সর্বশেষ সংবাদ
পারভীনা খাতুন*
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার
বাহিনী সমগ্র বাঙালি জাতিকে
নিস্তব্ধ করার মহাপরিকল্পনা হিসেবে
যে উন্মত্ত বীভৎসতা ও নিধনযজ্ঞ চালায়
তার অংশ হিসাবে যশোর
জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। পাকিস্তানি
বাহিনী যশোরের শহর-উপশহরে
চালায় ব্যাপক গণহত্যা, ধর্ষণ,
লুটপাট, বাড়িঘর দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ
এবং অনেক মানুষকে জীবন্ত
অগ্নিতে পুড়িয়ে হত্যা করে। কাউকে
জ্যান্ত পুঁতে রাখে আবার
মানুষের মস্তক কেটে মোড়ে
মোড়ে ঝুলিয়ে রাখে ।
এছাড়া শিশুদেরকে নিক্ষেপ করে নদীতে, ডাস্টবিনে,
আবার কখনো উপরে ছুড়ে
ফেলে অনেক শিশুকে আঁচড়ে
হত্যা করে। মাঠ
পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে
আমি কয়েকটি বড় বধ্যভূমির
সন্ধান পেয়েছি । প্রত্যক্ষদর্শীদের
ভাষ্যমতে, উপশহর এলাকায় হত্যাকান্ডের
শুরু ৪ এপ্রিল রাত
থেকে ।
উপশহরে গণহত্যা নির্যাতনের বিবরণ
২৫ মার্চ মাঝরাতে ঢাকার
অপারেশন সার্চলাইটে পিলখানার ইপিআর হেড কোয়ার্টার,
আনসার বাহিনী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র
হলে হাজার হাজার বাঙালি
মায়ের সন্তান নিহত হন। তারপর
২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা,
অন্যদিকে ইয়াহিয়া খানের সদম্ভ ঘোষণা-‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যে
পূর্ব-পাকিস্তানের বিদ্রোহ দমন করা হবে। এবার
শুরু হলো সমগ্র দেশব্যাপী
প্রতিরোধ যুদ্ধ। বিভিন্ন
এলাকায় ব্যাপক গণহত্যার সাথে
সাথে পাকিস্তানি বাহিনী ৪ এপ্রিল
রাতে নিউ স্যাটেলাইট টাউন
(বর্তমান নতুন উপশহর) ঢুকে
হত্যা করে এ-ব্লকের
পি.আই.এ-তে
চাকরিরত মিজানুর রহমান, তার বড়
ভাই দোকান কর্মচারী আবুল
হোসেনকে, ৫ এপ্রিল যথাক্রমে
শহিদুল ইসলাম (নায়েব সাহেব),
যশোর পলিটেকনিক কলেজের অধ্যক্ষ সুলতান
উদ্দিন, তার শ্যালক নাজমুল
হক ও তার বন্ধু
ডাক্তার ওবায়দুল হককে পলিটেকনিক কলেজের
অধ্যক্ষের বাসভবনের সামনে হত্যা করে। ৫
এপ্রিল উপশহর সংলগ্ন যশোর
মাগুরা রোডের উপরে সুলতান
মতোয়াল্লী ও তার ছেলে
খোকন, উপশহর সংলগ্ন গাবতলাতে
আজিজুর রহমান পাটোয়ারী, তছির
উদ্দিন, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল
খালেক ও আলী হোসেন,
কলেজ ছাত্র হুমায়ুন কবির,
শাহ আলম শানু, বি-ব্লক পাকা রাস্তায়
হত্যা করে আব্দুল করিম
ও ওহাবের মাকে, ৮
এপ্রিল এফ ব্লকের ৭১
নম্বর বাড়ির আব্দুর রশিদ,
সমাজকর্মী আতিকুল্লাহ সাহেব ও তাঁর
পুত্র মোমিনউল্লাহ ও পালিত পুত্র
সিদ্দিককে, ই-ব্লকের বিআরটিসির
স্টেনোগ্রাফার আব্দুর রহিম, অগ্রণী
ব্যাংকের গার্ড শাহাদত হোসেন,
উপশহর শিল্প এলাকায় হত্যা
করে ওমেদালী, চাঁদ আলী ও
তাঁর শিশু কন্যা সুন্দরীকে,
যশোর শিক্ষাবোর্ডে চাকরিরত নওয়াপাড়ার রায়হানকে হত্যা করে পাকিস্তানি
বাহিনী । যুদ্ধকালীন
বাঙালিরা পলায়ন করায় উপশহর
হয়ে উঠে বিহারী অধ্যুষিত
এলাকা এবং পাকিস্তানি বাহিনী
ও বিহারীদের অপকর্মের ক্ষেত্রস্থল । উপশহর
আমবাগানে (বর্তমানে ঈদগাহ ময়দান) গণহত্যা
চালানো হয় নির্বিচারে।
একই সাথে ওখানে ৭
জনকে হত্যা করা হয়
এদের অধিকাংশ ছিলেন শিক্ষক, পথচারী,
তরকারী বিক্রেতা, শিশু-যুবক-তরুণী-বৃদ্ধ। পাকিস্তানি
বাহিনী বিহারীদের সহযোগিতায় এ-ব্লক ২২৬
নম্বর বাড়িতে বসবাসরত দুই
ভাইকে বাড়ির সামনে হত্যা
করে, পরে বাড়ির মধ্যেই
দুই ভাইয়ের লাশ এক
জায়গায় মাটি চাপা দেয়া
হয় । এরপরে
ডি-ব্লক ১৬৪ নম্বর
বাড়িতে ৫ জনকে ট্রেঞ্চের
মধ্যে পুঁতে দেয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের
কাছ থেকে জানা যায়,
এখানে মানুষের মাথা কেটে ঝুলিয়ে
রাখা হত, এলাকার বাঙালিদের
মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করার
জন্য। ডি-ব্লক ১৯৪ নম্বর
বাড়ি থেকে দুজনকে, এফ-
ব্লক ৪৪ নং বাড়িতে
একজনকে আর একই বাড়ির
বাবা ও ছেলেকে ধরে
এনে গাছের সাথে বেঁধে
উপশহর আমবাগানে গুলি করে হত্যা
করে। এরপর
অনেকের হাত-পা কেটে
বিভিন্ন জায়গায় ফেলে রাখা
হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের
কাছ থেকে আরও জানা
যায় শিশুদেরকে উপরে ছুড়ে দিয়ে
গুলি করে হত্যার কথা। এখানকার
বাবলাতলার নিকটবর্তী ডাকবাংলোর ভিতরে নিয়ে নির্যাতন
করা হতো। কাউকে
গাছে ঝুলিয়ে মারা আবার
কাউকে বাইরে থেকে ধরে
এখানে গলা কাটাসহ অসংখ্য
মানুষ হত্যা করে টুকরা
টুকরা করে কেটে ড্রেনে
অথবা নদীতে ফেলে দেয়া
হতো । তারা
বেশিরভাগ মানুষকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে
হত্যা করতো। নৃশংসতা
আর অত্যাচারে মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্তে মানুষের
আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারি
হয়ে উঠতো। এলাকার
অধিকাংশ বাড়িঘর পাকিস্তানি বাহিনী
স্থানীয় বিহারীদের সহযোগিতায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে
। পাকিস্তানি বাহিনীর
গুলিতে আহত হয় স্থানীয়
বহু মানুষ। কেউ
গোপনে চিকিৎসা করা কেউবা ঐ
অবস্থায় দূরে পালিয়ে গিয়ে
চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়েছেন। পাকিস্তানি
সেনা ও বিহারীরা শুধু
লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেই
ক্ষান্ত হয়নি বরং লুটের
সময় বাড়ির সুন্দরী মহিলা,
বধু ও কুমারী মেয়েদেরকে
ধরে জিপে উঠিয়ে নিয়ে
ধর্ষণ করে অনেককে হত্যাও
করে । আবার
অনেক সুন্দরী মেয়ে ও বধূরা
লজ্জা আর অপমানে আত্মহত্যা
করে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছে।
উপশহর আমবাগান গণহত্যা
যুদ্ধকালীন উপশহর আমবাগানটি (বর্তমানে
উপশহর ঈদগাহ ময়দান) ছিল
গণহত্যার মূল কেন্দ্রবিন্দু ।
অধিকাংশ মানুষকে এখানে ধরে এনে
হত্যা করা হতো।
এখানে স্থানীয় যারা শহিদ হয়েছিলেন
তারা হচ্ছেন- শহীদ সুজাউদ্দিন বিশ্বাস,
ডি-ব্লক প্রাইমারি স্কুলের
প্রধান শিক্ষক ও একই
স্কুলের শিক্ষক সিদ্দিক মাস্টারকে
স্কুল থেকে ধরে নিয়ে
