মোঃ মোশাররফ হোসেন : আমরা বাঙ্গালী, আমাদের সমস্যা নিজের জায়গায় থেকে অন্যকে বিচার করা।প্রতিটি মানুষের আলাদা আলাদা অবস্থান, কর্ম-দক্ষতা, মূল্যায়ন,যোগ্যতা,বিশ্বস্ততা এবং দায়িত্ববোধ।
৫৬ হাজার বর্গমাইলের এ দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলে ৬০/৬১ টা ব্যাংক রয়েছে।প্রতিটি ব্যাংকের আলাদা ব্যবস্থাপনা আলাদা কাজের ধরণ।যদিও ডিপোজিট কালেকশন এবং লোন এন্ড অ্যাডভান্সই সব ব্যাংকের মূল কাজ।
কয়েকটি গ্রুপে দেখলাম "লেইট আওয়ারে ব্যাংকিং সিস্টেম নাকি অদক্ষতা?" এ বিষয়ে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে এবং বেশিরভাগ ব্যাংকার অদক্ষতাকে দোষ দিচ্ছেন !
আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে এটি সিস্টেমও না অদক্ষতাও না। এটা মূলত কাজের ভলিউম নিয়ে কথা। কেউ যদি সোনালী ব্যাংককে কৃষি ব্যাংকের সাথে কিংবা ইসলামী ব্যাংককে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারের সাথে মিলাতে যান তাহলে তো হবে না।
আবার প্রতিটি ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় কাজের ভলিউম এক রকম না। সোনালী ব্যাংকের উপজেলা পর্যায়ের শাখার সাথে ইউনিয়ন পর্যায়ের শাখায় কাজের ভলিউমে ফারাক আছে।
ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন অফিসার যখন লকডাউনের ২.১০ মিনিটে বাসায় এসে লাঞ্চ করছেন উপজেলা শাখায় অন্য অফিসার তখন গভঃমেন্ট পোস্টিং দিচ্ছেন জিটিএস এ।
অন্য ব্যাংকের অফিসার যখন বিকাল চারটায় বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ শেষ করে আরামসে ঘুম দিচ্ছেন সেখানে আমাদেরকে হয়তো ডাটা ক্লিনসিং, আর্মি পেনশন কাটিং বিল কিংবা পুরনো অ্যাকাউন্টে তথ্য হালনাগাদ করতে হচ্ছে!
এটা আবার একই শাখায় সবাই করছে না। কর্মপ্রীতি আর দায়িত্ববোধ থেকে কেউ কেউ করছে। বাকীরা অন্যদের মতোই বাসায় গিয়ে রেস্ট নিচ্ছে। যেই কাজগুলো করছে সেই কাজগুলো সাধারণত ব্যাংকিং আওয়ারে করা যায় না। তখন কাস্টমার সার্ভিস নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়।
কাস্টমার ইজ আওয়ার বস/ক্লায়েন্ট ক্যান ডু নো রং! তাই তাদের সার্ভিসে কোনো হেরফের যেন না হয়। সেদিকে সর্বোচ্চ ইফোর্ট দিতে হয়।
মাথায় রাখতে হবে মাসের ২৫ তারিখ আপনার-আমার স্যালারি অ্যাকাউন্টটা যে ভারি হয় সেটা কিন্ত সরকার বা ঐ ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট দেয় না। শাখার প্রফিট থেকে হয়। আর ব্যাংক প্রফিট করে ক্লায়েন্টদের টাকা ৯-৬ করে। ৬% এ নিয়ে ৯% এ বিনিয়োগ করে।
একবার ভাবুন এই লকডাউনে লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার হচ্ছে, কিন্তু তাদের খরচ থেমে থাকছে না। কাজ করার সুযোগও পাচ্ছে না। ধারদেনা বাড়ছে। আমি আপনি ব্যাংকে চাকরি করে কোনো মাসে বেতন হয়নি এমন ঘটনা কিন্তু ঘটেনি।
তাহলে এই প্রতিষ্ঠানের জন্য একটু বাড়তি কষ্ট করতে গেলে কেন সময়ের হিসাব করতে খাতা-কলম নিয়ে বসে যান? একবার ভাবুন ব্যাংকের এই প্যারাময় চাকরিটাই কাল থেকে আপনার নাই! কী হবে তখন?
মনে হবে না?
ইশশ!প্রয়োজনে আরো ২ ঘন্টা বেশি কাজ করতাম তাও চাকরিটা যদি থাকতো। সংসারে এতো এতো খরচ সামাল দিবো কীভাবে?
যে চাকরিতে রুটি রুজি সেটিকে একটু বেশি সম্মান করাই উচিত নয় কি?
লেখক : কর্মকর্তা,সোনালী ব্যাংক লিঃ ও সাবেক কর্মকর্তা, এক্সিম ব্যাংক লিঃ