অবসরপ্রাপ্ত
খুব সাধারণ একজন মানুষ,
রোজ ভোর থেকে পার্কের পুকুরপাড়ের একটা বেঞ্চে বসে থাকে।
তার সামনে পুকুরের জলজ আগাছাগুলো বাতাসে দোল খায়,
পানির ওপর ভাসতে থাকে একটা, দুটো, অসংখ্য বুদবুদ,
ছোট ছোট মাছগুলো কূলে এসে সাবানের গন্ধ খোঁজে।
মানুষটা বুদ হয়ে সেসব দেখতে থাকে।
পার্কের খেটে খাওয়া পথশিশুগুলি তাকে ভ্রুক্ষেপ করেনা মোটেই।
রোদের পারদ চড়লেই সে উঠে পড়ে।
একটু পরেই তাকে দেখা যায় বাজারের রাস্তায়,
একথলে আনাজপাতি নিয়ে কুঁজো হয়ে হাঁটছে।
একথলে সদাই-পাতি আর একথলে মাছ,
বড়ো বেছে বেছে নেয়া।
তবুও সে কারও মন যোগাতে পারেনা কখনো,
দিনশেষে তকমাটা লেগেই যায়,
অথর্ব বৃদ্ধ!
দুপুরটা কান-মুখ বুজে সে কাটিয়ে দেয়,
বেলা পড়লেই ফের ছোটা সেই পুকুরের ধারে,
ছোট মাছ, পানির বুদবুদ আর জলজ আগাছার কাছে।
রাতে খাবারের থালা সামনে নিয়ে বসলেই,
পাশের ঘর থেকে ঝনঝন আওয়াজ আসতে থাকে তার কানে,
কারও চাপা মিনতি, কারও বা উগ্র চিৎকার।
অথচ মানুষটি ভাবলেশহীন,
যেন কোনো কিছুই ঘটেনি কোথাও।
ছেলে-বৌয়ের সাজানো সংসারে সে একজন বাড়তি বৈ তো কিছু নয়।
তাই তাকে নিয়ে অশান্তিটাও চিরস্থায়ী, অন্তত আমৃত্যু।
আমি এই সাধারণ মানুষটাকে চিনি,
একটা বেসরকারি অফিসের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা,
যার সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে এই শহরেই একটা বাড়ি
আর একমাত্র পুত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টায়–
থাক সে সব কথা,
এই গল্পগুলো বরাবর একই রকম হয়।
শুধু সাধারণ মানুষগুলোর বেদনা ভুলিয়ে দেয়,
পার্কের পুকুরের জলজ আগাছা, পানির বুদবুদ আর সাবানের গন্ধ খোঁজা ছোট ছোট মাছ।