গিয়ে ইট দিয়ে মাথার
ঘিলু বের করে এখানে
হত্যা করে পুতে রাখে। মো:
আতিকুল্লাহ বিশিষ্ট সমাজসেবক ছিলেন। অত্র
এলাকার বিভিন্ন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা তিনি । তার
বড় ছেলে তারিকুল্লাহ যুদ্ধে
যাওয়ায় তাঁকে এবং তাঁর
ছেলে মোমিনউল্লাহকে আম গাছের সাথে
বেঁধে নির্যাতন করে বাবার সামনে
আগে ছেলেকে তারপর বাবাকে
গুলি করে মারা হয়
। তাঁর আর
এক পালিত পুত্র সিদ্দিককে
তাঁর এফ ব্লক ৪৪
বাড়িতে গুলি করে হত্যা
করে । শহিদুল
ইসলাম, যিনি এলাকায় নায়েব
সাহেব নামে অধিক পরিচিত
। তাঁকে বিহারীরা
অত্যাচারের পর নির্মমভাবে হত্যা
করে । আব্দুল
লতিফ খান টগবগে যুবক
তাঁকে ও তাঁর বন্ধু
আইয়ুব আলীকে তিনদিন নির্যাতনের
পর এখানে হত্যা করা
হয় । জানে
খাতুন নামের এক সুন্দরী
কিশোরীকে বাড়ি থেকে ধরে
নিয়ে গিয়ে পাশবিক বীভৎসতা
চালিয়ে তাঁর লাশ ফেলে
দেয় এই আমবাগানে।
শেয়াল আর কুকুর তাঁর
লাশের অনেক অংশ খেয়ে
নেয় । এছাড়া
বাইরে থেকে নাম না
জানা বাংলা মায়ের শতশত
সন্তানকে ধরে এনে এ
স্থানটাতে হত্যা করতো।
আবার কখনো মানুষকে এখানকার
দিঘিতে জীবন্ত অবস্থায় বস্তাবন্দী
করে কখনোবা টুকরা টুকরা
করে বস্তা বন্দী করে
ফেলে দেয়া হয়েছে।
বস্তাবন্দী লাশের তাজা রক্তে
পুকুরের পানি লাল হয়ে
গেছে, যা সাধারণ মানুষের
মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতো।
এ
ব্লক ২২৬ নম্বর বাড়ির
গণহত্যা
উপশহর
গাবতলা সংলগ্ন এ ব্লকের
২২৬ নম্বর বাড়িতে বাস
করতেন সৈয়দ আবুল হোসেন,
তাঁর স্ত্রী, মা, দুই ছেলে
ও এক মেয়ে সহ
তাঁরই আপন ছোট ভাই
সৈয়দ মিজানুর রহমান । প্রতিদিনের
মতো দুভাই বাড়িতে ঈশার
নামাজ আদায় করবেন বলে
অজু করে জায়নামাজে দাঁড়াবেন
এমন সময় বাইরে থেকে
অবাঙালি আহম্মদ ডাক দেয়। দুই
ভাই বাড়ির বাইরে বের
হলে দুজনকেই গুলি করে ।
ডি- ব্লক ১৬০ নম্বর
পীর সাহেবের বাড়ি
গণহত্যা
শাহ সুফি আল কাদরী,
যিনি এলাকাতে ‘পীর সাহেব’ হিসেবে
পরিচিত । ৫
এপ্রিল ১৯৭১ সাল, সকাল
দশটার পীর
সাহের ও ৪ রিকসাচালক
হত্যাকান্ডের দৃশ্য পাশের বাড়ির
খেজুর গাছে উঠা একটি
ছেলে প্রত্যক্ষ করেছিল।
বি-ব্লক খালপাড় গণহত্যা
উপশহর এলাকার বি-ব্লক
খালপাড়ে স্থানীয় বিহারীরা বাইরে থেকে বাঙালিদেরকে
ধরে এনে গুলি করে
১৯-২০ জনকে হত্যা
করে এবং উক্ত লাশ
গুলিকে খালপাড়ে (ব্রীজের নীচে) ফেলে দেয়।
উপশহর তেতুলতলা পাতকুয়া বধ্যভূমি
ভৈরব নদী সংলগ্ন উপশহর
বি-ব্লক তেতুলতলায় একটি
বিশাল পাতকুয়া ছিল। ঐ
পাতকুয়ার মধ্যে অসংখ্য বাঙালিদের
হত্যা করে লাশ ফেলা
হয়েছিল। বাইরে
থেকে ধরে এনে এখানে
হত্যা করা হত। বর্তমানে
সে পাতকুয়ার উপর দ্বিতল ভবন
নির্মাণ হয়েছে।
উপশহর নিউমার্কেট (মানসী সিনেমা হল)
উম্মুক্ত মাঠ বধ্যভূমি
উপশহর নিউমার্কেট গোলমার্কেট উত্তর পশ্চিম কোনের
খোলা মাঠ বর্তমান উন্মুক্ত
বিশ^বিদ্যালয় এখানে অসংখ্য মানুষকে
হত্যা করে স্থানীয় বিহারীদের
সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা। অধিকাংশ
মানুষকে বাইরে থেকে ধরে
এনে এখানে জবাই করে
হত্যা করা হতো।
হানাদার বাহিনীর বর্বরতায় নিহত বাঙালিদের মৃতদেহ
পশুপাখির উৎসবমুখর ভোজনের ছবি তুলেছিলেন
বীরযোদ্ধা এস.এম.শফি।
পলিটেকনিক কলেজ গণহত্যা
যুদ্ধকালীন যশোর পলিটেকনিক কলেজের
অধ্যক্ষ সুলতান উদ্দিন আহমেদ,
তাঁর শ্যালক নাজমুল হক
এবং তাঁর বন্ধু ডাক্তার
ওবায়দুল হক (অত্র কলেজের
অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত ) কে ৫ এপ্রিল
দুপুর আনুমানিক দুইটার সময় অবাঙালিদের
সহায়তায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পলিটেকনিক কলেজের কোয়ার্টারের সামনে
গুলি করে হত্যা করে। পরে
তাঁদের লাশগুলিকে সেখান থেকে ঠেলাগাড়িতে
নিয়ে বাবলাতলা ব্রিজের নিচে ফেলে দেয়।
গাবতলা গণহত্যা
৫ এপ্রিল উপশহর সংলগ্ন
গাবতলা বিরামপুরের আজিজুর রহমান পাটোয়ারী,
তসীর উদ্দীন, আব্দুর রাজ্জাক ও
আলী হোসেনকে গুলি করে হত্যা
করে নদীর ধারে তাঁদের
লাশ ফেলে রাখে।
উপশহর শিল্প এলাকায় গণহত্যা
উপশহর শিল্প এলাকার চাঁদ
আলী মোল্লা ও তার
তিন বছরের শিশু কন্যা
সুন্দরীকে পাকিস্তানি সেনারা গুলি করে
হত্যা করে। এছাড়া
ঐদিন উপশহর শিল্প এলাকায়
আব্দুর রশীদ ও ওমেদালীকে
পাকিস্তানি সেনারা গুলি করে
হত্যা করে। এবং
ওমেদালীর ছেলের বৌ ও
শাশুড়িকে নির্যাতন করে।
বিচ্ছিন্ন গণহত্যা
যুদ্ধকালীন উপশহরের বিভিন্ন ম্যানহোল, ড্রেন, পাতকুয়া, নদী
ও দিঘীতে অসংখ্য মানুষকে
মেরে ফেলা হয়েছে, যা
নজিরবিহীন। যুদ্ধের
পরে কয়েক বছর ধরে
হাড়গোড় কঙ্কাল তোলা হয়েছে
উপশহরের বিভিন্ন স্থান থেকে।
বিশেষ করে এ-ব্লক
তেতুলতলা ব্রীজের নীচে ও তেতুলতলার
পূর্বপাশে অবস্থিত একটি পাতকুয়াতে বহু
মানুষকে হত্যা করে বিহারী
সহ পাকিস্তানি সেনারা।
সালভিশন আর্মি নির্যাতন কেন্দ্র
উপশহর সালভিশন আর্মি ছিল স্বাধীনতাকালীন
অপর একটি বৃহৎ বাঙালি
নির্যাতন কেন্দ্র । স্থানীয়
ও বহিরাগত বাঙালিদের ধরে নিয়ে এখানে
ভীষণ অত্যাচার করা হতো।
এছাড়া কিশোরী এবং যুবতী
মেয়েদের ধরে নিয়ে গিয়ে
উলঙ্গ করে রাখা হতো
এবং তাদের ওপর পাশবিক
নির্যাতন করা হতো।
কোন সময় ছেলেদেরকেও ধরে
নিয়ে অত্যাচার সহ বলৎকার করা
হতো। স্থানীয়
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, স্থানীয় কিশোরদেরকে
ধরে নিয়ে চাপ কলে
চাপ দিয়ে ড্রামে পানি
ভরে নেয়া সহ কাঠ
সংগ্রহ করা এবং তাদের
বিভিন্ন খেদমত করার কাজে
ব্যবহার করতো । যদি
কেউ কাজে অপারগতা বা
কষ্ট প্রকাশ করতো অথবা
একটু বিশ্রাম নিতে চাইতো সাথে
সাথে চাবুক অথবা মোটা
লাঠি দিয়ে মেরে পিঠের
চামড়া উঠিয়ে দিত।
আবার কাউকে লাথি মারতে
থাকতো নিষ্ঠুর আর নির্দয়ভাবে।
শহীদ সনাক্তকরণ ও পরিচয়
এলাকার বয়স্ক ব্যক্তিগণ ও
প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে
তাঁদের দেয়া তথ্যানুসারে মুক্তিযুদ্ধে
উপশহরের ৪৬ জন শহীদের
তালিকা ও পরিচয় পাওয়া
সম্ভব হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী / শহিদ পরিবারের মৌখিক ভাষ্য
মো. তোফায়েল আহমেদ (৭৭)
পিতা: শহীদ আজিজুর রহমান
পাটোয়ারী, মাতা: মোছা: খাতুন
জিন্নাত, পেশাঃ ব্যবসা, ঠিকানাঃ
বিরামপুর, উপশহর সংলগ্ন, যশোর। সাক্ষাৎকার
গ্রহণের স্থান ও তারিখ:
নিজ বাড়ি, ১২ জানুয়ারি
২০২১।
আমার বাবাকে উপশহর সংলগ্ন
গাবতলাতে যখন হত্যা করেছিল,
তখন আমিও বাবার সাথে
ছিলাম। শুরুতে
একদল বিহারী এসেছিল তাদের
কাছে কোন অস্ত্র ছিল
না। কিন্তু
পরে আর এক দল
আসে তাদের কাছে অস্ত্র
ছিল। তাদের
মধ্যে অনেককে আমি চিনতাম। আমরা
মনে করেছিলাম ওদেরতো আমরা কোন
ক্ষতি করিনি ওরা আমাদের
মারবে কেনো? তারা
জিজ্ঞেস করে- তোমরা কী
হিন্দু ? আমার বাবা বললেন
না, আমরা মুসলমান।
তখন একজন বলে, এরা
সব হিন্দু এদেরকে মেরে
ফেলো। বলার
সঙ্গে সঙ্গে আমি
দৌঁড়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম।
আমার আব্বাকে হত্যা করে নদীর
ধারে লাশ ফেলে রেখেছিল। তেরোটি
বেয়োনেটের খোঁচা ও একটি
বন্দুকের গুলি করে আমার
বাবাকে হত্যা করে।
আমার নিজের চোখে দেখা
আমাদের বাড়ির উত্তর পাশে
তসীর উদ্দীন, পূর্ব পাশে বৃদ্ধ
আব্দুর রাজ্জাক, আলী হোসেন নামে
আরো ৩ জনকে হত্যা
করেছে। আমি
দৌঁড়ে পালিয়েছিলাম, না হলে আমাকেও
মেরে ফেলতো। ওদের
সবার হাতে থ্রি নট
থ্রি রাইফেল ছিল।বিহারীরা চলে গেলে আমার
বাবার লাশ ২৮ ঘন্টা
পরে তুলে নিয়ে একটি
ট্রেঞ্চের মধ্যে মাটি দিয়েছি।
সালেহা বেগম (৭৫)
পিতা: আবদুর সবুর, মাতা:
রাজেফা খাতুন, পেশা: গৃহিণী,
ঠিকানাঃ গ্রাম: এ-ব্লক,
বাসা নং- ২২৬, ডাক:
শিক্ষা বোর্ড, থানা: কোতোয়ালী,
জেলা: যশোর । সাক্ষাতকার
গ্রহণের স্থান ও তারিখ:
নিজ বাড়ি ২৭ ডিসেম্বর
২০২০।
আমার স্বামী এবং দেবরকে
নির্মমভাবে মেরেছে পাকিস্তানি সেনারা। এখানকার
স্থানীয় কিছু বিহারী (রাজাকার)
ফৈয়াজ, জাফর এর ছোট
ভাই, আহম্মদ খান সহ
আরো অনেকে। ওরা
দুজন বাড়িতে এশার নামাজ
পড়তে দাঁড়াবে ঠিক সেই মুহূর্তে
বিহারীরা আবুল ভাই, মিজান
ভাই বলে ডাকতে থাকে। ডাকা
শুনে আমার স্বামী এবং
দেবর বাইরে বের হয়ে
যায়। কিছুক্ষণ
পরে আমরা এবং এলাকাবাসী
গুলির শব্দ শুনতে পাই। আমার
দেবর ওই জায়গায় মারা
যায়। গুলি
করার আগে অনেক নির্যাতন
করা হয় তাঁদেরকে।
বেয়নেট দিয়ে খোঁচায় আর
বন্দুকের বাট দিয়ে প্রচুর
মারে। বেশি
করে আমার দেবরকে তার
হাত গুলো সব ক্ষত
বিক্ষত করে দিয়েছিল ।
তার শরীরের সব জায়গায়
ক্ষত ছিল। ঘটনাস্থলে
আমার দেবর শহীদ হয়
আর আমার স্বামী হেঁচড়াতে
হেঁচড়াতে বাড়ির ভেতরে আসে। তাঁর
সারা শরীরে রক্তের স্রোত
বয়ে যেতে লাগল।
মাত্র আঁধা ঘন্টা জীবিত
ছিলেন । তিনি
আমাকে হত্যাকারীদের নাম বলে তার
পরপরই কলেমা পড়তে পড়তে
মারা যান। সেসময়
আমার বড় ছেলের বয়স
মাত্র চার বছর, ছোট
ছেলের দুই বছর আর
মেয়ের বয়স ৫ মাস। আমরা
সবাই সেই লাশের কাছে
জোরে কাঁদতে পারিনি।
কান্না শুনলে হয়তো আবার
এসে আমাদেরও মেরে ফেলবে।
আমরা সবাই লাশ নিয়ে
বসে আছি। আর
আমার দেবরের লাশ সেই
রাস্তায় পড়ে থাকল সারারাত। পরদিন
দুপুর বেলা কাজলের মা
আর বাবুর মা বিহারী
জাফরকে পায়ে জড়িয়ে ধরে
লাশটাকে বাড়ির ভেতরে দিতে
অনুরোধ করলে জাফর লাশটা
বাড়ির ভেতরের উঠানে এনে
শাবল দিয়ে গর্ত করে
বিছানা চাদর দিয়ে জড়িয়ে
কোনরকম ঠাসাঠাসি করে আমার স্বামীর
লাশটা শুইয়ে রেখে তারপরে
মাঝখানে একটা কাঠ দিয়ে
আমার দেবরের লাশটা দিয়ে
তার উপরে মাটি চাপা
দিল।
মো: রফিকুল ইসলাম (৫০)
পিতাঃ মোঃ শাহাদৎ হোসেন,
মাতা : আনোয়ারা বেগম, পেশা: চাকুরী
(চায়না ব্রাদার্স ) । ঠিকানাঃ
গ্রাম: ই-ব্লক,বাসা
নং- ৩৪, ডাক: শিক্ষাবোর্ড,
থানা: কোতোয়ালী, জেলা: যশোর ।
সাক্ষাতকার গ্রহণের স্থান ও তারিখ:
চায়না ব্রাদার্স, বেলতলা, যশোর। ১
জানুয়ারি ২০২১।
আমি তখন অনেক ছোট
। আমার ভাই
এবং মায়ের মুখে গল্প
শুনেছি । আমাদের
ই-ব্লক ৩৪ নম্বর
বাসা থেকে রাত ২
টার সময় পাকিস্তানি সেনারা
স্থানীয় অবাঙালিদের সহায়তায় আমার বাবাকে ধরে
নিয়ে যায় । আমার
মা ওদের পায়ে জড়িয়ে
ধরে। ওরা
শোনে না, আমার মায়ের
কথা । বাবা
ঘুম থেকে উঠার পর
যে অবস্থায় ছিলেন সেই অবস্থায়
নিয়ে যায়। তারপর
আমার মা পাশের বাড়ির
চাচার পা জড়িয়ে ধরে
বাবাকে উদ্ধার করার জন্য। কিন্তু
চাচাকে চাচি যেতে দেইনি। চাচি
বলেছিলেন, ‘তুমি গেলে তোমাকেও
ওরা মেরে ফেলবে ।
আমরা সেই রাতে ওই
চাচার বাড়িতেই অবস্থান করি । সকালবেলা
আমার মা বড় ভাইকে
এফ-ব্লকে বাবার দূর
সম্পর্কের এক মামার কাছে
পাঠালেন দাদাকে ডেকে আনতে। ভাই
এফ-ব্লকের দিকে যাবার
পথে ই-ব্লকের শেষে
শিশুপার্ক এর কাছে দেখেন
সারা রাস্তায় প্রচুর রক্ত ।
ভাই রক্ত দেখে দাদা
বাড়ি না গিয়ে বাড়ি
ফিরে আসে এবং মাকে
রাস্তায় অনেক রক্তের কথা
বলে । তখন
মা ভাইকে নিয়ে গিয়ে
দেখে রাস্তায় শুধু রক্ত আর
রক্ত । মা
প্রথম ম্যানহোল পার হয়ে দ্বিতীয়
ম্যানহোলের মধ্যে দেখে আব্বা
শুয়ে আছেন । গলা
কাটা আর বেয়োনেট দিয়ে
সারা বুক ঝাঁঝরা করে
ফেলা হয়েছে। কিন্তু
আব্বার হাতে সোনার আংটি
ছিলো সেটা নেইনি ।
আব্বার হাতেই ছিল ।
ওখান থেকে বাবাকে কয়েকজন
গামছা বেঁধে তুলে তারপর
বাবাকে দাফন করানো হয়
কারবালা কবরস্থানে । পরবর্তীতে
আমার মা আমাদের খুব
কষ্টে লালন-পালন করেছেন
।
জেসমিন আক্তার (৫৫)
পিতা: শাহ সুফী আল
কাদরী, মাতা: রাশিদা খাতুন,
পেশা: গৃহিণী । ঠিকানাঃ
গ্রাম: ডি-ব্লক, বাসা
নং- ১৬২, ডাক: শিক্ষাবোর্ড,
থানা: কোতোয়ালী, জেলা: যশোর ।
সাক্ষাতকার গ্রহণের স্থান ও তারিখ:
নিজ বাড়ি, ৪ জানুয়ারি
২০২১।
আমার বাবা শাহ সুফি
আল কাদরী, পীর সাহেব
হিসেবে পরিচিত। ৫
এপ্রিল সকাল দশটার দিকে
চাশতের নামায় আদায় করে
কোরআনের অজিফা করছিলেন।
সকালের নাস্তাও করেননি। হঠাৎ
চারিদিকে গুলির শব্দ শোনা
যাচ্ছিল। আমরা
মায়ের সাথে দাদা বাড়িতে
নড়াইলে বেড়াতে গিয়েছিলাম।
ঐ সময় বাবাকে রান্না
করে দিত এক খালাম্মা। খালাম্মা
দৌড়ে এসে বাবাকে বললেন,
হুজুর চারিদিকে গুলির শব্দ হচ্ছে
আপনি তাড়াতাড়ি পায়খানা ঘরের মধ্যে লুকিয়ে
