তাওসিফ মাইমুন:
পর্ব (১)
বুকের মাঝের দন্ডটায় বৃষ্টি হলেই ব্যথায় চিন চিন করে উঠে। হাত দেওয়ার অবস্থা নেই। চারিদিকে শুধুই মোহ। অবিরাম চাকচিক্যের আড়ালে কি যেন একটা খুঁজে চলে। হঠাৎ পরিচয় পত্রিকার কালো লিখার সাথে। মুহুর্তে মুহুর্তে পরিবর্তন হতে থাকে। এক ভোরেই নাম ঠিকানাহীন চিঠি, লিখা ছিলো বন্ধু তোমার অজান্তে অজানে জানার চেষ্টা। এগিয়ে চলছে আরও কতকি কথা। হাল্কা মৃধু বাতাশের কোলে হেলেপড়ে আলাপন শুরু। ওদিকে কাঠ পিপড়ে একটু একটু করে কেটে নিচ্ছিলো রক্ত তিলে তিলে গড়া গোস্তের দলা। খেয়াল হতেই দেখছিলো অনেক খানি সরিয়ে নিয়েছে পিপড়ের দল৷ জোড় দেওয়ার চেষ্টা প্রায় ব্যর্থ! হয়ত কখনো লাগবে না জোড়া। তবুও শহরের এ প্রান্ত হতে তে প্রান্তরে খুঁজে ফিরে। পরিচিত ঘ্রাণ লাগে না নাকে। বুকের ব্যথায় ফিরে আসে কাঠাল ছায়া ঢাকা ফুটো ঘরের নিচে। আর ভাবতে লাগে
“ যে বন্ধন যায় ছিড়িয়া তাতে কি কভু লাগে আর জোড়া!”
এক কাটফাঠা দুপুরে দরজার লেটার বক্সে কিছু একটা আওয়াজ করে উঠলো। দৌড়ে গিয়ে দেখলো বক্সটি নড়ছে। এদিক সেদিক খুঁজেও পাওয়া গেলোনা কাউকে। মূহুর্তেই চোখ পড়েছে ছোট দরজা খোলা বক্সের দিকে। ভেতরে লাল ফিতে মুড়ানো নীল খাম। খুলেই দেখালো, এলো শব্দে সাজানো, কেমন আছিস বন্ধু? আশারাখি ভালো থাকবি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে তোকে দেখেছি। বন্ধুদের সাথে কিসব নিয়ে খুনসুটিতে মেতে ছিলি। যাই হোত আমার নাম আমি ‘হৃদ্ধ’। নীল চিঠির মাধ্যমে তার সাথে পরিচয় সখ্যতা, বন্ধুত্বের গভীরতা। সম্পর্কের ছোঁয় যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেই শুরু বান্ধুবী হৃদ্ধর সাথে প্রায় রাতে কত কি কথা হয়! বিষয় বস্তু প্রেম, ভালো লাগা, ভালোবাসা। হৃদ্ধ যেন এক আশ্চর্য প্রদিপ যে খানে যায় আলো ছড়ায়। বান্ধুবীর ছোঁয়ায় বিপুলের এলো জীবনে কিছুটা স্বাস্তি ফিরেছে। হৃদ্ধর সাথে পরিচয়ের আগে হলের প্রতিহিংসার রাজনিতী ছিলো বিপুলের নেশা। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা তার নিত্য রুটিন ছিলো। এ যেন সকালেন নাস্তার মত। যথারিতি এক পূর্ণিমা রাতে হৃদ্ধর মোবাইলে বিপুলের কল......
পর্ব (২)
অপর প্রান্ত থেকে হ্যালো....
বিপুলঃ কে বলছেন?
অপর প্রান্ত থেকেঃ পরিচয় দিয়ে হবে কি?
বিপুলঃ অপরিচিত কন্ঠ বাতসের আদ্রতা থামিয়ে দিতে জানে। হারাতে চাইনা আপন সত্বা। পরিবর্তনে ধারা লাগতে দিবো না ঘর্মাক্ত শরীরে। রেখে দিবো জমিয়ে যে আসবে অগনিত দিন বাদে ধরতে হাত হাতে।
অপর প্রান্ত থেকেঃ রাখুনতো আপনার ঘামের আলাপ। এখনো সেই পুরাতন যুগেই আছেন পড়ে। যতসব! গান গাইতে পারেন?
বিপুলঃ গানের সুর আমার হৃদয় টানে না। তবে মাঝে মাঝে এক আধটুক শুনি।
অপর প্রান্ত থেকেঃ একলা আধারে যদি যাই হারিয়ে খুঁজে নিও তবে তোমার তরে................
আহা কি সুমধুর কণ্ঠের স্বর। নিরবে বিপুলের হৃদয়ের প্রতিটি শিরা উপশিরায় আঘাত করতে লাগলো। হারিয়ে যেতে লাগলো ভাবনার এক মহা জগতে। ভেঙ্গে ছিলো কি সে ঘুম? নাকি এ জনম হয়ে যাবে পার?
বিপুলের উপর ভর করা সুরের মাতম হঠাৎ সরে বসলো। ভিমড়ি খেয়ে আবারও হ্যালো! হতভম্ব স্বরে এত দারুণ এক আয়োজন! হয়ত জেগেই ছিলাম! মনে মানে অহংকারের স্বরে এ অগুছালো মায়ায় নিজেকে বিলাতে দেওয়া যাবে না।
বিপুলঃ আপনি ভালো গাইছেন, সুরের মুর্ছনায় আমাকে খানিকটা আনন্দ দিয়েছে বটে তবে আপনার গানের অর্থ বুঝেন?
অপর প্রান্ত থেকেঃ সব শব্দের অর্থ না বুঝাই ভালো। জীবন অর্থহীন এক মায়ার বাধন। জড়ালে হবে যত, নিরবে গুণবে তার শত ক্ষত।
বিপুলঃ. বাহ! দারুণ শব্দের ব্যবহার। আমার বন্ধু কোথায়? জেগে আছে? নাকি সেও আমার মত একা একা তারা গুনে!
সুমি, নাহ, সেই কবেই এক রাজ্যে হারিয়ে গেছে। হয়ত এতক্ষণে কোন প্রিয় মুখের বুকে মাথা রেখে নির্দ্বিধায় বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলছে। তবে কি ঘুম নেই?
বিপুলঃ বন্ধনের যত বাঁধন নিয়েছি বুকে. গুণে গুণে দিচ্ছি তার সকল দাম। জানি ছিড়বে না কভু ছিড়বে না দিতে পারবো কি তার দাম? হঠাৎ পাশ থেকে অট্ট হাসিতে মেতে উঠেছে কয়েকটি কন্ঠস্বর। চলবে.....
লেখক: কবি ও শিক্ষার্থী।
সময় জার্নাল/এমআই