সময় জার্নাল প্রতিবেদক :
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, নির্বাচনকে ঘিরে কয়েকটি স্থানে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তার কোনোটাই প্রত্যাশিত ও কাম্য নয়। তিনি বলেন, ‘ঘটনাগুলোর বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এর পেছনে ছিল নির্বাচনকে সামনে রেখে আধিপত্য বিস্তার, বংশীয় প্রভাব, ব্যক্তিগত শত্রুতা, রাজনৈতিক কোন্দল।’ সোমবার রাজধানীর নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে সিইসি এসব কথা বলেন। এসময় নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব উপস্থিত ছিলেন।
সিইসি বলেন, ‘গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী সারাদেশে নির্বাচনী সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব প্রাণহানির ঘটনার সবগুলো নির্বাচনী সংঘর্ষের কারণে হয়েছে কি না তা অনুসন্ধানের দাবি রাখে। এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি ঘটনা ভোটকেন্দ্রে বা ভোটের দিন ঘটেছে। কোনো ঘটনা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই ঘটেছে আবার কোনোটা রাতের আধারে ঘটেছে।’
তিনি বলেন, ২০২১ সালে দেশব্যাপী ইউনিয়ন পরিষদ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর ৩৬৯টি এবং ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ৮৩৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তৃতীয় ধাপে ২৮ নভেম্বর ২ হাজার সাতটি এবং চতুর্থ ধাপে ২৩ ডিসেম্বর ৮৪০টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া শিগগির পঞ্চম ধাপে আরও প্রায় ১ হাজার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। এবছরের মধ্যেই মেয়াদ উত্তীর্ণ সব ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
তিনি বলেন, দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৮ হাজার ৪৭২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন পদে প্রার্থী ছিল ৪১ হাজার ২১৮ জন। মোট ১৭টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এবং ব্যাপক সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। চেয়ারম্যান পদের বিপরীতে ৩ হাজার ৩১০ প্রার্থী, সাধারণ সদস্য পদের বিপরীতে ২৮ হাজার ৭৪৭ এবং সংরক্ষিত আসনে সদস্য পদের বিপরীতে ১ হাজার ১৬১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এতে গড় ভোট পড়েছে ৭৪ দশমিক ২২ শতাংশ। তিনি বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮৩৩টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ৮ হাজার ৪৭২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে মাত্র ১৬টি ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণ প্রিজাইডিং অফিসারের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত হওয়ার কারণে বন্ধ করা হয়। যা মোট ভোটকেন্দ্রের মাত্র দশমিক ১৮ শতাংশ। তারপরও ভোটকেন্দ্রের বাইরে বিচ্ছিন্ন হানাহানির ঘটনা ঘটেছে এবং তাতে প্রাণহানিও হয়েছে যা কাম্য নয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, তথ্যাদি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়েই অনুষ্ঠিত হয়েছে। টেলিভিশনের সরাসরি সম্প্রচারে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং অবাধ নির্বাচনের খবর প্রচার করা হয়েছে। তাতে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেওয়ার সচিত্র প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনাসহ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করে। প্রশিক্ষণ, নির্বাচনী মালামাল বিতরণ, ভোটগ্রহণ, ভোট গণনা, ফলাফল প্রকাশ ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রেই সুচারুরূপে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। প্রতি ধাপেই ভোট গ্রহণের দিন, এর আগে ও পরে ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনী এলাকায় যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। পর্যাপ্ত পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য মোতায়েনসহ এলাকায় পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড ও বিজিবির মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়। এছাড়া আচরণবিধি ভঙ্গসহ নির্বাচনী অপরাধের বিচারের জন্য নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। নির্বাচনী এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ইতোমধ্যে দুই ধাপের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। আরও দুই ধাপের নির্বাচনী কার্যক্রম চলছে। এরপর একাধিক ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সবগুলো নির্বাচন সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই সুযোগে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থী, তাদের সমর্থক, সামাজিক নেতৃবৃন্দ এবং সর্বোপরি সব রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি অনুরোধ থাকবে তারা যেন সবাই আচরণবিধি মেনে চলেন, সহনশীল আচরণ করেন। এসব ব্যাপারে নির্বাচনী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সহযোগিতা কামনা করছি।
সময় জার্নাল/ইএইচ