গোলাম আজম খান, কক্সবাজার : চারপাশে কেবলই আগুনে পোড়া ধ্বংসস্তূপ। এর মধ্যেই ঘর হারা মানুষগুলোর জন্য দ্রুত চলছে তাঁবু নির্মাণের কাজ। ইতোমধ্যে অনেকে তাঁবু পেয়েছেন আবার এখনো অনেকে পাননি। অনেকেই বলছেন ক্যাম্পে খাবার, পানি ও থাকার জায়গার সংকটে তাদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
জহুরা খাতুন নামের এক রোহিঙ্গা নারী বলছেন, আগুনে তো সব কেড়ে নিয়েছেই, দিয়ে গেছে অমানবিক জীবন। প্রচণ্ড গরম আর তীব্র রোদের মধ্যেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে হচ্ছে। চাল আছে কিন্তু রান্না করার মতো পানি নেই। গোসলখালা আর ল্যাট্রিনগুলো পুড়ে যাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। চুলা, হাঁড়িপাতিল, চাল ডাল, কাপড় চোপড়, সব শেষ, এখন আমাদের কিছুই নাই।
এদিকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় কিংবা নিজ উদ্যোগে অনেকে নিজেদের থাকার জায়গা কাপড় বা বড় পলিথিন দিয়ে চারপাশ বেঁধে মোটামুটি থাকার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেছেন।
অগ্নিকাণ্ডের পরপরই দেশি-বিদেশি এনজিওগুলো সর্বস্ব হারানো রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্নভাবে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা এতই বেশি যে, সবাইকে একসঙ্গে সহযোগিতা করা সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুত চেষ্টা করছে সরকার ও দেশি-বিদেশি সংস্থার সহযোগিতায় দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর। উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংসস্তূপ দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। দেয়া হচ্ছে সব ধরনের সহায়তা। আর দ্রুত তাঁবুতে ঠাঁই হচ্ছে আগুনে ঘরহারা রোহিঙ্গাদের। অগ্নিকাণ্ডের পর বড় সংকট ছিল খাদ্য, খাবার পানি, চিকিৎসা, জ্বালানি ও শিশুদের খাদ্য। দূর হচ্ছে এসব সংকটও।
কক্সবাজার ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কমিশনার শাহ্ রেজওয়ান হায়াত বলেন, 'বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংস্থা আমাদের সাহায্য করছে। সবার সহযোগিতায় দ্রুত সংকট কেটে যাবে। ত্রাণ সংস্থার কর্মী ও রোহিঙ্গারা মিলে সেখানে আবার ঘর তৈরি করছেন৷
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্ব হারানো রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয় ১০ লাখ টাকা ও ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি প্রায় ১ হাজার তাঁবু দিয়ে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা আইওএম রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের ঘর নির্মাণে উপকরণ দিচ্ছে।
ঘর পুনর্নির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের জরুরি সহায়তা দিতে ১১৯ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘের হিউম্যানিটারিয়ান প্রধান মার্ক লকক৷
এরইমধ্যে গত বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) অস্ট্রেলিয়া সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেরিস পেইন এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শোক প্রকাশ ও ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি সহায়তা হিসাবে ১ কোটি অস্ট্রেলীয় ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারে রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় গোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা বজায় রাখতে অস্ট্রেলিয়া প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই বিধ্বংসী ঘটনার আলোকে, আমি আজ আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আমাদের বিদ্যমান মানবিক সহায়তার অতিরিক্ত ১০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার জরুরি সহায়তা ঘোষণা করছি'।
তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত এই সহায়তা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি) এবং জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) মাধ্যমে খরচ করা হবে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ও তার অংশীদার সংস্থাগুলো ৪৫ হাজার বাস্তুচ্যুত ও ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাকে খিচুড়ি বিতরণ করছে।
ডব্লিউএফপি কক্সবাজারের সিনিয়র ইমার্জেন্সি কো–অর্ডিনেটর শিলা গ্রডেম বলেন, ‘আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্যসহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।’
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, ৬২ হাজার রোহিঙ্গাকে দৈনিক দুই বেলা করে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
গত সোমবার (২২ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে বালুখালী ৮-ডব্লিউ নম্বর আশ্রয় শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আগুনের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরে তা পাশের ৮, ৯, ১০ ও ১১ নম্বর শিবিরে ছড়িয়ে পড়ে। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু, ৫৬০ জনের আহত, ৪০০ জনের নিখোঁজ এবং কমপক্ষে ১০ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র পুড়ে ছাই হয়েছে। প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
সময় জার্নাল/এমআই