শাহনেওয়াজ রকি : সাধারণত আমি বাইসাইকেল এবং গাড়ি, দুটো বাহনেই অফিসে যাতায়াত করি। অফিসের বাইরে কাজ না থাকলে সাইকেল নিয়েই যাই, আর বাইরে শ্যুটিং বা ইন্টারভিউ থাকলে গাড়ি।
সাইকেল আর গাড়িতে করে যাতায়াতের সাথে সাথে বদলে যায় বাসা আর অফিস বিল্ডিংয়ের সিকিউরিটির আচরণ।
সাইকেল নিয়ে যে দিন বের হই, বাসার গার্ড খুব একটা পাত্তা দেয় না, মাঝে মাঝে নিজে গেট খুলে আবার নিজেই বন্ধ করা লাগে, গার্ড রেস্টে থাকে।
অফিস বিল্ডিংয়ের সিকিউরিটির' খুব তাচ্ছিল্যের সুরে পার্কিংয়ের জায়গা দেখিয়ে দিবে, একেক বার, একেক জায়গায় রাখতে দিবে। মানে অনেকটা বানে ভেসে আসা খড়কুটোর মতো।
সে একই আমি যেদিন গাড়ি নিয়ে যাই, সেদিন বাসার গার্ড সমীহ করে সালাম দিবে, নিজে দৌড়ে এসে গেট খুলবে, আর অফিসের গার্ডের স্যালুট!
বুঝি, এসব গাড়িকে স্যালুট দেয় আমাকে না।
একই অবস্থা সব খানেই, বাজার করতে যাবেন?
গাড়ি থেকে নামলে দোকানদার সমীহ করবে, স্যার ডাকবে।
আর রিকশা থেকে নামলে, মামা।
রাস্তায় চলবেন একই অবস্থা, দামী পশ গাড়ি যত সহজে চেকপোস্ট পার হয়, কম দামী ভাঙাচোরা গাড়ি কিন্তু তত সহজে পার পায় না।
এয়ারপোর্টেও তাই, একই বিমানের যাত্রী হয়েও আপনি কিন্তু লম্বা লাইনে দাঁড়াবেন, জুতা স্যান্ডেল, বেল্ট ঘড়ি সবই খুলে প্রায় দিগম্বর হয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনি পার হতে হবে, হবে, ভিআইপি হলে বিনা বাধায় পুল-সিরাত পার।
ভালো কোন স্কুলে বাচ্চাকে ভর্তি করিয়েছেন, সাথে নিজেদের স্ট্যাটাস বাড়াতে একটা গাড়ি লাগবে।
কারণ অন্য অভিভাবকদের কাছে স্কুলের দারোয়ানের কাছ থেকে সমীহ আদায় করতে গাড়ি দরকার, জৌলুস দরকার।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর হলো।
এতো বছর পরে এসেও, এখনো সব খানে, প্রায় সব খানেই আপনাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হবে, আপনি দুর্বল, আপনি ভিআইপি না, আপনি ক্ষমতাবান না।
আপনার টাকা নেই, গাড়ি নেই, সম্পদ নেই।
সুতরাং একই দেশের নাগরিক হয়ে, একই দেশের আলো বাতাসে বেড়ে উঠেও আমি এখনো নিচু জাত।
কোথাও মানুষ হিসেবে আমাকে মূল্যায়ন হয় না, আমাকে মাপা হয় আমার গাড়ি বাড়ি আর ক্ষমতা দিয়ে।
ফলে যা হবার তাই, আমরাও ছুটছি সে পথে।
এই- আমি কে চিনিস!! এমন একটা হুঙ্কার দেবার মতো পরিচিতি অর্জনে।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমার একটাই চাওয়া-
এই আমি কে চিনিস!!
এই পরিচয় নয়, আমি মানুষ, খুব সাধারণ ছা-পোষা একজন মানুষ। এই পরিচয়ে নির্বিঘ্নে চলতে চাই।
লেখক : গণমাধ্যম কর্মী