নিজস্ব প্রতিবেদক:
নিম্নআয়ের ৫০ লাখ পরিবার বছরে পাঁচ মাস ১৫ টাকা কেজি দরে চাল পাবে। প্রতিটি পরিবার এ দরে মাসে ৩০ কেজি করে চাল কিনতে পারবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনকালে তিনি এ কথা জানান।
বাজেট অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন, সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং কৃষি বিপণন ব্যবস্থাসহ সার্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল এক প্রকার চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল। এ সময় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বিশ্বে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্কবাণী দিয়েছিল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কৃষিখাতের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে আমাদের সরকার প্রথম থেকেই সতর্ক ছিল। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসরণপূর্বক তড়িৎ পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সত্ত্বেও আমরা দেশে কৃষির উৎপাদন ধারা অব্যাহত রাখতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি। চালের বাজার-দর নিয়ন্ত্রণসহ স্বল্পআয়ের মানুষের জন্য খাদ্যপ্রাপ্তি সহজ করার লক্ষ্যে আমরা ওএমএস কার্যক্রমের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে সুলভ মূল্যে চাল ও আটা বিক্রি করেছি।
মন্ত্রী বলেন, চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরেও এ কর্মসূচিতে ৫ দশমিক ৭০ লাখ টন চাল ও ৪ দশমিক ৮৫ লাখ টন আটা বিতরণ করা হচ্ছে। আমরা ২০২২-২০২৩ অর্থবছরেও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি অব্যাহত রাখব। ৫০ লাখ নিম্ন-আয়ের পরিবারকে বছরের কর্মহীন সময় যথা সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এবং মার্চ ও এপ্রিল- এ পাঁচ মাস ১৫ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া হবে। পরিবারপ্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল দেওয়া হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। বাজেট উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার চতুর্থ বাজেট।
২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে উপস্থিত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০২২-২৩ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার কথা বলা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বেশি। নতুন বাজেটে সরকারের আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ ঘাটতি ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।
আয়ের লক্ষ্যমাত্রা চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বেশি। কর বাবদ ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা আয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে এনবিআরকে আগের বছরের তুলনায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিচ্ছে সরকার। এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি। বৈদেশিক অনুদান থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।
এমআই