মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সমাধান খুঁজতে হবে নতুনে, পুরোনো উপায়ে না

সোমবার, জুলাই ২৫, ২০২২
সমাধান খুঁজতে হবে নতুনে, পুরোনো উপায়ে না

ডা. আব্দুন নূর তুষার:

এই যে এখন আমরা ডলার নিয়ে বিপদে পড়েছি এই বিপদের সম্ভাবনা নিয়ে পত্র পত্রিকা ও অর্থনীতি আর ব‍্যাংকিং এর পন্ডিতরা কোন সাবধানবানী দেন নাই। আমরা মাসব‍্যাপি লাল নীল বাতি জালিয়েছি। সেতুর দুই প্রান্তে কনসার্ট করে উদ্বাহু নেচেছি সপ্তাহ পার করে রোজ। বাজি পটকা তো মুড়ি মুড়কি। এর পরেই যেন সব শুরু হলো। ঘটনা কিন্তু তেমনটা নয়।
ডলার এর দাম মার্চ মাস থেকেই আশংকাজনকভাবে বাড়ছিলো। মার্চের শেষ সপ্তাহে এটা পাগলামী শুরু করে দেয়।
তাহলে জ্ঞানীগুণিরা কেন সরকারকে সাবধান করলেন না?

লেভিট আর ডাবনার এর বই পড়ি আমি। আর পড়ি স্টিগলিজ। বাকিদের এভাবে খুঁজে খুঁজে পড়ি না। ডাবনার লিখেছেন কেন অর্থনীতিবিদরা জেনেশুনেও প্রেডিকশন বা আগাম সতর্কবানী দিতে চান না। এর কারণ হলো অর্থনীতিবিদরা আগে সমস‍্যার কথা বললে যদি সেটি না হয় তবে তাদের জ্ঞান বুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাই কিছু বলার ঝুঁকি তারা নিতে চান না। সমস‍্যা শুরু হলে সমাধানের জন‍্য তাদের ডাক পড়ে। তখন তারা কেন এমন হলো এটা বলেন আর সমস‍্যা সমাধানে কনসাল্টেন্ট হয়ে যান। তাতে তারা দু কড়ি কামাইও করতে পারেন।

বাংলাদেশ বিদ‍্যুত উৎপাদন বাড়িয়েছে কিন্তু ইলেক্ট্রিক কার ও বাইককে বি আর টি এ রেজিস্ট্রেশন দেয় না। এটা দিলে জ্বালানি এনে বিদ‍্যুত বানিয়ে বেচলে লস হতো না বা হলেও অনেক কম হতো।  এই যে পরিকল্পনাহীন উৎপাদন সক্ষমতাবৃদ্ধি এটা নিয়ে আনু মুহাম্মদ স‍্যারের মতো অল্প কিছু মানুষ কথা বললেও তাদের রাজনীতি কম‍্যুনিস্টপন্থী হওয়ায় তারা মিডিয়ার মনোযোগ পান নাই। সরকারী পুলিশতো একাধিকবার প্রহার করেছে তাকে। জেনেও চুপ করে থাকার এই অপরাধকে কেউ অপরাধ মনে করে না। এর কারণ হলো মানুষ পরাজয়কে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভাগ‍্য মনে করে আর বিজয়কে মনে করে নিজের কৃতিত্ত্ব।
তাই এই লোড শেডিং এর দোষ ভাগ‍্যের ; তা না হলে বড়জোড় পুতিনের। আর শতভাগ বিদ‍্যুতের কৃতিত্ব বিদ‍্যুত মন্ত্রনালয়ের।
ফেল করলে টিচার খারাপ। পাশ করলে ছাত্র মেধাবী।

এখন সামনে কি হবে এটা নিয়ে মানুষের প্রশ্নের জবাব তারা দিচ্ছেন না। একমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাধারন মানুষকে বিলাসিতা পরিহার করতে বলেছেন। সঞ্চয় করতে বলেছেন। তাতে কেউ কর্ণপাত করলো কি? সরকারি গাড়ীবহর একদিন বন্ধ না রেখে বন্ধ করা হলো পাম্প। তাতে তেলখরচ যে কমবে না এটা সবাই বোঝে। মেট্রোরেল এর খরচ কিন্তু তাতে কমলো না বরং দশহাজার কোটি বাড়লো। সামনে কি হবে এই প্রশ্নের উত্তর কেউ দিচ্ছে না। এটা ভালো করে না বোঝালে মানুষ আতংকিত হবে। তাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হতে শুরু করবে। এতে মন্দা আসবে দ্রুত। মানুষকে বিদেশি পণ‍্য পরিহার করতে বলতে হবে। বিদেশ থেকে অপ্রয়োজনীয় পণ‍্য আমদানী বন্ধ করতে হবে। এটা করতে বলা হলেও কাজ কি হয়েছে? একই সাথে দেশী পণ‍্য বেশি করে ব‍্যবহার করতে বলতে হবে। যাতে ভেতরে অর্থনীতি সচল থাকে। 

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে চাই বিদেশী মুদ্রা। ডলার পাউন্ড ইউরো। রেমিট্যান্স হলো প্রধান ভরসা। অথচ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কার্ড দেয়ার জন‍্য লাগছে এক বছর। পাসপোর্টে লম্বা লাইন। বিদেশে লোক যাবে কিভাবে যদি পাসপোর্ট পেতে লাগে তিনমাস? গাড়ীচালক লাইসেন্স না পেলে কি করে বিদেশে চাকুরী পাবে?

