সর্বশেষ সংবাদ
প্রতিষ্ঠার ৪৬ বছর:
ডা. আসিফ ইশতিয়াক :
সেদিন এক আপুর লেখায় পড়লাম মেয়েদের স্যাক্রিফাইসের গল্প। তার লেখা আর তাতে করা অধিকাংশ কমেন্টগুলো পড়ে বুঝলাম যে এই দেশে স্যাক্রিফাইসটা শুধু মেয়েরাই করে। আসলে এদেশে ছেলেদের মত সুখে কেউ নেই। ছেলেদের জন্ম থেকেই শুধু আনন্দ আর আনন্দ।
এদেশে বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা ছেলের আনন্দের সীমা নেই৷ জন্মের পরই তাকে শিখিয়ে দেওয়া হয় ছেলেদের কোন অভিযোগ থাকতে নেই। একটা পরিবারে ভাই বোন থাকলে ছোট থেকেই সে বুঝে যায় তার কখনো অভিযোগ থাকতে পারেনা। উৎসব অনুষ্ঠানে বোনের জন্য যখন হাজার টাকার জামা জুতা কসমেটিক্স বরাদ্দ থাকে ভাইটির জন্য হয়ত শুধুই কয়েকশ টাকার পাঞ্জাবি। ৯৫% ছেলেই এটা হাসিমুখেই মেনে নেয়। এটাকে কিন্তু সমাজে স্যাক্রিফাইস হিসেবে ধরাই হয় না। কারণ ছেলেদের কখনো অভিযোগ করতে নেই।
একটা ছেলে যখন স্কুল কলেজে পড়ে তখন তার কৈশোরের খামখেয়ালিকে সমাজে সবাই তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখে৷ এমনকি হরমোনের পরিবর্তনের জন্য তার কন্ঠের চেঞ্জও মানুষের হাসি ঠাট্টার বিষয়। ছেলেটার কিন্তু অভিমান করারও সুযোগ নেই৷ কারণ সে জানে তার অভিমান করতে নেই।
এরপর বাড়ি ছেলে দুরদুরান্তের বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছেলেরা যখন পড়তে যায় তখন তার জন্য অপেক্ষা করে হলের বড়ভাইদের শাসন। রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিপীড়নের ভয় তার নিত্য সংগী। হলের গণরুমে থেকে ছাড়পোকার কামড় খেয়ে ছেলেটা নিজেকে বলতে থাকে আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারও মাঝে মাঝে ভালমন্দ কিছু খাওয়ার ইচ্ছা হয়। কিন্তু বাসা থেকে টাকা চাইতে পারে না সে। কারণ সে জানে সে ছেলে। তাকে আয় করতে হবে। বাড়ি থেকে মাসবরাদ্দের অতিরিক্ত টাকা নেওয়া তার সাজে না। সকালে কলা বনরুটি খেতে খেতে তার পেটে বনরুটির একটা আলাদা মিউকাস লেয়ার তৈরী হয়৷ মাঝে মাঝে টিউশনি দুই একটা জোটে। অনেকটা পথ হলেও সে হেটেই যায়। হাটতে হাটতে ক্লান্ত হলে সে নিজেকে স্বান্তনা দেয়, জ্যামের রাস্তায় রিকশার চেয়ে হাটাই ভাল। হাটতে হাটতে সে বলে আর মাত্র কয়েকটা দিন। তবুও তার অভিযোগ থাকে না। সে জানে অভিযোগ করা যাবে না। ছেলেদের কষ্ট পেতে নেই।
পাশ করার পরও তার শান্তি নেই৷ চাকরি না পেলে তার মুখ দেখানো বাড়ন। যতদিন চাকরি না হচ্ছে তার বাড়ি ফেরা নিষেধ। যখন তার চাকরি হয় না তখন বাড়িতে মা বাবার কাছেও সে অপদার্থ ছাড়া আর কিছুই না। সমাজে সে তখন হাসি ঠাট্টার একটা টপিক মাত্র। কোন পছন্দের মানুষ যদি থেকেও থাকে সে কথা বলা তার সাজে না। কারণ সে ছেলে। বেকার অবস্থায় কাউকে বিয়ে করতে চাওয়া তার জন্য হারাম। তারপরও সে মানিয়ে নেয়। বাসে ঝুলে ঝুলে রোদে পুড়ে ঘামে জবজবে হয়ে তার মনেই থাকে না কোনদিন তার কোন শখ আহ্লাদ ছিল। সে কষ্ট পায় না। কারণ সে জানে ছেলেদের কষ্ট পেতে নেই৷
একদিন এই অকালকুস্মান্ডরা চাকরি পায়৷ সেদিন সে ব্যাগ গুছায়। কিন্তু এতদিন বাড়ি যাওয়ার জন্য আকুপাকু করা ছেলেটার এই মেস ছেড়ে যেতে কেমন কেমন লাগে৷ সে খেয়াল করে ছোট্টকালে যে ঘর ছেড়ে এসেছে সেই ঘরের জন্য আগের মত সেই টানটা তার আসে না। তবু তাকে যেতে হয়। কারণ সে জানে সে ছেলে তার দুঃখবিলাসী হওয়া সাজে না। তারপর তার ঘর সংসার হয়। মাঝে মাঝে তার ইচ্ছে হয় নিজের জন্য কিছু কিনি। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবে নাহ থাক। এই টাকাটা খরচ না করে ডিপিএস করি। ভবিষ্যতের জন্য কিছু জমাই। তার আয়ে সবাইকে খুশি করা হয়ে উঠে না তার। তাই সে ভাল স্বামী হতে পারে না ভাল বাবা হতে পারে না এমনকি বাবা-মায়ের কাছে ভাল ছেলেও হতে পারে না। এভাবেই তার জীবন যায়। সে তো জানেই শখ আহ্লাদ এসব ছেলেদের থাকতে নেই। এ নিয়ে কিছু বলাও নিষেধ তার। কারণ ছেলেদের কোন অভিযোগ থাকতে নেই। তবুও এদেশের ছেলেদের কোন স্যাক্রিফাইস নেই। সব স্যাক্রিফাইস শুধু মেয়েরাই করে৷ এদেশের ছেলেদের খালি সুখ আর সুখ।
লেখক : এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)।
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল