ড. খন্দকার মেহেদী আকরাম :
যানবাহনে দুর্ঘটনা পৃথিবীর সব দেশেই কম বেশী ঘটে থাকে। উন্নত বিশ্বেও ঘটে। তবে বাংলাদেশে যেসব দুর্ঘটনা ঘটে তার পুরোটাই অসাবধানতা এবং নিয়ম না মানার কারণে ঘটে। আর প্রতিবার এর শিকার হয় সাধারণ মানুষগুলো। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।
লঞ্চের অগ্নিকান্ডে জীবন গেলে প্রায় ৪০ জন নিরিহ মানুষের। আরো শতখানেক মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়ে হয়তো কোন রকমে বেঁচে আছে। জীবনের বাকিটা সময় হয়ত বেঁচে থাকবে বিকলাঙ্গ হয়ে।
প্রাথমিক খবরে জানা গেল যে লঞ্চটির ফিটনেস রয়েছে ২০২২ পর্যন্ত। কিন্তু নিউজ পেপারে ঘটনার বিবরণ পড়ে বোঝা গেল লঞ্চেটিতে সেইফটি লেভেল ছিল শূন্যের ঘরে! লঞ্চটি কোনভাবেই নিরাপদ ছিল না।
লঞ্চের নিচতলার ইন্জিন রুমে রাখা ছিল প্রায় পনেরো বিশ ব্যারেল ডিজেল। যেখানে ইন্জিন চলে সেই একই ঘরে কিভাবে এত পরিমান অত্যন্ত দাহ্য ডিজেল রাখা হয়? এভাবেই কি অন্যসব লঞ্চে ডিজেল রাখা হচ্ছে? তারপর ইন্জিন রুমের পাশেই ছিল কিচেন, যেখানে ব্যাবহার করা হচ্ছিল সিলিন্ডার গ্যাস। ঐ গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণেই আগুনের সূত্রপাত।
এতবড় একটি লঞ্চের পাশাপাশি দুইটি রুমে ইন্জিন, ২০ ব্যারেল ডিজেল আর অনিরাপদ গ্যাস সিলিন্ডার, আগুন তো লাগবেই।
এখন কথা হচ্ছে সেইফটি অফিসার কিভাবে এই ধরনের অবকাঠামোগত ব্যবস্থার ছাড়পত্র দেয়? পৃথিবীর কোন দেশেই এই ধরনের ব্যবস্থাকে সেইফ বা নিরাপদ বলবে না। এর ফলে কোন ছাড়পত্রও দিবে না।
তেলের ব্যারেলগুলো খুব সহজেই রাখা যেত কিচেন থেকে দূরে একটি ফায়ারপ্রুফ কক্ষে।
আগুন নিচতলা থেকে ছড়িয়ে পরে দ্বিতীয় তলায়। সেখানকার চায়ের দোকানে ছিল আরেকটি গ্যাস সিলিন্ডার। সেটারও বিস্ফোরণ ঘটে এবং দ্বিতীয় তলায়ও আগুন ছড়িয়ে পরে। আর এই আগুন নিয়ে লঞ্চটি চলতে থাকে। কি বিভৎস এক অবস্থা। লঞ্চে কি আদৌ কোন ফায়ার এলার্ম ছিল? ইন্জিরুমে থাকার কথা বেশ কয়েকটি অগ্নিনির্বাপক গ্যাস সিলিন্ডার। সেগুলোর কি কোন ব্যবহার হয়েছে? লঞ্চের ইন্জিন রুমের দায়িত্বে থাকা লোকটির কি যথাযথ অগ্নিনির্বাপনের ট্রেইনিং দেয়া আছে?
আমার ধারণা এগুলোর কিছুই নেই। অন্যান্য লঞ্চেও হয়তো একই অবস্থা। তারপরও দেখা যাবে সব লঞ্চেরই হয়তো ফিটনেস রয়েছে! এ ধরনের ফিটনেসের কোন ভ্যালু নেই। যেখানে সেইফটি কনসার্ন রয়েছে সেখানে কোন ভাবেই বলা যাবে না যে যানটি ফিট।
গতকাল লঞ্চে যে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলো তা কোন ভাবে নিছক দুর্ঘটনা নয়। এটা অব্যাবস্থাপনার এক চেইন অফ ইভেন্ট। এগুলোর সুরাহা না করলে এই রকম ঘটনা ভবিষ্যতে আরো ঘটবে। মাঝখান থেকে জীবন যাবে নিরিহ মানুষের।
লেখক : যুক্তরাজ্য প্রবাসী জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।