মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহারে বাড়ছে খাদ্য উৎপাদন

শুক্রবার, অক্টোবর ১৪, ২০২২
কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহারে বাড়ছে খাদ্য উৎপাদন

মোঃ এমদাদ উল্যাহ, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা):

মানুষের মৌলিক চাহিদার প্রধান হলো ‘খাদ্য’। আর খাদ্য খেয়ে মানুষ বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। প্রযুক্তির ব্যবহারে খাদ্য উৎপাদন সহজ হওয়ায় নিত্য নতুন খাদ্য পাচ্ছে মানুষ। ফলে সময় ও খরচ অনেকাংশে কমেছে। উপকৃত হয়েছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামসহ সারাদেশের মানুষ। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। এদেশের ৮০ ভাগ লোক গ্রামে বাস করে। কৃষিই তাদের প্রধান জীবিকা। কৃষকরা চাষাবাদের মাধ্যমেই তাদের সংসার চালান। মুলত কৃষি খাত থেকে আমাদের খাদ্যের ব্যবস্থা হয়ে থাকে। খাদ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রত্যেক রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সুস্বাস্থ্যের জন্য জনপ্রতি আমাদের প্রতিদিন প্রায় ২৫০ গ্রাম শাকসবজি, ১২৫ গ্রাম ফল, প্রায় ৫০ গ্রাম প্রোটিন, ৩৫ থেকে ৪০ গ্রাম শর্করা, ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম আশ, ১ চা চামচের নিচে আয়োডিনযুক্ত লবন খাওয়া দরকার। অথচ আমরা প্রতিদিন গড়ে মাত্র ৭০ থেকে ৮০ গ্রাম শাকসবজি, ৪০ থেকে ৪৫ গ্রাম ফল, ১৫ গ্রাম শর্করা আহার করে থাকি। খাদ্যের প্রাপ্যতা, প্রবেশাধিকার ও পুষ্টির সামগ্রিক রুপকে বলা হয় খাদ্য নিরাপত্তা।

একটি দেশ, সমাজ বা পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি শুধুমাত্র ভাত-প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, তথা চাল বা ধান উৎপাদনে কোনো দেশের স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্জনকে না বিবেচনা করে, পুষ্টি সরবরাহকারী সকল ধরনের খাদ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তাকেও বুঝিয়ে থাকে। খাদ্য নিরাপত্তা হলো এমন এক অবস্থা, যখন খাদ্যের যথেষ্ট মজুদ থাকবে, মানুষের কাছে সে খাদ্যের সহজপ্রাপ্যতা থাকবে এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সে খাদ্য পাওয়া যাবে। কাজেই খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধি এবং যথাযথ পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা খাদ্য নিরাপত্তার অন্যতম শর্ত। প্রযুক্তির কারণে অনেক কারখানায় মানুষের হাতের স্পর্শ ছাড়াই তৈরি হচ্ছে উন্নত মানের খাবার। 

এদিকে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে কৃষি ব্যবস্থা। বীজতলা থেকে উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে রয়েছে প্রযুক্তি। যে লাঙল-জোয়াল আর ‘হালের বলদ’ ছিল কৃষকের চাষাবাদের প্রধান উপকরণ সে জায়গা এখন দখল করে নিয়েছে ‘আধুনিক লাঙল’ ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার, ব্রডকাস্ট সিডার পাওয়ার রিপার মেশিন ইত্যাদি। কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষাবাদের কারণে একদিকে যেমন সময়, শ্রম ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে তেমনি ফসলের উৎপাদনও বেড়েছে। ফলে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের। কেবল জমি চাষই নয়, জমিতে নিড়ানি, সার দেয়া, কীটনাশক ছিটানো, ধান কাটা, মাড়াই, শুকানো ও ধান থেকে চাল সবই আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে। 

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের আবাদি জমির ৯০ থেকে ৯২ ভাগ যান্ত্রিক প্রযুক্তিতে চাষ হচ্ছে। যদি চাষাবাদের সব পর্যায়ে অর্থাৎ জমি তৈরি থেকে শুরু করে চাল উৎপাদন পর্যন্ত পুরোপুরি আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় তাহলে রীতিমতো বিপ্লব ঘটবে কৃষিতে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম সংযোজনের একটি হচ্ছে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসল কাটা, খোসা থেকে দানা আলাদা করা যায়। ছোট আকৃতির ধানি জমি চাষেও রয়েছে এর ব্যবহার। এছাড়া বীজ বপন, সার প্রয়োগ ও কীটনাশক ছিটানোর জন্যও রয়েছে ব্রডকাস্ট সিডার। নির্দিষ্ট অবস্থানে বীজ বপনের জন্য আছে সিডড্রিল। জমির মাটি সমান করার জন্য ল্যান্ড লেভেলার, এক যন্ত্র দিয়ে একইসঙ্গে চাষ ও বেড তৈরি এবং বীজ বপন করা যন্ত্র বেড প্লান্টার, আলু গ্রেডিং যন্ত্র, গবাদিপশুর জন্য খড় কাটার যন্ত্র, নন-টিপিং ট্রেইলর, টিপিং ট্রেইলর, ওয়াটার ট্যাঙ্ক, অয়েল ট্যাঙ্ক, আলু বপন যন্ত্র, গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্র, নিড়ানি যন্ত্র, ফুড পাম্প। জমির শক্ত মাটি কর্ষণের জন্য যন্ত্র, ধান কিংবা অন্যান্য ফসলি বীজ শুকানোর জন্যও ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রায়ার যন্ত্র। ধান, গম, ভুট্টা শুকাতেও ব্যাচ ড্রায়ার নামক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে।

এছাড়াও গম, ভট্টা সহ শাকসবজি চাষে কৃষক হাইব্রিড জাতের বীজ ব্যবহার করে ফসল উৎপাদনে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দিয়েছে। মাটির স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখেই জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি এক্ষেত্রে কম্পোস্ট সার, ভার্মিকম্পোস্ট এবং কুইক কম্পোস্ট খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। তাছাড়া কৃষকেরা মাটি পরীক্ষা করে সার প্রয়োগ করছে। ফলে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা হচ্ছে। অনলাইন ফার্টিলাইজার সুপারিশ সহ উপজেলা সার নির্দেশিকা প্রযুক্তিগুলো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মীর মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে। ফলে ফসলের উৎপাদন বাড়ছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে। সার ব্যবহারে গুটি ইউরিয়ার ব্যবহার, ডিএপি সারের ব্যবহার বৃদ্ধি, এমওপি সারের ব্যবহার বৃদ্ধি, এলসিসি প্রযুক্তিগুলো মাঠে খাদ্য উৎপাদনে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করছে। কৃষকরা সরকারের কৃষি কল সেন্টার ১৬১২৩ নাম্বারে কল করে কৃষি বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারে। 

এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ আবদুল হালিম শনিবার বলেন, ‘কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বাড়ছে। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, ফসলের নতুন জাত আবিস্কারসহ নতুন নতুন সেবা সম্পর্কে কৃষকরা জানতে পারছে। তাছাড়া প্রযুক্তির ব্যবহারে সময় ও অর্থ ব্যয় কমেছে বলেও তিনি মনে করেন’।

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল