........
কাকটা রোজ এসে বসতো
আমড়া গাছের ডালে, রান্নাঘরের পাশে,
ছোট্ট বৃষ্টিভেজা কুচকুচে কাকটা।
তারস্বরে চ্যাঁচাতো, কখনো বা ঝিমাতো।
ধর্তব্যের মধ্যেই কেউ আনেনি তাকে
অথবা অগ্রাহ্য করতো তার উপস্থিতিকে।
রাত্রের বাসিভাতগুলো ময়লার ঝুড়িতে ফেলতে গিয়ে
হঠাৎই তাকে আমি দেখি
কি করুণ চোখে চেয়েছিলো রান্নাঘরের জানালায়।
তাকে দেখিনি কখনো আগে,
নাকি অভ্যেসে তার ডাক সয়ে গিয়েছিলো।
অহেতুক মায়া হলো- রুগ্ন বৃষ্টিভেজা কাকটা!
ভাতগুলো ছড়িয়ে দিই কার্ণিশে,
খেয়ে যাক, বেঁচে থাক বাছা আমার!
সেই শুরু ভোরবেলা আসবেই
উঁকিঝুঁকি, ডাকাডাকি আমাকে দেখলেই,
যেন আমার ওপর তার কতই খবরদারি।
বাড়ির সবাই হাসে, ঐ দেখ এসে গেছে মার ছেলে।
ভারি সঙ্কোচ হয়,
আর কেউ ভাত দিলে উড়ে যাবে,
আমার পরেই তার যত জ্বালাতন।
দিন দিন মায়া যেন বাড়লো,
দস্যিছেলের মতো আমাকেই চাই তার,
আমার হাতেই খাবে রাত্রের ফেলে দেওয়া ভাত।
কিছুদিন পরেই এলো প্রতিবাদ।
অবুঝ বোকাটা ভাত ছড়ায় কেবলই
সেই কার্ণিশের নিচে, প্রতিবেশীর সবজি খেতে।
সভ্যতা বোঝেনি, ভদ্রতা জানেনি,
খাওয়ার ম্যানারটুকু শেখেনি,
নালিশের তীর তাই আমারই দিকে।
হার মানতেই হলো, ভোরবেলা চলে যায় আত্মগোপনে।
বোকাটাকে তাড়াবার সাধ্য ছিলো না,
ভারি দুর্বল আমি, ভারি অকেজো।
কতবার খুঁজে গেলো, ডানার ঝটপটানি আর তারস্বরে চ্যাঁচালো,
তবু আমি নিরুদ্দেশ, রান্নাঘরের কোণে,
দুটো বা চারটে দিন তারপর -
চলে গেল কোথায়, কে জানে,
কক্ষনো আসেনি রান্নাঘরের পাশে, কার্ণিশে
বৃষ্টিভেজা সেই কুচকুচে কাকটা।
এভাবেই কাকগুলো হারিয়ে যায়,
ম্যানার জানেনা বলে,
ম্যানার বোঝেনা বলে,
আমাদের সভ্যতা থেকে।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
১৪ নভেম্বর ২০২১।