লেভিট ডাবনার বলেছেন জ্ঞান বেশি হলে পন্ডিতরা ঝুঁকি নেয়না। তাই সাহসী পদক্ষেপ নিতে পারে না। ইপিজেডে বিদ‍্যুত বিলের ভর্তুকি তুলে দেন। এখানে আরো বহু সুবিধা পায় বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। তাদের ভর্তুকি মূল‍্যে পানি বিদ‍্যুত গ‍্যাস দেয়া না হলে তাদের খুব একটা কমবেশি হবে না। রপ্তানিমুখি শিল্পে করসুবিধা বাড়িয়ে দিয়ে সেখানেও বিদ‍্যুত ভর্তুকি বন্ধ করে দেয়া উচিত। প্রাইভেট বিশ্ববিদ‍্যালয় ও সুপারমার্কেট ও মলে বিদ‍্যুত ভর্তুকি তুলে দেয়া হোক। বাজার করতে গিয়ে এত লিফট আর এসি চালাতে হলে, তার জন‍্য পয়সা খরচ করুক।
 
ফুল ইলেকট্রিক ভেহিকল সহজলভ‍্য করে দিয়ে বিআরটিএ এর পারমিশন ও কাগজপত্র দেয়া হোক। যারা টাকা পাচার করেছে সেই টাকা দেশে আনার ব‍্যবস্থা করা হোক। যাদের ব‍্যবসা বিদেশে রেজিস্টার্ড তাদের ভিআইপি সিআইপি মর্যাদা বাতিল করা হোক। ডলার একাউন্টে বিদেশী মুদ্রা ফিক্স করে রাখলে আয়কর রেয়াত দেয়া হোক।  

লেভিট আর ডাবনার বলছেন মানুষ এর প্রবণতা হলো সে বলতে চায় না যে সে গুবলেট পাকিয়েছে। সে তখন আরো গুবলেট দিয়ে আগেরটা ঢাকে। যেমন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাড়াতে ধর্ম মন্ত্রনালয় বাংলাঢোল নামে এক কোম্পানি দিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাবে। অথচ দেশের মসজিদে ইমামদের ও মন্দির পুরোহিতদের মাধ‍্যমে এই কাজটি বাড়তি পয়সা ছাড়াই করা যেতো।  যখন সবাই খরচ কমাচ্ছে তখন তারা প্রচারণা শুরু করেছে। যেন সাম্প্রদায়িকতার কারণ হলো অসচেতনতা ও প্রচারণার অভাব। পঞ্চাশবছর তারা বসে থেকে সাম্প্রদায়িকতা বাড়তে দিলো কেনো? এটা বলছে না কেউ।
এই জটিল সময় সহজে শেষ হবে বলে মনে হয় না।

ডলারের সাথে টাকার দাম স্থিতাবস্থায় রাখতে না পারলে সব কিছুর খরচ বেড়ে যাবে। ব‍িদ‍্যুত না থাকলে ফ্রিল‍্যান্সারদের আয় কমে যাবে।  বিদ‍্যুত এখন বিলাসিতা না। এটা কাঁচামাল। আমরা যদি বিদ‍্যুত এর উৎপাদন ঠিক রেখে কলকারখানায় উৎপাদন বাড়াতে পারি তবে আগামী বিশ্বমন্দায় আমাদের রপ্তানী বহুগুণ বাড়বে।  মনে রাখা দরকার আমাদের কৃষি উৎপাদনেও  বিদ‍‍্যুত ও ডিজেল দরকার হয়।  

মন্দা/ক্রাইসিস বা সংকট হলো উদ্ভাবনের জন‍্য উৎকৃষ্ট সময়। তাই নতুন চিন্তা করতে হবে। যা চলছিলো সেখানে ভুল না থাকলে তো এই অবস্থা হতো না। তার মানে পুরোনো অবস্থায় ফেরা কঠিন। লেভিট বলছেন ফুটবলে পেনাল্টি কিকে সবচেয়ে বেশি গোল হয় গোলকিপার বরাবর সোজা বল মারলে। কিন্তু খেলোয়াড়রা সেটা করে না। কারণ বাই চান্স মিস হলে সব দোষ হয় কেন সোজা মারলো এটাই। তাই উপরের কোনা বরাবর মেরে গোল হলে অনেক তালি আর মিস হলে মানুষ মেনে নেয়। কারণ শটটা তো কঠিন। সবাই কোনায় কোনায় শট নেয়। লেভিট বলছেন যে সমস‍্যা সমাধানের বেলায় যে বরাবর সোজা বলে লাথি মারে সেই ভালো। কারণ সে সাহসী ও সে নিজের জন‍্য বাহবা মারহাবা চায় না। তারা তাই তরুণদের কাছে যেতে বলেছেন। যারা সরলভাবে চিন্তা করে। সমাধান খুঁজতে হবে নতুনে। পুরোনো উপায়ে না।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল