মাহবুবুল আলম রিপন, ধামরাই : ঢাকার ধামরাইয়ে নেট হাউজ পদ্ধতিতে এবং জৈব বালাই ব্যবহার করে বিষ মুক্ত সবজি চাষ দিন দিন ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।
কৃষক তার নিজের জমিতে চাষ করলেও সকল খরচ সরকারিভাবে উপজেলা কৃষি অফিস সরবরাহ করে থাকে বলে জানা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সানোড়া এলাকার প্রায় ৩ শত বিঘার উপর জমিতে নেট হাউজ এবং জৈব বালাই ব্যবহার করে বিষ মুক্ত সবজির চাষ করা হয়েছে। ৫ শত জন কৃষক কৃষাণীকে নেট হাউজ পদ্ধতিতে এবং জৈব বালাই ব্যবহার করে বিষ মুক্ত সবজি চাষের জন্যসবজির বীজ, জৈব সার,বালাই নাশক বিষ প্রদান করা হয়েছে।
কৃষকরা ঠিক মতো সবজি চাষ করতে পারলে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি লাভবান হবে।বাজারে এই সবজির চাহিদা অন্যান্য সবজির চেয়ে বেশি। সাধারণ লোকজন বিষ মুক্ত সবজি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করছে।
ধামরাইসহ বেশ কিছু জায়গায় এই বিষ মুক্ত নিরাপদ সবজি বিক্রির জায়গা রয়েছে। উপজেলার সানোড়া এলাকার কালু বেপারীর ছেলে কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা বিষ মুক্ত কপি আগাম চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছি।পূর্বের বছরের চেয়ে এবারের বিষ মুক্ত সবজির চাহিদা অনেক বেশি। মানুষ এখন সচেতন। টাকা একটু বেশি লাগলেও ভালো জিনিসের প্রতি টান বেশি।
আমাদের বিষ মুক্ত সবজি চাষ করতে যাবতীয় সহায়তা করেছে উপজেলা কৃষি অফিস।নেট হাউস ও জৈব বালাই ব্যবহার করে বাঁশ, খুটি, নেট সকল কিছুর ব্যবস্থা করে দিয়েছে কৃষি অফিস।আমাদের একটি টাকাও লাগে নি।
তিনি আরো বলেন, নিয়মিত আমাদের ২৫ জন কৃষকের একটি করে টিম তৈরি করে আমাদের প্রশিক্ষণ এর ব্যবস্থা করেছেন।এখানে নারী – পুরুষ এক
সাথে প্রশিক্ষণ নিয়েছি।নিয়মিতভাবে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আরিফুল হাসান ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রোস্তম আলী সব সময় আমাদের সাথে সবজি চাষ নিয়ে তদারকি করে থাকেন।সবজির ক্ষেত দেখতে আসেন।কোন সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক সমাধানের ব্যবস্থাও করে থাকেন।
কৃষক মোশাররফ হোসেন বলেন, এখন উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে সবজি চাষ করি উৎপাদন বেশ ভালো। নেট হাউজ পদ্ধতি এবং জৈব বালাই ব্যবহার করে বিষ মুক্ত সবজি চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে ।
তিনি বলেন,নেট হাউস ও জৈব বালাই ব্যবহার করে আগাম সবজি চাষ করে ভালো লাভবান হয়েছি। কপি তুলা শেষ হয়েছে,এখন বেগুন,লাল শাক লাগিয়েছি।
সানোড়া এলাকার একাধিক কৃষকদের কাছ থেকে জানা যায়, নেট হাউজ পদ্ধতি এবং জৈব বালাই ব্যবহার করে বিষ মুক্ত সবজি চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রথম সানোড়া ইউনিয়ন এই পদ্ধতিতে বিষ মুক্ত সবজি চাষ শুরু করছে।
প্রতি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ঢাকার খামার বাড়ি কৃষকের বাজার থেকে গাড়ি আসে সবজি নেওয়ার জন্য। দেলোয়ার হোসেন নামে এক ভদ্রলোক নিয়মিত গাড়ি নিয়ে আমাদের সকল সবজি নিয়ে যায়। সবজি বিক্রির জন্য কোন চিন্তা করতে হয় না। আবার ৭ দিন পর পর সবজির মান ঠিক আছে কি না তা যাচাই করার জন্য সবজি ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়।
