টি আই তারেক।যশোর : পরনে গোলাপী রংয়ের স্যালোয়ার কামিজ এর উপর সাদা এ্যপ্রোন, মাথায় হিজাব। মনকাড়া ম্যাচিংয়ের এই ড্রেস পরা ছাত্রীরা সবাই আদ্-দ্বীন সকিনা উইমেন্স মেডিকেল কলেজ যশোরের শিক্ষার্থী।
তাদের এক সাথে দেখলে মনে হবে একই দেশের মানুষ এরা। কিন্তু না, বাংলাদেশী ছাত্রীদের সাথে এই ক্যাম্পাসটিতে রয়েছে ভারতের জম্মু এন্ড কাশ্মির, গুজরাট, মুর্শিদাবাদ, তামিলনাডু, অন্ধ্রপ্রদেশ, হায়দ্রাবাদ, বিহার, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খান্ডসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বিদেশী শিক্ষার্থী।
খবরটি দেখে হয়তো অনেকে অবাক হবেন। কারণ প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে যখন গমন করেন প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে। সেখানে সেই দেশের শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজেগুলোতে অধ্যায়ন করছেন। বিশেষকরে আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ তাদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে।
বাংলাদেশে ক্যাম্পাসটি তাদের কাছে কেমন লাগছে? জানতে চাইলে মেডিকেল কলেজটির এমবিবিএস ১ম বর্ষের বিদেশী শিক্ষার্থীদের ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করা ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের বাসিন্দা আদিবা তাবাস্সুম জানালেন, এটা আমাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। নতুন পরিবেশ, নতুন দেশ। তবে এখানকার সবকিছু খুবই ভালো। ক্লাসরুমসহ পুরো ক্যাম্পাসের সবকিছুই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। নতুন পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগবে তবে আমরা এই পরিবেশ মানিয়ে নিতে পারবো।
প্রায় একই রকম কথা বললেন ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ থেকে আসা তমাতাপু লিখিথা শ্রী। তিনি জানালেন আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষাদান পদ্ধতিটা শৃংখলাপূর্ণ এবং নিয়মতান্ত্রিক। ক্লাসরুম, হোস্টেল, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ম্যানেজমেন্ট খুবই প্রশংসীয়। আমরা এখানে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করছি।
জম্মু এন্ড কাশ্মির থেকে আসা শিক্ষার্থী মিধাত জান বলেন, কলেজটি আমার খুবই পছন্দের। কারণ এখানকার হোস্টেলটা আমাদের জন্য মাননসই। রান্না করা খাবার আমাদের কাশ্মিরের খাবারের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নাই। শিক্ষকরা যথেষ্ট ভালো। তারা আমাদের পাঠগুলো বুঝাতে সার্বিক সহযোগিতা করছেন। শিক্ষকদের ইংরেজি ভাষায় কথা বলার ধরণ আমাদের কাছে পরিচিত।
গুজরাট থেকে আসা পাটেল ফাইজা মাহমুদ ফারুকের মতে, এখানকার পরিবেশের সাথে ভারতের পরিবেশের মিল রয়েছে। বিশেষ করে মেডিকেল কলেজটির অভ্যন্তরিন সবুজ পরিবেশের সাথে আমাদের দেশের কলেজগুলোর মিল খুজে পাচ্ছি। কলেজটির শিক্ষকরা আমাদের প্রতি যথেষ্ট সচেতন, কেয়ারফুল এবং বন্ধু সুলভ। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য মেডিকেল কলেজটি নিরাপদ এবং দারুন ভালো।
মহারাষ্ট্র থেকে আসা পাঠান উমামা বললেন, ক্যাম্পাসটি অনেক বড় জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত। পরিবেশ ক্লিন এবং গ্রীন। বিশুদ্ধ দখিনা বাতাস পায় আমরা। কোন দুষণ নাই বরং খুবই স্বাস্থ্য সম্মত। নিরিবিলি এলাকায় এটা অবস্থিত। বিশেষ করে এখানকার শিক্ষকরা বিদেশী শিক্ষার্থীদের প্রতি যথেষ্ট যতœশীল। আমি ক্যাম্পাসটি পছন্দ করি।
ভাড্ডি মেঘানাসহ বিদেশী অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেই প্রায় একই রকম অনুভূতি জানা গেছে।
আদ্-দ্বীন সকিনা উইমেন্স মেডিকেল কলেজে ১০ম ব্যাচে ১ম বর্ষের এমবিবিএস কোর্সে ২৩ ভারতীয় ছাত্রীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মোট ৭০টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। তাদের এক সাথে দেখলে একই পরিবারের সদস্য বলে মনে হবে।
আদ্-দ্বীন সকিনা উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, যশোর ক্যাম্পাসে বাংলাদেশী সহপাঠীদের সাথে মিলেমিশে আনন্দের সাথে চিকিৎসক হবার পাঠ নিচ্ছে এসব ভারতীয়রা। ভারত ছাড়াও প্রতিবেশী আরেকটি রাষ্ট্র নেপালের শিক্ষার্থীসহ মোট ৮৭ জন বিদেশী ছাত্রী এই ক্যাম্পাসটিতে অধ্যয়নরত রয়েছেন।
কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টিত, সুদৃশ্য, মনোরম ক্যাম্পাসটিতে অভিভাবকরা এসে, এসব শিক্ষার্থীদের যদি এক সাথে দেখার সুযোগ পান। তাহলে তাদের সন্তানদের খুজে নিতে কিছুটা সময় পার হবে বৈকি।
সময় জার্নাল/আরইউ