খালেদ মাহমুদ :
ইউক্রেনে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, রুশ বাহিনীর হামলায় ৪০ জনেরও বেশি ইউক্রেনিয়ান সৈন্য নিহত হয়েছেন। এছাড়া অভিযানের প্রথম ঘণ্টায় ১০ জন বেসামরিক নাগরিকও নিহত হয়েছেন। ইউক্রেনও তার সাধ্যমতো রাশিয়ার হামলার জবাব দিচ্ছে। এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষ নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিবেশী দুই দেশের সামরিক সক্ষমতা কেমন, কার চেয়ে কে এগিয়ে- অনেকের মনে এখন এমন প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন: কার সামরিক শক্তি কত?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষণকারী গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সামরিক শক্তির বিচারে বিশ্বের ১৪০টি দেশের মধ্যে রাশিয়ার অবস্থান দ্বিতীয়। অন্যদিকে, ইউক্রেনের অবস্থান ২২তম।
তাই দুই দেশের মধ্যে সৈন্য সংখ্যা, যুদ্ধবিমান, রণতরী বা সামরিক সরঞ্জামেও ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার মোট সৈন্য সংখ্যা আট লাখ ৫০ হাজার, আর ইউক্রেনের সৈন্য সংখ্যা মাত্র দুই লাখ। তবে উভয় দেশের রিজার্ভ সৈন্য রয়েছে আরও আড়াই লাখ করে। এছাড়া রাশিয়ার আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা আড়াই লাখ, এই সংখ্যা ইউক্রেনের মাত্র ৫০ হাজার।
অন্যদিকে, রাশিয়ার মোট সামরিক বিমান রয়েছে ৪ হাজার ১৭৩টি, যেখানে ইউক্রেনের মাত্র ৩১৮টি। পাশাপাশি রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ৭৭২টি, ইউক্রেনের এই সংখ্যা মাত্র ৬৯টি। এরমধ্যে শুধুমাত্র আক্রমণকারী বিমান রাশিয়ার রয়েছে ৭৩৯টি, ইউক্রেনের মাত্র ২৯টি। রাশিয়ার সামরিক পরিবহন বিমান ৪৪৫টি হলেও ইউক্রেনের পরিবহন বিমান মাত্র ৩২টি। আবার রাশিয়ার মোট হেলিকপ্টার সংখ্যা ১,৫৪৩টি, যেখানে অ্যাটাক হেলিকপ্টারই ৫৪৪টি। অন্যদিকে ইউক্রেনের মোট হেলিকপ্টার রয়েছে ১১২টি যারমধ্যে অ্যাটাক হেলিকপ্টার ৩৪টি।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার বলছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর কাছে এই মুহূর্তে ট্যাংক রয়েছে ১২ হাজার ৪২০টি। অন্যদিকে, ইউক্রেনের ট্যাংকের সংখ্যা ২ হাজার ৫৯৬টি। এছাড়া আমর্ড ভেহিকেল রাশিয়ার ৩০,১২২টি, ইউক্রেনের ১২,৩০৩টি, স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি রাশিয়ার আছে ৬,৫৭৪টি, ইউক্রেনের আছে ১,০৬৭টি। রাশিয়ার মোবাইল রকেট প্রজেক্টর রয়েছে ৩,৩৯১টি, ইউক্রেনের আছে ৪৯০টি।
সামরিক নৌযানের দিক থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছে রাশিয়া। দেশটির সামরিক নৌযান ৬০৫টি থাকলেও ইউক্রেনের রয়েছে মাত্র ৩৮টি। এরমধ্যে রাশিয়ার একটি বিমানবাহী রণতরী থাকলেও ইউক্রেনের এরকম কোনো রণতরী নেই। একইভাবে রাশিয়ার রয়েছে ৭০টি সাবমেরিন, যেখানে ইউক্রেনের কোনো সাবমেরিন নেই। তাছাড়া রাশিয়ার রয়েছে অত্যাধুনিক ১৫টি ডেস্ট্রয়ার, কিন্তু ইউক্রেনের একটি ডেস্ট্রয়ারও নেই। এছাড়া রাশিয়ার রয়েছে ১১টি ফ্রিগেট, যা একটিও নেই ইউক্রেনের। মাইন ওয়ারফেয়ার নৌযান ইউক্রেনের কাছে একটা থাকলেও রাশিয়ার রয়েছে ৪৯টি। রাশিয়ার করভেট সংখ্যা ৮৬টি, যেখানে ইউক্রেনের করভেট মাত্র একটি। রাশিয়ার পেট্রোল ভেসেল আছে ৫৯টি, ইউক্রেনের রয়েছে ১৩টি।
রাশিয়ার ১,২১৮টি বিমান বন্দর রয়েছে। অন্যদিকে ইউক্রেনের বিমানবন্দর সংখ্যা মাত্র ১৮৭টি। এর বাইরে রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র। কিন্তু ইউক্রেনের এ রকম কোনো অস্ত্র নেই। একইসঙ্গে রাশিয়ার কাছে এস-৪০০ নামের অত্যন্ত শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনের কাছে এ ধরনের কোনো কিছু নেই।
সামরিক খাতে ব্যায়েও রাশিয়া অনেক এগিয়ে রয়েছে। দেশটি প্রতিবছর সামরিক খাতে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ব্যয় করে, সেখানে ইউক্রেন মাত্র ১ হাজার ১৮৭ কোটি ডলার ব্যয় করে।
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স-২০২২ অনুযায়ী, বিশ্বে সামরিক সক্ষমতায় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে রাশিয়া, চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন, পাকিস্তান ও ব্রাজিল।
লেখক : অ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর, পলিটিক্যাল সাইন্স, গহিরা ডিগ্রি কলেজ রাউজান, চট্টগ্রাম।