পড়েন। কিন্তু
দরজার ছিটকানি দিয়েন না।
বাবা বললেন, ওরা আমাকে
মারবে কেনো? এমতাবস্থায় কিছু
লোক এসে দরজা খুলতে
বলে । আমার
বাবা যেহেতু পীর সাহেব
ছিলেন সেহেতু বিভিন্ন লোক
আমাদের বাসায় আসা-যাওয়া
করত । আমার
বাবা তখন উঠে দরজা
খুলে দেন । প্রায়
১০/১২ জন বিহারী
যুবক বাড়ির ভিতরে প্রবেশ
করে । সাথে
যে চারটি রিক্সায় তারা
এসেছিল সেই চারজন রিকশাচালককে
বাড়ির ভিতরে ডেকে আনে
। তারা প্রথমে
বাবাকে ঘাড়ে দুটো কোপ
মারে । তখন
প্রাণভয়ে প্রাচীর টপকে বাবা পালাতে
চেষ্টা করলে পেটে চাকু
মারলে ভুড়ি বের হয়ে
যায় । কিন্তু
আমার বাবা তখনও জীবিত
ছিল । বাবা
আমাদের বাড়ির এক কোনায়
আমাদের নিরাপত্তার জন্য একটি ট্রেঞ্চ
খুঁড়ে রেখেছিলেন সেই ট্রেঞ্চ এর
ভিতরে বিহারী যুবকেরা বাবাকে
জ্যান্ত ফেলে দেয় এবং
সাথে সাথে ঐ চারজন
রিকশাচালককে একই ভাবে মেরে
ট্রেঞ্চ এর ভিতরে ফেলে
তার উপরে বাড়ির বিভিন্ন
আসবাপত্র ফেলে মাটি চাপা
দিয়ে দেয় । আমরা
চার বোন। আমি
তখন অনেক ছোট ।
আমরা মায়ের সাথে ছিলাম
। পরে এসে
গল্প শুনি । আমাদের
পাশের বাড়ি একটা জোড়া
খেজুর গাছ ছিল।
সেই খেজুর গাছ থেকে
একটা ছেলে সবকিছুই দেখেছিল
। তার কাছ
থেকে আমি এবং আমার
মা বোনেরা গল্প শুনেছি
। কিছুদিন আগে
তিনি মারা গেছেন।
মো. কওসার আলী (৭৫)
পিতা: আব্দুর শুকুর, মাতা:
রাজেফা খাতুন, পেশা: চাকরি
(অবসরপ্রাপ্ত)। ঠিকানাঃ
গ্রাম: এ-ব্লক, বাসা
নং- ১৯০, ডাক: শিক্ষাবোর্ড,
থানা: কোতোয়ালী, জেলা: যশোর।
সাক্ষাতকার গ্রহণের স্থান ও তারিখ:
নিজ বাড়ি, ২৮ ডিসেম্বর
২০২০।
অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত চাঁদের মত নিষ্পাপ বোন আমার জানে খাতুন। সারাদিন হেসে খেলে সবাইকে মাতিয়ে রাখতো। যুদ্ধের দামামা বাজলেই আমরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে মার্চের শুরুতে পরিবারের সকলে গ্রামের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিন্তু বড় বোন (শহীদ আবুল হোসেনের স্ত্রী) সালেহা স্বামীর বাড়িতে গ্রাম থেকে আসার সময় ছোট বোন জানে খাতুনকে উপশহর তার স্বামীর বাড়িতে নিয়ে আসে। কিন্তু স্থানীয় বিহারীদের চোখে চটপটে মেয়েটির উচ্ছলতা ধরা দেওয়ায় তাঁকে পাকিস্তানি সেনাদের গাড়িতে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায়। তারপর স্থানীয় বিহারীদের মুখে জানতে পেরেছিলাম তাঁকে খুলনা পাকিস্তানি ক্যাম্পে রেখে তিন মাস পাশবিক নির্যাতনের পর পুনরায় ফেরত আনে উপশহর সালভিশন আর্মি ক্যাম্পে। এখানেও চলতে থাকে একই রকম পাশবিক নির্যাতন। একপর্যায়ে চপলা চঞ্চলা কিশোরী বোন আমার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। কিন্তু পাষন্ড পাকস্তানি সেনারা মৃত লাশটিকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল উপশহর আমবাগানে। তাঁর শরীরের কিছু অংশ শেয়াল কুকুরে খেয়ে নেয়। দয়ালু কিছু বিহারী আর উপশহরের কয়েকজন ছেলে উক্ত লাশ উপশহর কবরস্থানে মাটি চাপা দেয়। এর কিছুদিন পরে আমার বড় বোন সালেহার স্বামী ও দেবরকে স্থানীয় বিহারীদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনারা নির্মম অত্যাচারের পর গুলি করে হত্যা করে।
