স্পোর্টস ডেস্ক:
একযোগে সবাই মাঠের ভেতরেই লুটিয়ে পড়ছেন সেজদায়। আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুল করলো না আফ্রিকার মুসলিম দেশ মরক্কো। এই বিশ্বকাপের প্রত্যেক ম্যাচেই তারা ম্যাচ শেষে সেজদায় যেয়ে আল্লাহকে সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ দিয়ে আসছেন। এবার ইতিহাস গড়ার ম্যাচে পর্তুগালকে হারিয়েও একইভাবে কৃতজ্ঞতা জানালেন মরক্কোর ফুটবলাররা। প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠল মরক্কো।
‘ইটস টাইম ফর আফ্রিকা (সময়টা এবার আফ্রিকার)’—পর্তুগালকে মরক্কো হারানোর পর নিজের বিখ্যাত সেই গানটাকে এভাবেই মনে করিয়ে দিলেন পপ তারকা শাকিরা। হ্যাঁ সময়টা তো আফ্রিকারই বটে। প্রথমবারের মতো আফ্রিকার কোনো দেশ ও প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠল মরক্কো।
ইতিহাস গড়া জয়ের পর মরক্কোর খেলোয়াড়দের আনন্দ যেন বাঁধ মানছিল না। নতুন এই ইতিহাস গড়ার আনন্দে ভাসছে দেশটির সমার্থকেরা। শুধু দোহা কিংবা মরক্কোর রাজধানী রাবাতেই নয়, মরক্কোর উৎসবের রং ছড়িয়ে পড়েছে ব্রাসেলসে-তিউনিসেও। বেলজিয়াম ও তিউনিসিয়ার মরক্কো ভক্তরাও উৎসবে মেতেছেন।
কাতার বিশ্বকাপ যেন শুরু থেকেই বিস্ময় নিয়ে হাজির হয়েছে এবার। গ্রুপ পর্বের পর বিস্ময় পরের রাউন্ডগুলোর জন্যও জমা রেখেছিলো কাতার বিশ্বকাপ। দ্বিতীয় রাউন্ডে সেই বিস্ময় দেখিয়েছে আটলাসের সিংহরা। কাতার বিশ্বকাপের বড় চমক মরক্কো। আসরে এখন পর্যন্ত অপরাজিত দল তারা।
এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত প্রতিপক্ষের কোনো ফুটবলার তাদের বিপক্ষে গোল করতে পারেননি। একমাত্র গোলটি তারা খেয়েছে আত্মঘাতী গোল হিসবে। এখন পর্যন্ত কোন দলই তাদেরকে হারাতে পারেনি।
বিশ্বকাপে মরক্কো রুপকথার শুরুটা হয় ক্রয়োশিয়াকে রুখে দিয়ে। প্রথম ম্যাচে ক্রয়োশিয়ার সাথে ড্র এর পর হারিয়ে দেয় টুর্নামেন্টের ফেবারিট বেলজিয়ামকে। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে মরক্কো পড়ে স্পেন বাধাঁয়। তখন ভাবা হচ্ছিল এখানেই শেষ আফ্রিকান এটলাস লায়ন্সদের রুপকথা। কিন্তু তারা বিশ্বকাপে এসেছে যেন চমক দেখাতে। এর আগে বিশ্বকাপে একবারই গ্রুপ পর্ব পেরোতে পেরেছে মরক্কো। সেটি ১৯৮৬ বিশ্বকাপে। এর বাইরে তিনবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে দলটি।
স্পেনের মত দলকে টাইব্রেকারে বিদায় করে দিয়ে। মরক্কো জন্ম দিল নতুন রুপকথার গল্প। এখানেই থেমে থাকেননি তারা। আসরের দুর্দান্ত যে পর্তুগাল দ্বিতীয় রাউন্ডে সুইজারল্যান্ডের জালে ৬বার বল জড়িয়েছিলো তাদের হারিয়ে মরক্কোর সেমিফাইনালে চলে যাওয়া ছিল বিশ্বকাপে নতুন বিস্ময়। প্রথমবারের মতো আফ্রিকার কোনো দেশ ও প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠল মরক্কো।
ফুটবল বিশেষজ্ঞরাও মরক্কোর এই জয়কে দেখছেন বিশেষভাবে। এই জয়কে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে সাবেক স্কটিশ উইঙ্গার প্যাট নাভিন বলেছেন, ‘এটা ঐতিহাসিক, একবারেই অপ্রত্যাশিত। ভুলে গেলে চলবে না, ওরা সুন্দর ফুটবলও খেলেছে। হ্যাঁ, ওরা রক্ষণাত্মক ছিল। তবে ওদের সামর্থ্যের কথাও বলতে হবে। ওরা যখন সুন্দর ফুটবল খেলেছে, সেটা মিডফিল্ড থেকে শুরু হয়েছে।’
আফ্রিকান এটলাস লায়ন্সদের এমন ঈর্ষণীয় পারফরম্যান্স সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে তাদের এমন পারফরম্যান্স আফ্রিকান দলগুলোকে নিশ্চয়ই নতুন করে স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করবে।
সময় জার্নাল/এমআই