কালের ঘড়িটা
এটা হতে পারে সময়ের কোনো গল্প,
রোজ হেঁকে যায় কালের ঘড়িটা সময় যে বড়ো অল্প।
ছোট খাটো কাজ ফেলে রেখে ভাবি কালকেই করে নেবো,
আজকে না হয় আলস্যে যাক, শুয়ে বসে পা দোলাবো।
ভোরের আযান, পাখিদের গান, প্রভাতের রাঙা রবি,
সবুজের পরে রুপালী শিশির, কতো জীবন্ত ছবি।
একবার যদি দেখে নিতে পারি, একবার যদি দেখি,
ভোরের প্রহরে আলস্যে ঘুম তক্ষুণি হবে মেকি।
আহারে পরান, আয়েশি গড়ন, দেহটাকে জুড়ে বাঁচে,
গোটা দুনিয়াটা রসাতলে যাক, সে শুধু আরামে আছে।
সকালের ঘুম মধ্যদুপুরে আড়মোড়া ভেঙে জাগে,
বাইরে তখন ঝাঁঝালো রৌদ্রে সূর্য জ্বলছে রাগে।
একলাফ দিয়ে কালের ঘড়িটা সকাল পেরিয়ে যায়,
সকালের সাথে জীবনের স্রোতে, ছেলেবেলাও হারায়।
একটা সকালে কতো চাষি মাঠে সোনার ফসল তোলে,
একটা সকালে কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি কাজ খোলে।
নবীন চাষি শক্ত দু'হাতে মাটি খুঁড়ে তোলে সোনা,
তাদের এসব উদ্যোম গাঁথা সময়ের গায়ে বোনা।
সকালের রঙে পরত চড়িয়ে ঝকঝকে হয় আলো,
দুপুরটা বলে, গা জ্বলানো রোদে সূর্য আগুন ঢালো।
গাছের ছায়ায়, আয়েশি মায়ায় ভাতঘুম দেয় দেহ,
হুট করে বাড়ে কালের বয়স, আঁধারে ঘনায় গেহ।
যৌবন থাকে মৌবনে বুদ, থাকে সে ভাবের ঘোরে,
উদ্যোমী মন, জাগ্রত প্রাণ সবই থাকে আধা মরে।
মনের খায়েশ, ভোগের পায়েস পাওয়া যায় সহজাত,
উল্লাসে মোড়া জীবনের ভীড়ে কাল হয়ে যায় গত।
দিনটা ফুরোলে সূর্যের তেজ্ব নিভে আসে যেন মরে,
কালের ঘড়িটা ক্ষয় হয়ে আসে সারাদিন পার করে।
দেহটা তখন রোগে-শোকে ভরা, দেহখানা বড়ো ক্লান্ত,
নওজোয়ানের তকমাটা মুছে হানা দেয় প্রৌঢ়ত্ব।
কারও কাছে থাকে সম্পদ বাকি, কারও কাছে থাকে কথা,
এইবেলা বসে ভেবে নাও তুমি, কাকে দিলে কতো ব্যাথা।
দেনাপাওনার হিসেব নিকেশ যতটুকু থাকে বাকি,
এইবেলা বসে মেলাতেই হবে যেখানে যা আছে ফাঁকি।
আহারে জীবন! বড়ো অকরুণ সময়ের হাতে বন্দী,
কালের স্রোতে মুছে যায় নাম, কলাকৌশল , ফন্দি।
জীবন সূর্য ডুব দেয় যদি সময় করে না ক্ষমা,
যতই তুমি প্রচন্ড হও, যত হও মনোরমা।
সময়ের ঘড়ি থামবার আগে ক্ষমা চাও একবার,
যার কাছে যত বেদনা রেখেছো সব করে দাও পার।
মানুষের দেনা শোধ করে দিয়ে রবের দুয়ারে এসো,
রবের ক্ষমাই শেষ সম্বল, তাঁরই আশ্রয়ে বসো।
তারপর যদি কালের ঘড়িটা টুপ করে যায় থেমে,
চিন্তা কিসের করুণাময়ের মমতা আসবে নেমে।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
২৭ ডিসেম্বর ২০২১।