শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

ঝুলছে জাহাঙ্গীরের মেয়র পদ

শনিবার, নভেম্বর ২০, ২০২১
ঝুলছে জাহাঙ্গীরের মেয়র পদ

সময় জার্নাল প্রতিবেদক : দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত হওয়া জাহাঙ্গীর আলম দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইনে স্পষ্ট কিছু নেই। কোনো মেয়রকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘটনাও দেশে এই প্রথম। সাধারণত ফৌজদারি মামলাজনিত কারণে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা পদচ্যুত হয়ে থাকেন। 

শনিবার এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, মেয়র জাহাঙ্গীরের পদ থাকবে কিনা আইন দেখে বলতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, এটা আমাদের নতুন অভিজ্ঞতা। আইনগত দিক আলোচনা-পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

এদিকে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কটূক্তি করায় মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহসহ একাধিক মামলা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এর আলোকে মেয়রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ইঙ্গিতও মিলেছে। এদিকে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষমা চেয়ে জাহাঙ্গীর আলম আপিল করবেন বলে জানা গেছে।

গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় জাহাঙ্গীরকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে। 

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অচিরেই মামলা হবে। ফৌজদারি ও রাষ্ট্রদ্রোহ উভয় মামলা হতে পারে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহল মনে করেছে জাহাঙ্গীর ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। সে অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা হতে পারে। আবার আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন তার বক্তব্য সংবিধান লঙ্ঘন এবং রাষ্ট্রদ্রোহী। সে অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহী মামলাও হতে পারে।

২০১৮ সালের জুনে নৌকা প্রতীকে গাজীপুরের মেয়র নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর আলম সরকার। গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে তার একটি মন্তব্যের অডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে তোলপাড় শুরু হয়। ওই অডিওতে মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা নিয়ে মন্তব্য করতে শোনা যায় তাকে। পরে তাকে শোকজ করে আওয়ামী লীগ। এর জবাব পর্যালোচনার পর শুক্রবার তাকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আসে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বহিষ্কারের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়েও জানানো হবে।

এখন প্রশ্ন দলীয় পদ হারানোর পর মেয়রের চেয়ারে তিনি থাকতে পারেন কিনা? সিটি করপোরেশন আইনে এ নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনে ভোট করতে ২০১৫ সালে আইন সংশোধন করা হয়। তখন শুধু দলীয় প্রতীক ও প্রার্থিতার বিষয়টি যুক্ত করা হয়। মেয়র পদ থেকে অপসারণের বিষয়ে নিয়মের কোনো পরিবর্তন হয়নি। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের কোনো মেয়র বা কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হলে সরকার লিখিত আদেশের মাধ্যমে তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবে। আদেশপ্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে মেয়র প্যানেলের জ্যেষ্ঠ সদস্যের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেয়র।

মেয়র এবং কাউন্সিলরদের অপসারণের বিষয়ে আইনের ১৩(১) ধারায় বলা হয়, তারা অপসারণযোগ্য হবেন, যদি তিনি (ক) যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া সিটি করপোরেশনের পর পর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকেন; অথবা (খ) নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে আদালতে দণ্ডিত হন; (গ) দায়িত্ব পালন করতে অস্বীকার করেন অথবা শারীরিক বা মানসিকভাবে অসমর্থ হন; (ঘ) অসদাচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন; (ঙ) নির্বাচনের অযোগ্য ছিলেন মর্মে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তিন মাসের মধ্যে প্রমাণিত হয়; (চ) বার্ষিক ১২টি মাসিক সভার পরিবর্তে ন্যূনতম ৯টি সভা গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া অনুষ্ঠান করতে বা উপস্থিত থাকতে ব্যর্থ হন। কোনো মেয়র বা কাউন্সিলর অপসারিত হলে ৩০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করতে পারবেন এবং আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অপসারণের আদেশ স্থগিত থাকবে। আপিলের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির আদেশই চূড়ান্ত।

আইনগত বিষয় জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, এ নিয়ে আমি কমেন্ট করতে চাই না। এ বিষয়ে গতকাল এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদে থাকবে কিনা, আইন দেখে পরবর্তী সময়ে এ ব্যাপারে মন্তব্য করা হবে। এখন মেয়র আছে। কতদিন থাকবে, সেটা আইন দ্বারা নিষ্পত্তি করা হবে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, উনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। দল থেকে বহিষ্কার করেছে, তিনি তো দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত। এটা আমাদের নতুন অভিজ্ঞতা। এ আইনগত দিক আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক মনে করেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দল থেকে বহিষ্কার হলে মেয়র পদেও থাকতে পারেন না। তিনি বলেন, দলে তো উনি আর নেই, তা হলে দল থেকে বহিষ্কার করলে তো আর (মেয়রের) চেয়ার থাকে না। এটা সাধারণ হিসাব।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা যথাপোযুক্ত। আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে যে চেতনা ধারণ করার কথা, তা তার মধ্যে ছিল না। তিনি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী ছিলেন বটে, তবে তার মধ্যে বিপরীতমুখী চেতনা ছিল। আসলে সে বর্ণচোরা।

দলের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, জাতির পিতাকে নিয়ে কটূক্তি করে জাহাঙ্গীর আলম আমাদের হৃৎপিণ্ডে আঘাত করেছে। সমস্ত বাঙালির হৃদয় চূর্ণ করে দিয়েছে। ওকে মানুষ ক্ষমা করবে না।

এদিকে বহিষ্কারাদেশ ঘোষণার পর থেকেই জাহাঙ্গীরবিরোধীরা গাজীপুর শহরের কিছু স্থানে আনন্দ মিছিল করলেও তার কর্মী-সমর্থকরা নীরব রয়েছে। গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, দল জেনেশুনেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। তার কারণে দলীয়ভাবে কোনো ধরনের শূন্যতা তৈরি হবে না। দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিরও কোনো অবকাশ নেই। তাই এ মুহূর্তে তাকে নিয়ে কোনো চিন্তা আমরা করছি না। তিনি আরও বলেন, জাহাঙ্গীরের কারণে নগরের উন্নয়ন থমকে যাওয়ারও আশঙ্কা নেই। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে চলমান থাকবে। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান বলেন, একক ব্যক্তির কারণে গাজীপুরে আওয়ামী লীগে কোনো ধরনের শূন্যতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা নেই।

গতকাল দুপুরে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে নিজের অবস্থান জানান মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। নিজেকে ষড়যন্ত্রের শিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার নামে যে অডিও ছাড়া হয়েছে সেখানে মানুষের কথা কেটে কেটে মূল কথা বাদ দিয়ে আমার নামে চালানো হয়েছে। আমাকে কীভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়, সেই কাজটি তারা করেছে। কিন্তু আমার অস্তিত্বজুড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ রয়েছে। আজ আমি নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে এখানে দাঁড়িয়েছি। আমার সব অস্তিত্বে আমার প্রধানমন্ত্রী, তিনি আমার অভিভাবক। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা আমি মেনে নেব। বিনা কারণে তিনি আমাকে ফাঁসি দিতে চাইলে তাতে আমি রাজি আছি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নিয়ে জীবনে কোনো ছাড় দিই নাই, ভবিষ্যতে দেব না। কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। কান্না করতে করতে বাসায় চলে যান।

সময় জার্নাল/এসএ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল