বুধবার, ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০২২
আবদুল্যাহ আল মাসুদ :
ডনবাস নিয়ে রুশ কর্তা ভ্লাদিমির পুতিন সর্বশেষ যে ঘোষণা দিয়েছেন তা কেবলই আজকের প্রেক্ষাপট নয়, গত ৮ বছর ধরে রক্ত ঝরছে সেখানে। ভালো ছিলেন না ডনবাসবাসীরা, এখন সংকট আরও প্রকট হয়েছে। এবার হয়তো সংঘর্ষ কমবে না হয় বাড়ার চূড়ায় পৌঁছাবে।
ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের (ডনবাসে) দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক কে স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। সংঘর্ষময় এ অঞ্চলে রুশ সেনারা শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি। পুতিনের এমন ঘোষণায় নড়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা। যদিও এ অঞ্চলটিতে রাশিয়া বহু আগে থেকেই আছে, সেখানে ইউক্রেন সরকারের প্রভাব তেমন ছিলো না বললেই চলে। স্থানীয় বিদ্রোহীরা ইউক্রেনীয় সেনাদের মোকাবেলা করে আসছে, বিদ্রোহীদের প্রবল শক্তির পেছনে রুশ সমর্থন নিয়ামক হিসেবে কাজ করে আসছে। রুশ প্রেসিডেন্ট অঞ্চলটিকে স্বাধীন ঘোষণা দেয়ার দু'দিন আগে সেখানকার বিদ্রোহীরা ইউক্রেন সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য নিজেদের লোকদের তৈরী থাকার কথা প্রচার করেছে।
ইউক্রেন এ অঞ্চলে অনেকটা বেকায়দায়, বিদ্রোহীদের রাশিয়ার প্রবল সমর্থনে ডনবাস ইউক্রেনের আওতার বাহিরে যাচ্ছিলও ক্রমেই।
বর্তমান বিশ্বের যেসব অঞ্চলে মানবিক সংকট চলছে 'ডনবাস' তার মধ্যে অন্যতম। ডনবাস অনেকের কাছে অপরিচিত মনে হতে পারে। তবে উত্তেজনা, মৃতের সংখ্যা, বাস্তুচ্যুত মানুষ আর মানবিক সংকটের নিরিখে এখানে চলমান ভয়াবহতা এ অঞ্চল সম্পর্কে না জানা যে কেউকে অবাক করতে পারে। ডনবাসকে নিয়ে বহুদিন ধরেই চলছে জটিল আন্তর্জাতিক রাজনীতি। বিভিন্ন কারণে এ অঞ্চলের যেমন রয়েছে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত গুরুত্ব। তেমনি একে ঘিরে তৈরী হয়েছে বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্র সমূহের মধ্যকার এক প্রকার স্নায়ু যুদ্ধ।
ক্রিমিয়া সংকট নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের মধ্যে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ধারণা করা যায় ঠিক সেরকম কিছুই ঘটতে চলছে ডনবাসে। পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক নিয়ে গঠিত এ অঞ্চলটিতে ইউক্রেনীয় সরকার ও রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যকার সংঘর্ষে ২০১৪ সাল থেকে উত্তাপ বিরাজমান। রাশিয়ার সীমান্তবর্তী ডনবাসের অধিকাংশ মানুষই রুশ সংস্কৃতির ধারক। ভাষা রুশ এবং রাশিয়ায় রয়েছে এদের আত্মীয়স্বজনেরা। এদের অধিকাংশেরই রাশিয়ার সঙ্গে একত্রিত হওয়ার লক্ষ্য এবং ইউক্রেন সরকার কখনোই তা মেনে না নেয়া থেকেই সংকটের শুরু।
২০১৪ থেকে এ পর্যন্ত ১০০০০ এর ও বেশী মানুষ মারা গেছে, বাস্তুচ্যুত প্রায় ১৮ লক্ষ। আন্দোলনরতদের দমনে সেনা ও ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে আসছে ইউক্রেন সরকার। আন্দোলনে বিভিন্নভাবে রাশিয়ার মদদের অভিযোগ থাকলেও তা রাশা স্বীকার করেনি কখনো।
সমগ্র ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের জন্য রাশিয়ার কাছে এটি অতিগুরুত্বপূর্ণ। তা নাহলে পথ তুরস্ক, যা রাশিয়ার জন্য সহজ নয়। এছাড়াও অঞ্চলটিতে প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। রাশিয়া যেমন এটার নিয়ন্ত্রন চাচ্ছে তেমনি যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে কোনভাবেই তা যেন রাশিয়ার হস্তগত না হয়। এজন্য ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেয়ার জন্য চেষ্টা চলছে। ইউক্রেন ন্যাটোভুক্ত হলে রাশিয়া সীমান্তে সেনা মোতায়েন করা হবে।
শক্তিধর রাষ্ট্র সমূহ নিজেদের সুবিধার্থে অপেক্ষাকৃত দূর্বলদের হাতিয়ার করে। ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট কয়েকদিন আগে বলছিলেন পশ্চিমারা এখানে যুদ্ধের কথা বললেও আমাদের সেরকম কোন পরিস্থিতি তৈরী হয়নি, আমরা যুদ্ধ চাই না। আবার, সম্ভাব্য রুশ আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষার কোন সামর্থ্যও নেই ইউক্রেনের। রুশ-মার্কিনীদের স্বার্থের কারণে ইউক্রেনের মত দেশগুলো উভয়মুখী সংকটে পড়ে, সাধারণ ডনবাস বাসীদের দুর্বিষহ জীবনও শেষ হয় না।
ডনবাসের প্রতি সহমর্মিতার জন্য ঢাকাতে কর্মসূচী নেয়া হয়েছিল ২০১৯ -এ। তখন ডনবাস পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল। ঢাকায় কারা এ কর্মসূচি নিয়েছে তা স্পষ্ট নয়। সে সময় শাহবাগে জাদুঘরের সামনে ডনবাসের নিপীড়িত মানুষের স্বাধিকার সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সমাবেশ ঘোষণা করা হয়েছিল। আজ শক্তিধর রাষ্ট্রের কাছে বিশ্ববাসীর চাওয়া তো একটাই; তোমাদের ক্রোধের কারণে বাকিদের নষ্ট করো না, তোমাদের অগ্রসর বুদ্ধিমত্তায় দুনিয়াকে অশান্তির বিষবাষ্পে পরিণত করো না।
- আবদুল্যাহ আল মাসুদ
masud.meazi44@yahoo.com