খামার বাড়ি মানিক মিয়া এভিনিউতে কৃষকের বাজার নামে একটি বাজারে সকল সবজি বিক্রি হয়ে যায়। আবার আমাদের কোন গাড়ি ভাড়া দিতে হয় না।
তবে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রথম বারের মতো ধামরাই উপজেলার সানোড়া ইউনিয়ন এ নেট হাউজ ও জৈব বালাই ব্যবহার করে বিষ মুক্ত সবজি চাষ শুরু করা হয়েছে। এতে কৃষকদের সবজি পরিবহনের জন্য প্রতি ২৫ জনের সমন্বয়ে গঠিত একটি গ্রুপকে একটি করে মোট ২০ টি উন্নত মানের ভ্যান গাড়ি দেওয়া হয়েছে।
ধামরাইয়ের সোমভাগ ইউনিয়নের ডাউটিয়া এলাকায় চেয়ারম্যানের আড়তে বিষ মুক্ত সবজি বিক্রি করা হয়। চেয়ারম্যান আজাহার আলী বিষ মুক্ত সবজি বিক্রি করার জন্য তার আড়তে দুটি দোকান দিয়েছে।ঢাকা থেকে অনেক সবজি ব্যাপারিরা আসে চেয়ারম্যান আড়ত হতে সবজি ক্রয় করে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকে। বিষ মুক্ত সবজির চাহিদা অনেক বেশি। এই সবজির গুনগত মান অনেক ভালো।কৃষকদের চিন্তায় থাকতে হয় না। সবজি বাজারে বিক্রি হবে কি হবে না এ নিয়ে ।
নেট হাউস পদ্ধতি এবং জৈব বালাই ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন ধামরাইতে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আরো জানা যায়, ৫ শত জন কৃষক-কৃষাণী পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে নিরাপদ সবজি উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় আইপিএম মডেল ইউনিয়নের ৫ শত জন কৃষক-কৃষাণীর মাধ্যমে বিষ মুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে।
এখানে লাল শাক,মূলা শাক,টমেটো, ফুল কপি, বাধা কপি,মরিচ,বেগুন,স্কোয়াশ, চিচিঙ্গা, লাউ,মিষ্টি কুমড়া,ধুন্দুল, ঝিঙা, শসা প্রভৃতি সবচির বীজ,জৈব সার,জৈব বালাই নাশক,নেট হাউজ এবং জৈব বালাই ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করাহচ্ছে।
প্রত্যেক কৃষক ২০ শতাংশ জমিতে সবজি চাষ করতে যা লাগে কৃষি অফিস তা সরবরাহ করছে।২০ টি গ্রুপকে ২০ টি উন্নত মানের ভ্যান দেওয়া হয়েছে। সাথে পরাগায়নের জন্য মৌ বক্স স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সোমভাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আজাহার আলী বলেন, আমার আড়তে দুটি দোকান রয়েছে যেখানে বিষ মুক্ত সবজি বিক্রি করা
হয়। কোন কৃষক তার সবজি নিয়ে ফিরে যায় না।চাহিদাও প্রচুর।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আরিফুল হাসান বলেন, ঢাকার তাজিজ অনলাইন মার্কেটের মাধ্যমে এবং মানিক মিয়া এভিনিউতে ফার্মারস মার্কেটে সকল নিরাপদ সবজি বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপদ সবজি উৎপাদনের বিশাল অংশই ধামরাই উপজেলার সানোড়া ইউনিয়ন এর কৃষকরা জোগান দিতে পারবে।
এছাড়াও উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়ন এ আজাহার চেয়ারম্যান এর মার্কেটে সবজি বিক্রির জন্য দুটি দোকান রয়েছে। জৈব পদ্ধতিতে সবজি চাষ করতে সাধারণ জনগণ আগ্রহ প্রকাশ করলে কৃষকরাও ন্যায্য মূল্য পাবে।এতে কৃষকরা নিরাপদ বিষ মুক্ত সবজি চাষে আগ্রহ প্রকাশ করবে।
সময় জার্নাল/এমআই