দুলাল বিশ্বাস। গোপালগঞ্জ : টুঙ্গিপাড়ায় ঋষি সম্প্রদায়ের অনেক লোক বসবাস করে। যারা পূর্বে মৃত গরু বা পশু পাখির চামড়া থেকে পাদুকা বা চামড়া জাত পণ্য তৈরি করতো ও চামড়া বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করতো। সময়ের পরিক্রমায় সেই কার্যক্রমটি এখন আধুনিক প্রযুক্তির কারণে হারিয়ে গেছে। বর্তমানে ঋষি সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজেদের জুতা মেরামতের কাজে নিয়োজিত রেখেছে। জুতা মেরামত করে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে কোন রকমে দিন পার করছে। তারা যদি মেরামতের পাশাপশি পাদুকা তৈরি করতো তাহলে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হতে পারতো। কিন্তু তাদের কারিগরি প্রশিক্ষণ ও কোন জুতা প্রস্তুতকারক কোম্পানির সাথে যোগাযোগ না থাকায় তারা পাদুকা তৈরির কাজ করতে পারতো না।
এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষদের সাথে একাধিক বৈঠক করে তাদের প্রয়োজন ভিত্তিক একটি প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম। পরবর্তীতে তাদের জুতা প্রস্তুতকারক কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়া হবে।
সোমবার সকালে পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতকারক ঋষি সম্প্রদায়ের লোকেদের ৪ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠান হয়েছে। তাদের প্রশিক্ষন দেয় জুতা ব্যাবসায়ীদের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান লেদার টেকনোলজি স্মল এন্ড মিডিয়া মেন্টার ট্রেনার্স কো-অপারেটিভ সোসাইটি।
উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত প্রশিক্ষনের সমাপনী অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলামের সভাপতিত্বে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, উপজেলা চেয়ারম্যান সোলায়মান বিশ্বাস, সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেদারুল ইসলাম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অসীম কুমার বিশ্বাস, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী জোনাকি, সমাজসেবা কর্মকর্তা মানব রঞ্জন বাছাড় প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
জুতা রপ্তানি কারক ব্যাবসায়ীদের সংগঠন লেদার টেকনোলজি স্মল এন্ড মিডিয়া মেন্টার ট্রেনার্স কো-অপারেটিভ সোসাইটির সভাপতি আমিরুল ইসলাম জানান, জুতা তৈরি করতে লেদারের অংশে হাত সেলাই সহ ছোট ছোট অনেক কাজ থাকে। যা জুতা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন পল্লী থেকে করিয়ে নেয়। টুঙ্গিপাড়ার ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষদের প্রশিক্ষন দিয়ে সেই আউটসোর্সিংয়ের কাজগুলো দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন টুঙ্গিপাড়া ইউএনও। পরে সংগঠনের সবার সাথে আলোচনা করে ঋষি সম্প্রদায়ের লোকেদের ৪ দিন ব্যাপী পাদুকা প্রস্তুত ও গুনগত মান উন্নয়ন করা যায় সে বিষয়ে প্রশিক্ষন দেয়া হয়। পরবতীতে তাদের সেই কাজগুলো হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, টুঙ্গিপাড়ায় ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষেরা বংশ পরম্পরায় কষ্টে ও মানবতার জীবন যাপন করে। তারা স্থানীয়ভাবে জুতা মেরামতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। জুতা মেরামত করে তাদের জীবন পরিবর্তন করা খুবই কষ্টসাধ্য। তাই তাদেরকে জুতা ও চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুত করতে প্রশিক্ষণ মাধ্যমে জুতা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষেরা আত্মকর্মসংস্থানের পাশাপাশি নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে পারবেন।
সময় জার্নাল/আরইউ