ছে। জেগে
ওঠে এক অব্যক্ত হাহাকার’।
লেখক
স্বকৃত নোমান প্রয়োজনীয় সকল
ক্ষেত্রে যথার্থ পরিবেশ রচনা
করেছেন তাঁর সৃজনশক্তির জাদুকরি
প্রয়োগে। যেমন,
‘তেঁতুলগাছটি ছাড়িয়ে আরও ওপরে ওঠে
সূর্য, আরও হালকা হয়
কুয়াশা। বটতলার
দক্ষিণে নীর আগাটায় ঋতুস্রাবের
ন্যাকড়া ধুতে নামে বাবুল
মাঝির অকাল-বিধবা বেটি
কাজলি। মানুষটি
তাকে দেখছে, ন্যাকড়াটিও, কিন্তু
কাজলি তাকে দেখতে পায়নি। দু-হাতে কচলে সে
ন্যাকড়াটি ধোয়। ছোপ
ছোপ রক্ত ভেসে যায়
স্রোতে। ন্যাকড়াটি
তুলে সে দক্ষিণে তাকায়। কেউ
নেই। দু-হাতে ন্যাকড়াটি চিপতে
চিপতে উত্তরে তাকায়।
ওদিকেও কেউ নেই।
এবার সে ওপরে ওঠে। যে
পথে এসেছে সে পথেই
ফিরতে পারত, কী বুঝে
হাঁটা ধরে বটতলার দিকে। আনমনে
গুনগুনিয়ে গায়, ফুল যদি
হইতাম আমি গাছের ডালায়…। বটতলায়
এসে দুই শিকড়ের মাঝখানে
হনুমানের মতো বসে থাকা
নেংটা মানুষটিকে দেখে সে আঁতকে
ওঠে। মা
গো বলে বুকে থুতু
দেয়। মানুষটিকে
ভূত মনে হয় তার। কিন্তু
ধন্দে পড়ে যায় শিশ্নটি
দেখে। ভূতের
তো শিশ্ন থাকার কথা
নয়। থাকে
কি? ভেজা ন্যাকড়াটি বুকে
চেপে ধরে সে মনে
করার চেষ্টা করে।
না, ঠিক মনে পড়ে
না। কী
করে পড়বে, জীবনে তো
কখনো সে ভূত দেখেনি। ভূতের
শিশ্ন থাকে না যোনি
থাকে, সে তো জানে
না। তার
বুকে কাঁপুনি ওঠে। খাড়া
স্তন দুটিতে তুফানলাগা নদীর
মতো ঢেউ ওঠে।
উত্তরে বাতাসে শাড়িটা বুকের
সঙ্গে লেপ্টে যাওয়ায় স্তনবৃন্ত
দুটি কাপড় ফুঁড়ে বেরিয়ে
আসতে চাইছে’। পরিবেশ
বর্ণনায় লেখক এভাবেই শব্দের
প্রয়োজনীয়তা ও উপমা-অলঙ্কারের
পরিমিতিবোধ বিষয়ে সজাগ ছিলেন
একেবারে শুরু থেকে শেষ
অবধি।
‘উজানবাঁশি’
উপন্যাসে লেখক বুঝিয়ে দিয়েছেন
কুসংস্কার, মিথ বা ধর্মীয়
গোড়ামী একটা সমাজকে কতটা
প্রভাবিত করতে পারে।
তিনি এখানে নীলাক্ষি তীরের
মানুষের জীবনধারা, মানসিক আর রাজনৈতিক
ও সামাজিক প্রেক্ষাপট অত্যন্ত সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন।
উপন্যাসের শুরুতে আমরা দেখি,
চল্লিশ বছর বাঘের পেটে
থেকে বেরিয়ে আসে একজন নগ্ন
মানুষ। কিন্তু
আসলেই কি চল্লিশ বছর
বাঘের পেটে থাকতে পারে
কেউ? এটা সম্ভব! ঔপন্যাসিক
বাস্তব আর পরাবাস্তবতার খেলায়
পাঠককে নিয়ে যান ভিন্ন
এক জগতে। কাহিনিতে
দেখি উপন্যাসের নায়ক মোহন তার
মৌলবি পিতার নির্দেশে কলেজে
আসার আগ পর্যন্ত পড়েছে
মাদ্রাসায়। তবে
এমন মাদ্রাসা এই দেশে থাকতে
পারে, তা সে কখনো
ভাবতে পারেনি। উজানগাঁ
মাদ্রাসায় কখনো অ্যাসেম্বলি হতো
না, কখনো জাতীয় সংগীত
গাওয়া হতো না।
কেননা গান-বাজনা ইসলামে
হারাম। তাছাড়া
জাতীয় সংগীত তো হিন্দু
কবির লেখা। হিন্দুর
লেখা গান মাদ্রাসার ছাত্ররা
গাইবে কেন? কাননডাঙা মাদ্রাসায়
তার উল্টো চিত্র।
স্কুল-কলেজের মতো প্রতিদিন
অ্যাসেম্বলি হয়, পতাকার সামনে
দাঁড়িয়ে ছাত্ররা জাতীয় সংগীত গায়। কেউ
গোল জোব্বা আর পাঁচ
তালির টুপি পরে না। ছাত্র-শিক্ষক সবার পোশাক
সাদা প্যান্ট কাটা পাঞ্জাবি।
ঘটনার পরিক্রমায় মোহনকে সবচেয়ে বেশি
তাড়িয়ে নেয় প্রাচীন শিলালিপিতে
খোদিত সংস্কৃত ভাষার একটি শ্লোক।
কেউ
যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন,
‘উজানবাঁশি’ উপন্যাসের কোন দিকটা আমার
সবচেয়ে ভালো লেগেছে? যদিও
আমি একেবারেই অতি সাধারণ একজন
পাঠক। তবে
চোখবুজে বলতে পারি, আমার
ভালো লেগেছে লেখকের গল্প
বলার স্টাইলটা। আর
এই স্টাইল হচ্ছে উপন্যাসের
ভাষাগত অবয়ব সংস্থানের ভিত্তি। লেখকের
জীবনদৃষ্টি ও জীবনসৃষ্টির সঙ্গে
ভাষা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উপজীব্য
বিষয় ও ভাষার সামঞ্জস্য
রক্ষার মাধ্যমেই ‘উজানবাঁশি’ উপন্যাস হয়ে ওঠেছে যথার্থ
ও সার্থক আবেদনবাহী।
তাছাড়া গল্প বলার স্টাইলের
এ ধরন দেখেই আমরা
বুঝতে পারছি, লেখক স্বকৃত
নোমানের গল্প বলার শক্তি,
চিন্তার মননশীলতা, স্বাতন্ত্র্য ও বিশিষ্টতা।
বইমেলায় উজানবাঁশি প্রাপ্তিস্থান : পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি., প্যাভিলিয়ন নং- ৩২
সময় জার্নাল/ইম
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল