বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪

বাংলাদেশের অর্থনীতি ও শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতি

মঙ্গলবার, মে ১০, ২০২২
বাংলাদেশের অর্থনীতি ও শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতি

সৈয়দ জামান লিংকন :

আজকেই দেখলাম বাংলাদেশে মাথা পিছু আয় দাড়িয়েছে প্রায় ২.৫ লক্ষ টাকা। আপনার আমার ব্যক্তিগত আয় না বাড়লেও দেশের আয় বেড়ে চলেছে উল্কার গতিতে, এটা অবশ্যই খুব ভাল সংবাদ।

হঠাৎ বাংলাদেশের আয় বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ তিনটি

১। রেমিট্যান্সঃ ২০২০ সালে বাংলাদেশে রেমিটেন্স আসে প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলার। আর এসব রেমিটেন্স কারা পাঠাচ্ছে জানেন ত, প্রায় এক কোটি প্রবাসী শ্রমিক যাদেরকে আমরা কথায় কথায় কামলা বলে থাকি। আজকে বাংলাদেশের যে রেকর্ড রিজার্ভ (৪৫ বিলিয়ন ডলার) আছে এর সিংহভাগ আসছে এই প্রবাসীদের রেমিটেন্স থেকে।

২। রপ্তানি আয়ঃ ২০২১ সালে বাংলাদেশ মোট রপ্তানি করে ৪১ বিলিয়ন ডলার যার বেশির ভাগই আসছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। তবে রপ্তানি ৪১ বিলিয়ন হলেও এসব শিল্পের কাঁচামাল মাল আমদানিতে ব্যয় হয় প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার। নেট প্রফিট হিসেবে যে ১০-১১ বিলিয়ন ডলার ইনকাম হয়, তার প্রায় ৯০ ভাগই গরীবের মুজুরী অর্থাৎ গার্মেন্টস খাত থেকে আসছে।

৩। আমদানি ব্যয় হ্রাসঃ বাংলাদেশ বেশ কয়েকবছর ধরে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, ফলে ডলার দিয়ে বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করতে হচ্ছে না। বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে প্রায় ৩০ বছর যাবৎ বাংলাদেশের ফসল বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে না, উপরন্তু কম বৃষ্টির জন্য উপযোগী হচ্ছে নদীর ভেতর হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি। কৃষিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে ফলন বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুন।

বাংলাদের রিজার্ভ বৃদ্ধি কিংবা মাথাপিছু আয় বেড়ে যাওয়ার মুল কারন কিন্তু উপরের তিনটিই। ওহ আরেকটা কারন আছে, সেটা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। আওয়ামীলীগ পেশীশক্তি ব্যবহার করে সকল রাজনৈতিক আন্দোলন বন্ধ করার কারনেই এটা সম্ভব হয়েছে, এটাতে আপনি আওয়ামীলীগ কে কৃতিত্ব দিতেই পারেন।

শ্রীলংকার বর্তমান পরিস্থিতি দেখে আমাদের অনেকেই চিন্তিত… বাংলাদেশেও কি এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে? আমি অর্থনীতি বিশারদ নই তবে এতটুকু বুঝতে পারছি উপরের তিনটি খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন না হলে শ্রীলংকার মত পরিস্থিতি হওয়ার কথা নয়।

প্রবাসী রেমিটেন্স নিয়ে আপাতত কয়েক বছর চিন্তা না থাকলেও একসময় এই খাতে ধ্বস নামবে। বাংলাদেশের অদক্ষ শ্রমিক রপ্তানি করেই বেশীরভাগ রেমিটেন্স আয় করছে ফলে অটোমাইজেশনের কারনে আগামী দশকে এসব অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা ব্যাপক ভাবে হ্রাস পাবে।তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন থেকে দক্ষ শ্রমিক তৈরিতে মনযোগ দিতে হবে।

তৈরি পোশাক খাত নিয়ে খুব বড় কিছু আশা করা রিস্কি ব্যাপার, কেননা ক্রেতারা সস্তায় বিকল্প মার্কেট পেলে বাংলাদেশ থেকে সরে যেতে সময় লাগবে না। যেমন এখন চায়না থেকে ক্রেতারা বাংলাদেশে আসছে। 

আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে বাংলাদেশেও খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে আর সেটা হলে রিজার্ভ শুন্য হতে এক বছরও লাগবে না।

তাই বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ভাল হলেও খারাপ হতে খুব বেশী সময় লাগবে না। আমার কাছে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একটু ভংগুরই মনে হচ্ছে। পৃথিবীর যত দেশে উন্নতি করেছে তারা সবাই কিন্তু শিল্পায়নের মাধ্যমেই করেছে। চীন, জাপান, কোরিয়া, ইউরোপ, তাইওয়ান এমনকি মালয়েশিয়া। এদের উন্নতির মুল কারন ব্যাপক শিল্পায়ন। আমাদের এমন কিছু প্রডাক্ট দরকার যার বিকল্প হবে শুধু আমরাই। আমাদের দেশের রিজার্ভ অলস পড়ে আছে, বিদেশ থেকে ঋণ করে ব্যয় করা হচ্ছে অনুন্নয়ন খাতে যা আমাদের জন্য অশনি সংকেত। যেমন পদ্মা সেতুর কথাই ধরুন, সরকার সড়ক সেতুর মুল প্লান এর সাথে হঠাৎ করে রেলসেতু অন্তরভুক্ত করেছে যাতে ব্যয় বেড়েছে প্রায় তিনগুন। সড়ক সেতুটি ছিল প্রয়োজনীয়তা যার কারনে বাংলাদেশের জিডিপি বাড়বে ১% এর চেয়েও বেশী, তবে রেলসেতুতে দিগুন খরচ করেও জিডিপিতে কোন অবদান রাখবে না বরং সরকার কে নতুন রেলপথ চালু রাখার জন্য বছর বছর কোটি কোটি টাকা লোকসান দিতে হবে।

পদ্মা রেলসেতুর মত উচ্চ বিলাসী কয়েকটা প্রজেক্ট করলেই বিপদে পড়বে বাংলাদেশ। শ্রীলংকা আজ যে বিপদে পড়েছে তার অন্যতম কারন কোভিডের কারনে পর্যটন খাতে ধ্বস আর সরকারের অলাভজনক কিছু উচ্চ বিলাসী প্রজেক্ট বাস্তবায়ন। 
বাংলাদেশ ভালো করুক, এটা আমাদের সবার প্রত্যাশা। তবে টেকসই অর্থনৈতিক পরিকল্পনা হাতে না নিলে বর্তমান পরিস্থিতি খারাপ হতে খুব বেশি সময় লাগবে না।



Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল