সিরাজাম মুনিরা, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ, ৩৭/বি ব্যাচ
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
ঘড়িতে সময় ৫ টা বেজে ৩০ মিনিট পশ্চিম আকাশে রক্তিম সূর্য অস্ত গিয়ে বিকেল গড়িয়ে সন্ধা নেমে চারিদিক অন্ধকারে নিমজ্জিত। পরক্ষনেই চাঁদের ঝলমলে আলোতে আবার চারিদিক আলোকিত হয়ে উঠলো।বন্ধুদের বিকেলের আড্ডা এখনো চলছে মাঝখানে কিছু বন্ধু নামাজের বিরতি নিয়েছে আর বাকিদের আড্ডা ক্রমাগত চলছে।
কখনো গল্প,আবার গানের আসরে সময় গুলো পেরিয়ে যাচ্ছে।সিনিয়র আপু /ভাইয়াদের সাথে গল্প,পরামর্শ এই বিষয়টিও দারুণ ভাবে মনকে নাড়া দেয়।সন্ধার দৃশ্যটা এতোই সুন্দর যে অপলক দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে।ঝি ঝি পোকার ডাক,নানা রঙ্গের ফুলের বাহার,বিশ্ববিদ্যালয় মানেই সুন্দর একটি ক্যাম্পাস।বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় প্রবেশ করতেই রাস্তার দু-পাশ দিয়ে নারকেল গাছ,বাগানে নানা রঙ্গের ফুলের সুন্দর্য,ক্যাম্পাস প্রাঙ্গনের সোডিয়ামের আলোর সাথে স্বপ্নগুলোকে রঙ্গিন করে জাগিয়ে তোলার আহ্বান। এসব যেনো এক নতুন প্রাণের সঞ্চার করে।ক্যাম্পাস আসলে এক ভালোবাসা ও সাধনার নাম।
প্রথম যেদিন ক্যাম্পাসে পা রেখেছিলাম, সেদিন মনের ভিতরে কিছুটা অদৃশ্য ভয় কাজ করেছিলো।শিক্ষক, সহপাঠীরা কেমন হবে এসব নিয়ে নানা রকম ভাবনা কাজ করছিলো।কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি পথ আমার মনের সাথে সম্পৃক্ত। সময়ের ব্যবধানে ক্যাম্পাসের স্নেহ সুলভ শিক্ষক/শিক্ষিকা,বন্ধু/বান্ধবী, রাস্তাঘাট,জামাল মামার চায়ের দোকান এসবকিছুর প্রতি মায়া জন্ম নিয়েছে।কাছের কিছু প্রিয় বন্ধু,বান্ধবী পেয়েছি। সিনিয়রদের সঙ্গে গল্প করা। বন্ধুরা মিলে ক্লাস করা। এক সঙ্গে ভার্সিটির গাড়িতে বাসায় যাওয়া। কাছের বন্ধু মন খারাপ করে বসে থাকলে তাকে হাসি মুখে ফিরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা। ক্যাম্পাসে বসে বন্ধুদের জন্মদিন পালন করা সবকিছুই ভালোবাসায় আবদ্ধময় সুন্দর পবিত্র সর্ম্পক।
মনে পড়ে ক্যাম্পাসে ফেলে আসা দিনগুলোকে। সর্বনাশা করোনার কারনে দীর্ঘদিন আমাদের অনলাইন এ ক্লাস করার যে তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছিলো তা কাটিয়ে আজ আবার প্রিয় ক্যাম্পাস মুখরিত হয়েছে শিক্ষার্থীদের পদচারণায়। শিক্ত হয়েছে শিক্ষকদের স্নেহ,মমতায়। ক্লাসরুম গুলো যেন আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে।সুস্থ এক পরিবেশে স্বপ্নের ক্যাম্পাসে আবার প্রাণ ফিরে এসেছে এটাই সব সময় কামনা করেছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ তাই হয়েছে।
এখন আমরা সবাই মিলে আবার ক্যাম্পাসে বিচরণ করতে পারি। কি একটা আনন্দ বলে বুঝাতে পারব না । ক্যাম্পাসের শিক্ষকরা খুবই বন্ধুসুলভ। আমার কাছে মনে হয় শিক্ষা জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শিক্ষকদের সামান্য ভালো ব্যবহার, বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ, অনুপ্রেরণা , স্নেহ ,মায়া-মমতা ও ভালোবাসা। যার দ্বারা শিক্ষার্থীরা তাদের মনের কোণে এক অদম্য সাহস,মনোবল,ভালোবাসা নিয়ে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবার শক্তি সঞ্চার করতে সক্ষম হয়।পড়ালেখায় আনন্দ খুঁজে পায়,তাদের শাসনে মাথাটাকে নিচু করে রেখে ভুল গুলো সুধরে নিয়ে মনের ভিতরে আবার সত্যিকার মানুষ হবার সংকল্প ও দৃঢ় প্রত্যয় জেগে ওঠে।
ক্যাম্পাসে যখনি কোনো উনুষ্ঠান হবার সিদ্ধান্ত চলে তখন থেকেই শিক্ষার্থীদের মনে কত-শত পরিকল্পনা নিজেদের কে কতো সুন্দর করে সাজাতে পারে তা নিয়ে ব্যাস্ততার শেষ নেই!এই দৃশ্যটাও এক অদ্ভুত ভালো লাগার সঞ্চার করে।এই অনুভূতির স্বাদ কখনোই নেওয়া হতনা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না হতে পারতাম।
ছাত্র জীবন অসাধারণ হয়ে উঠেছে কষ্ট,ত্যাগ,সাধনা,পরিশ্রম,নানামুখি জ্ঞান অর্জনের মধ্য দিয়ে। ছাত্র জীবনের এ আনন্দ,ত্যাগ তিতিক্ষা প্রতিটি মানুষকে তার নিজেকে গড়ে তোলার এবং অদম্য প্রচেষ্টায় এগিয়ে গিয়ে একটা সুন্দর আগামী গড়ে তোলার লক্ষ্যে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে।তাদেরকে এ বিচক্ষণ, বুদ্ধিমত্বা, ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন করে গড়ে তুলতে প্রিয় ক্যাম্পাস,শিক্ষক, প্রকৃতি সবকিছুরই ভূমিকা অপরিসীম। এ ক্যাম্পাস এবং শিক্ষকদের ভালোবাসা কখনো শেষ হবার নয়।
সারাদেশে আমাদের মতোই ক্যাম্পাস ভক্ত শত সহস্র শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসকে ঘিরে যত আবেগ, ভালোবাসা ,স্বপ্ন সবকিছুরই জয় হোক। মহান রবের কাছে শুকরিয়া আদায় করছি এমন একটা ক্যাম্পাস, বন্ধু-বান্ধব এবং শিক্ষকদেরকে পেয়ে। ভালো থাকুক সমস্ত বন্ধু-বান্ধবী ও শিক্ষকরা ভালো থাকুক আমাদের সবার প্রাণপ্রিয় স্বপ্নের ক্যাম্পাস,ভালোবাসার ক্যাম্পাস।
ভালো থাকুক সবকিছুই।
সময় জার্নাল/এলআর