সময় জার্নাল ডেস্ক। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ।
শনিবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রচারিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, শনিবার সকালে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বাংলাদেশের অসন্তোষের কথা জানান। বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই একতরফাভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রসচিব এ সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে দুই দেশের বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় আয়োজিত আলোচনার ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে উল্লেখ করার বিষয়টি নজরে আনেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্র আগে আলোচনা না করেই সিদ্ধান্তটি নিয়েছে। সরকারের একটি সংস্থা সন্ত্রাসবাদ, মাদক পাচার ও অন্যান্য ঘৃণ্য আন্তসীমান্ত অপরাধ দমনের সামনের সারিতে রয়েছে। আর এই বিষয়গুলোকে ধারাবাহিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারগুলোরও অগ্রাধিকারের বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এমন একটি সংস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত পররাষ্ট্রসচিব দুঃখজনক হিসেবে অভিহিত করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পররাষ্ট্রসচিব এ সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বলেন, র্যাবের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে শুধু মার্কিন প্রশাসনকেই নয়, জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদকেও তথ্য–উপাত্তের পাশাপাশি ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে একাধিকবার জানানো হয়েছে। এরপরও যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের পদক্ষেপ দুঃখজনক।
মাসুদ বিন মোমেন এ সময় মন্তব্য করেন, অভিযোগের বিষয়ে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই শুধু স্থানীয় পর্যায়ে ঘটে যাওয়া সুনির্দিষ্ট কিছু ঘটনার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র পদক্ষেপ নিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা যেসব দেশে ‘জাতিগত নিধনের পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’–এর মতো ভয়াবহ আন্তর্জাতিক অপরাধ সংগঠিত হয়েছে, এমন কিছু দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তটা দুঃখজনক।
তলবের সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে কিছু আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। র্যাবও এর ব্যতিক্রম নয়। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেপরোয়া সদস্যদের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। সেখানে একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আলাদা করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আর্ল মিলার বাংলাদেশ সরকারের উদ্বেগের বিষয়টিকে আমলে নিয়ে তা ওয়াশিংটনে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরার আশ্বাস দিয়েছেন। পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে আলোচনার সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত এই অভিমতও দিয়েছেন যে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার বিদ্যমান কাঠামো এবং উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়ের মধ্য দিয়ে চমৎকার ও বহুমাত্রিক এই সম্পর্ককে ঘনিষ্ঠ করার সুযোগ রয়েছে।
পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে মার্কিন সরকারের ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকতে চাওয়ার সদিচ্ছার বিষয়টিও আর্ল মিলার উল্লেখ করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরের মধ্যে কোনো বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের তলবের কোনো নজির নেই। অবশ্য চলতি বছর যুক্তরাজ্যের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে মন্তব্যের জেরে ঢাকায় যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তলব করেছিল।
সময় জার্নাল/আরইউ