মো. আব্দুল লতিফ (৫৮)
পিতাঃ মোঃ আব্দুল খালেক,
মাতা: ফাতেমা খাতুন, পেশা
: শিক্ষকতা । ঠিকানাঃ গ্রাম:
বিরামপুর, ডাক: শিক্ষাবোর্ড, থানা:
কোতোয়ালী, জেলা: যশোর।
সাক্ষাতকার গ্রহণের স্থান ও তারিখ:
নিজ বাড়ি, ১২ জানুয়ারি
২০২১।
যুদ্ধ শুরু হবার পর
থেকে উপশহরে অবাঙালিরা লুটপাট
শুরু করে। আর
সেই সূত্র ধরে অবাঙালীরা
আমাদের বাড়ি আসে জিনিসপত্র
লুট করার জন্য।
আমার বাবা হয়তো সেই
লুট করায় বাধা দেয়। তখন
তারা বাবাকে রান্না ঘরের
চালের সাথে বেঁধে আগুন
ধরিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে দেয়। আমাদের
বাসায় লোমহর্ষক ভাবে হত্যা করা
হয় আমার বাবাকে।
আমার বাবা পুড়ে ছাই
হয়ে যায়। কয়েকদিন
পর আমার বড় ভাই
এসে আমার বাবার হাড়গোড়
পড়ে থাকতে দেখে সেগুলো
পারিবারিক কবরস্থানে মাটি চাঁপা দিয়েছিল।
মো: আইয়ুব আলী মোল্লা
(৬৭)
পিতা- আখেজ আলী মোল্লা,
মাতা: সুকজান বিবি, পেশা
: ব্যবসা । ঠিকানাঃ গ্রাম:
শেখহাটি, ডাক: শিক্ষাবোর্ড, থানা:
কোতোয়ালী, জেলা: যশোর।
সাক্ষাতকার গ্রহণের স্থান ও তারিখ:
জামরুলতলা বাজার, নিজ দোকান,
১২ জানুয়ারি ২০২১ ।
যুদ্ধকালীন ৮ এপ্রিল আমরা
শুনতে পায় চারিদিকে গুলির
আওয়াজ আর মানুষের আর্তনাদ। তখন
প্রায় দুপুর দুইটা বাজে।
সবাই যার যার মত
দৌড়ে পালাচ্ছি। আমি
এক ঝোপের মধ্যে লুকালাম। সেখান
থেকে সব দেখতে পাচ্ছিলাম। উপশহর
শিল্প এলাকায় আমার বড়
ভাই চাঁদ আলী মোল্লা
ও তাঁর তিন বছরের
শিশু কন্যা সুন্দরীকে নিয়ে
পালানোর চেষ্টাকালে পাকিস্তানি সেনারা গুলি করে
হত্যা করে। পরপর
তিনটি গুলি করে।
তাঁর পেটে একটা গুলি
বুকে দুটি গুলি, যেটা
তাঁর সন্তানের শরীর ছেদ করে
তাঁর বুক ভেদ করে। সঙ্গে
সঙ্গে শিশুকন্যা সুন্দরী মারা যায়।
আর আমার ভাইকে তক্তার
উপর শুইয়ে রাতে তালবাড়িয়া
ইবাদ আলী সরদারের বাড়ি
নিয়ে যাওয়া হয়।
তখন কোন চিকিৎসার সুযোগ
না থাকায় গুলি বের
করা সম্ভব হয়নি এবং
সেই রাতেই ভাই মারা
যায়। ভাইকে
ঐ গ্রামেই দাফন করা হয়। এছাড়া
ঐদিন উপশহর শিল্প এলাকায়
আব্দুর রশীদ ও ওমেদালীকে
তারা গুলি করে মারে। এবং
ওমেদালীর ছেলের বৌ ও
শাশুড়িকে নির্যাতন করে। পুরো
গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়।
মূল্যায়ন
উপশহরের গণহত্যা একটু বিচ্ছিন্ন ধরনের
গণহত্যা । এই
গণহত্যাটি একই জায়গায় সংঘটিত
হয়নি । বিভিন্নভাবে
বিভিন্ন জায়গায় সংঘটিত হয়
। উপশহরের আমবাগানে
শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিফলক
নির্মিত হলেও বর্তমানে ভেঙে
গেছে সেটা সংরক্ষণের কোন
ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
পারভীনা খাতুন
শিক্ষক ও গবেষক
সময় জার্নাল/ইম
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল