এহসান রানা, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় একটি জন্মনিবন্ধন নিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় শেখর ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে দুইপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত রবিবার সন্ধ্যায় শেখর ইউনিয়নের সহস্রাইল বাজারে এ ঘটনা ঘটেছে। এ সময় অফিসে টাঙানো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুর করার অভিযোগ ও রয়েছে।
এ ঘটনায় (সোমবার ১০ই অক্টোবর ) ১০ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক আরো ৩০-৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে শেখর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল আহমেদ বাদি হয়ে একটি মামলা করেন। মামলা নম্বর ১৩। মামলার অজ্ঞাতনামা আসামি আব্দুল্লাহ নামে একজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে সোমবার বিকেলে আদালতে পাঠিয়েছেন।
সরেজমিনে গেলে থানা ও এলাকা সূত্রে জানা যায়, ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে। এজন্য নতুন ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জন্মনিবন্ধন সনদপত্র থাকা প্রয়োজন। অন্যান্য স্থানের ন্যায় বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের বিভিন্ন কম্পিউটার দোকানদাররা জন্মনিবন্ধন সনদের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট থেকে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্মনিবন্ধন সনদ প্রিন্ট করে দিচ্ছেন কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে উপজেলার শেখর ইউনিয়নের সহস্রাইল বাজারের রংধনু কম্পিউটারের মালিক কিবরিয়া মোল্যা জাল জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। জানা যায় গত রবিবার (৯ অক্টোবর) রংধনু কম্পিউটার থেকে প্রিন্টকৃত কয়েকটি জাল জন্মনিবন্ধন সনদপত্র নিয়ে সংশ্লিষ্টরা ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ে গেলে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ কম্পিউটার ব্যবসায়ী কিবরিয়াকে জাল জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করতে নিষেধ করেন। কিবরিয়ার ভুল হয়েছে স্বীকার করলে এক পর্যায়ে বিষয়টি মিমাংসা হয়ে যায়। পরে বিকেলে কিবরিয়ার ভাই সুমনকে চেয়ারম্যানের অফিসে ডেকে নিয়ে চেয়ারম্যানসহ তার লোকজন সুমনকে লাঞ্চিত করে। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যানের লোকজন ও কম্পিউটার দোকানদার কিবরিয়ার লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে চেয়ারম্যানের অস্থায়ী কার্যালয়ের আসবাবপত্রসহ বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সংঘর্ষে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এ সময় চেয়ারম্যানের অফিসে থাকা ১টি এইচ বি কোম্পানীর ল্যাপটপ, প্রিন্টারসহ ড্রায়ারে থাকা হোল্ডিং ট্যাক্সের ২ লক্ষ ৪৫ হাজার ও বাজার বণিক সমিতির নগদ ১ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা লুট করা হয়েছে বলে মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় সোমবার বিকেলে চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ বাদি হয়ে সৈয়দ জিল্লুর রহমান (৪৮), শেখর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মো. রুমান মোল্যা, মো. সুমন মোল্যা, কিবরিয়া মোল্যা ও ঢাকা মহানগর উত্তরের ছাত্রলীগ কর্মী সৈয়দ মানিকসহ ১০ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত ৩০-৪০ জনের বিরুদ্ধে বোয়ালমারী থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে আব্দুল্লাহ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে ফরিদপুর আদালতে পাঠিয়েছে।
মামলার ১ নম্বর আসামি সৈয়দ জিল্লুর রহমান ও যুবলীগ নেতা ২ নম্বর আসামি রুমান মোল্যা জানান, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সহস্রাইল পাবলিক পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে একটি ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান কামাল আহমেদের সাথে ঝামেলা চলে আসছে। তারই জের ধরে জন্মনিবন্ধন জালিয়াতি ষড়যন্ত্র করে আমাদের সমর্থক কিবরিয়ার সাথে। রবিবার বিকেলে কম্পিউটার দোকানদার কিবরিয়ার ভাইকে মারধর করলে আমরা এগিয়ে গেলে দুইপক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। তবে পুলিশের উপস্থিতিতে এলাকা শান্ত হয়।
তারা বলেন, এ ঘটনায় কোন ভাঙচুর হয়নি, ঘটনার পর চেয়ারম্যান ও তার ভাই মির্জা মিলন প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর দুইটি ছবি কিনে এনে সেই ছবি ও চেয়ারম্যানের অফিস তারা নিজেরা ভাঙচুর করে আমাদেরকে ফাঁসিয়েছে। চেয়ারম্যানের অফিসের সিসি ফুটেজ পরীক্ষা করলে সব রহস্য বের হবে। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত চেয়ে বিচার চেয়েছেন।
এ ব্যাপারে শেখর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ জানান, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিএনপির কর্মীরা আমাকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। জাল জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করতে নিষেধ করায় তারা আমার কার্যালয়ে টাঙানো বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি এবং আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে গেছে। এছাড়া ড্রয়ারে রাখা হোল্ডিং ট্যাক্স থেকে সংগৃহীত ২লাখ ৪৫ হাজার টাকা এবং বাজার বণিক সমিতির ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা লুট করেছে।
সোমবার বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবু তাহের জানান, দ্রুত বিচার আইনে সোমবার এ ঘটনায় বোয়ালমারী থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে আব্দুল্লাহ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলমান রয়েছে। মূল ঘটনা উদঘাটন করে পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বর মাসে সহস্রাইল খেলার মাঠে একটি ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নজরুল কাজী ও চেয়ারম্যান কামাল আহমেদের সাথে ঝামেলা চলছিলো। ওই খেলাকে কেন্দ্র করে ওই মাসে কয়েকবার সংঘর্ষ বাধতে গেলে উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ ও স্থানীয় গন্যমান্যদের উপস্থিতিতে এলাকা শান্ত হয়। ওই সময় এক পাশের খেলার আয়োজক ছিলেন ব্যবসায়ী নজরুল কাজী, সদ্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. ইস্রাফিল মোল্যা, যুবলীগ নেতা রুমান মোল্যাগং একই মাঠে অপরপাশের খেলার আয়োজক ছিলেন শেখর ইউপির চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ রাসেল রেজাগং।
এমআই