মুহা: জিললুর রহমান, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে বৈকারী ইউনিয়ন ছাড়া বাকি ১২টিতে শান্তিপূর্নভাবে উৎস্যবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে বিরতিহীন ভাবে চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে সকাল থেকে ভোটারা দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে ভোট প্রদান করেন। তবে ভোট কেন্দ্র গুলোতে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যনীয়।
সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর এলাকার চায়ের দোকানী আবদুল গফুর জানান, দীর্ঘদিন পরে মানুষ এবার এই নির্বাচনে একটু শান্তিপূর্নভাবে ভোট দিতে পারছে। ভোট কেন্দ্রে গিয়ে কারো কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে না। কে জিতবে সেটা বড় কথা না, তবে ভোটাররা কোন প্রকার বাধা ছাড়াই তাদের নিজেদের পছেন্দের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছে। ইউনিয়নের সব কেন্দ্রে ভোট সুষ্ট হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে ভোট গ্রহণের শুরুতেই সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় নির্বাচনী সহিংসতায় একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে সদর উপজেলার বৈকারী ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে পাঁচজনকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরার বৈকারী ইউনিয়নের খলিলনগর কেন্দ্রে দু’পক্ষের সংঘর্ষে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আসাদুজ্জামান অসলেসহ ৭ জন আহত হন। মোটরসাইকেল প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম মোস্তফার পোলিং এজেন্টদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টাকালে দু’পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের মধ্যে ৫ জনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া একই ইউনিয়নের কাথন্ডা ওয়ার্ডের মেম্বর প্রার্থী আব্দুল জলিলের বাড়িতে হামলা হয়েছে। এঘটনায় ৩জন আহত হয়েছেন। আহত চেয়ারম্যান প্রার্থী আসাদুজ্জামান অসলেসহ তার দুই ছেলে ও গাড়ী চালককে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৈকারী ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা পুলিশের পরিদর্শক আবুল কালাম জানান,দুপক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে পৌছে লাটিচার্জ করে দু’পক্ষকে ছত্রভঙ্গ কওে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। পরে সেখানে শান্তিপূর্ন পরিবেশে ভোটগ্রহণ করা হয়।
এদিকে সাতক্ষীরায় দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর তৎপরতা ছিল বেশ লক্ষনীয়। বৈকারী ছাড়া বাকি ১২টি ইউনিয়নে আর কোন নির্বাচনী সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌছানোর পর ভোট গ্রহণ শুরু হয়।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৬৪ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৬০ জন ও সাধারণ ইউপি সদস্য পদে ৪৯১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৩টি ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১২৬টি। ভোট কক্ষের সংখ্যা ৭১৯টি এবং অস্থায়ী ভোট কক্ষের সংখ্যা ৫৫টি। সদর উপজেলায় ১৩টি ইউনিয়নে মোট ভোটার দুই লাখ ৬৬ হাজার ৬৫৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৩৪ হাজার ২২৪ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৩২ হাজার ৪২৯ জন।
নির্বাচন অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, অবাধ, সুষ্ট ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহনের লক্ষে নির্বাচনী কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি প্রতিটি কেন্দ্রে একজন এসআইয়ের নেতৃত্বে ৪জন পুলিশ সদস্য ও দুজন সশস্ত্রসহ ১৭ জন আনসার সদস্য নিয়োজিত ছিল। এছাড়া প্রত্যেক ইউনিয়নে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন। ১৩টি ইউনিয়নে ৫জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি ৩ প্লাটুন বিজিবি সদস্য ও ৩ প্লাটুন র্যাব সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করেছে।
জেলা নির্বাচন অফিসার নাজমুল হোসেন জানান, বৈকারী ইউনিয়নে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সদর উপজেলায় শান্তিপূর্নভাবে উৎস্যবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন ভোট গণনা চলছে। প্রসঙ্গত, সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়ন বাদে বাকি ১৩টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে,বাঁশদহা, কুশখালি, বৈকারী, ঘোনা, শিবপুর, ভোমরা, ধুলিহর, ব্রহ্মরাজপুর, আগরদাড়ি, ঝাউডাঙ্গা, বল্লী, লাবসা ও ফিংড়ি।
সময় জার্নাল/এলাআর