রেজাউল করিম রেজা। কুড়িগ্রাম : জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়া ছিটমহল কালীরহাট সংলগ্ন নদীর পাড়ে বাঁশঝাড়ে রাতারাতি রাশেদ খান মেনন মহাবিদ্যালয় নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রমরমা নিয়োগ বাণিজ্য করার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা প্রবাসী আব্দুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফুলবাড়ীর আমতলা (পিরেরপাট) এলাকার ঢাকা প্রবাসী আব্দুল কুদ্দুস প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হয়ে বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়ার অন্ধ জমিদাতা সাইফুর রহমানকে ফুসলিয়ে দুই ছেলের অফিস সহকারী পদে চাকরীর লোভ দেখিয়ে তিন বিঘা জমি হাতিয়ে নিয়ে সম্প্রতি বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়া ছিটমহল কালীরহাট সংলগ্ন নদীর পাড়ে বাঁশঝাড়ে ২০২১ সালের প্রথমে তরিঘরি করে রাশেদ খান মেনন মহাবিদ্যালয়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে টিনের ঘর নির্মাণ করে পার্শ্ববর্তী কাশীপুর কলেজের প্রভাষক ওবায়দুর রহমানকে অধ্যক্ষ করে ভুয়া রেজুলেশন ও কাগজপত্র তৈরি করে গোপনে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছিটমহল বিনিময়ের পর বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সাবেক সিটমহল দাসিয়ারছড়ায় শিক্ষার আলো ছড়াতে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় একমাত্র কলেজ মইনুল মোস্তফা মহা বিদ্যালয় যা বিধি মোতাবেক চলছে।এর পড়েও দুরত্ব না মেনে কাছাকাছি দুটি কলেজ হওয়ায় এলকায় জনমনে নানা প্রশ্ন বিরাজ করছে।
স্থানীয় বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দা লিটন, জব্বার আলী, আশরাফুল হক, আজিমুদ্দিন, মোখলেছুর রহমান ও আনিসুর রহমান বলেন, ২০১৫ সালে মইনুল মোস্তফা মহাবিদ্যালয়ে পাঠদানের অনুমতি পেয়ে বিধি মোতাবেক চলছে। হঠাৎ করে রাশেদ খান মেনন মহাবিদ্যালয় নামে আর একটি প্রতিষ্টান তুলে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে অতি গোপনে নিয়োগ বানিজ্য করে আসছে।
বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়া ছিটমহল বিনিময় আন্দালনের সভাপতি মইনুল হক বলেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিটমহলবাসীর ভাগ্যর দুয়ার উন্মোচন করেছে। এই ছিটমহলে সরকারী বিধিমালা ও দূরত্ব অমান্য করে রাশেদ খান মেনন মহাবিদ্যালয় নামে একটি ভুয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তুলেছে। এলাকাবাসী এটি মানে না।
সাবেক বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়া ছিটমহল বিনিময় আন্দোলনের সাধারন সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়া বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সাথে মুজিব ইন্দ্রা চুক্তির আলোকে ভারতের সাথে কূটনৈতিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতীয় ১১১টি ছিলমহল বাংলাদেশে রুপান্তরিত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বৃহত্তর দাসিয়ারছড়া ছিটমহল। ৬৮ বছর শিক্ষা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর শিক্ষায় এগিয়ে নিতে মইনুল মোস্তফা মহাবিদ্যালয়টি ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বিধি মোতাবেক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।
বিলুপ্ত দাসিয়ার ছড়া কাশীরহাট এলাকার অন্ধ জমিদাতা সাইফুর রহমান বলেন, সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস কলেজ নির্মাণ করে আমার দুই পুত্রকে চাকরী দিয়েছে এবং শিক্ষক ও কর্মচারী মৌখিক নিয়োগ দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
রাসেদ খান মেনন মহাবিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমিও সাংবাদিক ছিলাম। বর্তমানে ঢাকার গাজিপুরে বড় ব্যবসা করছি। আমি কলেজ করেছি সময় হলে চালু হবে। ঠেকার কেউ নাই উপরে আমার হাত রয়েছে যা লেখার লেখেন।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমদ দাস বলেন, এটি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা শিক্ষা অফিসার বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ডে কথা বলেন সরাসারি কলেজ তারা দেখে।
রাসেদ খান মেনন মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও কাশীপুর ভিগ্রি কলেজের প্রভাষক ওবায়দুর রহমান বলেন, আমাকে সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মৌখিকভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেন। আমি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারবো না বলে সভাপতি কে বলেছি।
এ ব্যপারে জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম বলেন,বিলুপ্ত ছিটমহলে মানুষকে প্রতারিত করা যাবেনা। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি।
এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রংপুর অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক এস এম আব্দুল মতিন লস্কর বলেন, রাসেদ খান মেনন মহাবিদ্যালয় নামে প্রতিষ্ঠান পাঠদানের অনুমতি নাই ও তালিকায় নাম নাই। কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সময় জার্নাল/আরইউ