মাইদুল ইসলাম:
ছোট-বড় পাহাড়, এই উঁচু তো এই নিচু আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা। লোকশ্রুতি আছে রাস্তায় নাকি দেখা যায় বন্য হাতিও। একদিকে পাহাড় ও লেকের ছোট ছোট সবুজ দীপে জল কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে মানুষের জীবনযাত্রা অন্যদিকে লেকের অ থৈ পানিতে রয়েছে নান প্রজাতির মাছ ও বৈচিত্রপূর্ণ জীববৈচিত্র যা আপনাকে প্রতিক্ষণে মুগ্ধ করবে।
বলছিলাম পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে নৈসর্গিক সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জেলা রাঙ্গামাটির কথা। শীতের এ সময়ে ঘুরে আসতে পারেন উপার সুন্দরের রাঙামাটি থেকে। রাঙামাটিতেই রয়েছে এশিয়ার সবচেয়ে বড় কৃত্রিম হ্রদ কাপ্তাই। যার আয়তন ১১ হাজার বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।
কৃত্রিম হলেও প্রকৃতি যেন তার সব সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে কাপ্তাই হ্রদকে। তাইতো কাপ্তাই হ্রদকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে রাঙামাটির বেশিরভাগ পর্যটন। একদিনে ঘুরে দেখতে পারেন কাপ্তাইলেক কেন্দ্রিক এসকল পর্যন্ত স্থানগুলো।
আসবেন যেভাবে
ঢাকা থেকে সরাসরি রাঙামাটি আসতে পারবেন বাসে। নন এসি বাসে ভাড়া পড়বে ৮০০-৯০০ টাকা, আর এসি বাসে ১৫০০-১৭০০ টাকার মধ্যেই যেতে পারবেন সেখানে। এছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি কাপ্তাই যেতে পারেন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বাস বা ট্রেনে যেয়ে সেখান থেকে পৌঁছাতে পারবেন।
রাঙামাটির রিজার্ভ বাজার, বনরুপা বাজার থেকে সারাদিনের জন্য ২০০০-৩০০০ হাজার টাকার মধ্যে ট্রলার পেয়ে যাবেন যেগুলোয় করে সব কিছু ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য।
যেসকল স্থান দেখতে পাবেন
স্বর্ণ মন্দির ও আদিবাসী বাজার
স্বর্ণ মন্দির ও আদিবাসী বাজার অবস্থান পাশাপাশি। রাঙামাটি শহর থেকে ট্রলারে করে অল্প সময়েই যাওয়া যায় এই দুটি স্থানে। ট্রলার থেকে নামলে দেখতে পাবেন একপাশে স্বর্ণ মন্দির আরেকপাশে আদিবাসী বাজার। পাহাড়ি রাস্তা মাড়িয়ে ওপরে উঠলেই দেখা মিলবে এই মন্দিরের। আর আদিবাসী বাজার থেকে কিনতে পারেন আদিবাসীদের বানানো বিভিন্ন পণ্য।
শুভলং ঝর্ণা
শুভলং ঝরনা দেখতে যাওয়ার পথের সৌন্দর্য আপনাকে আবেগময় করে তুলতে পারে। দুই পাহাড়ের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া লেক আপনাকে বিমোহিত করবে। শুভলং ঝর্ণা রাঙ্গামাটি সদর হতে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে যেটির অবস্থান। বাংলাদেশের অন্যান্য সব ঝরনার মতো শুভলং ঝরনাতেও এ সময়ে পানি খুব কম থাকে। তবে পানি না থাকলেও এখানের পরিবেশ পর্যটকদের মোহিত করে। বর্ষা মৌসুমে প্রায় ১৪০ ফুট এ উঁচু পাহাড় থেকে বিপুল জলধারা কাপ্তাই লেকে আছড়ে পড়ে। শুভলং ঝরনার কাছেই প্রায় ২০০০ ফুট উঁচু ‘শুভলং পাহাড়’ বা ‘টিএন্ডটি পাহাড়’ আছে। পাহাড়ের চূড়ায় আছে সেনাক্যাম্প ও একটি টিঅ্যান্ডটি টাওয়ার। পাহাড়ে ওঠার জন্য আছে চমৎকার সিঁড়ি। এই পাহাড়ের উপর দাঁড়ালেই দেখতে পাবেন পুরো রাঙ্গামাটি জেলা কাপ্তাই লেকের পানির উপর ভেসে আছে।
জুম পাহাড়
জুম পাহাড়েও রয়েছে আদিবাসীদের বাজার। এছাড়াও এখানে একটি জাদুঘর রয়েছে আদিবাসীদের।
আদিবাসী পল্লী
চারদিকে লেক এর মাঝে ছিমছাম ছোট গ্রাম। আদিবাসী এ গ্রামে নাগরিক কোলাহল নেই। লেকের মাঝে মাঝে ঘুরতে ঘুরতে এই গ্রামে নামলে আপনাকে অন্যরকম প্রশান্তি দিবে। এছাড়াও বিভিন্ন পাহাড়ি ফল খেতে পারবেন এখানে।
পলওয়েল পার্ক
রাঙামাটির অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে সাজানো-গোছানো লেকঘেরা পলওয়েল পার্ক। পলওয়েল পার্কে আছে বৈচিত্রময় ল্যান্ডস্কেপ, অভিনব নির্মাণশৈলী ও একটু বসে আরাম করার জন্য ব্যতিক্রম স্থান, ঝুলন্ত ব্রিজের ছোট্ট রেপ্লিকা সহ আরও অনেক কিছু। এছাড়া এই পার্কের অন্যতম আকর্ষণ হলো লাভ পয়েন্ট। যেটা ভালোবাসার অন্যন্য নিদর্শন।
ঝুলন্ত সেতু
কাপ্তাই লেকের দুপাড়ের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি করে দিয়েছে ঝুলন্ত সেতু। যাকে বলা হয় 'সিম্বল অব রাঙামাটি'। রাঙ্গামাটিতে ভ্রমণে আসা প্রায় সবাই এটি দেখতে আসেন। ব্রিজের একপাশে পাহাড়ের উপর শিশুদের বিনোদনের জন্য আছে দোলনা, স্লিপার ইত্যাদি।
ঝুলন্ত ব্রিজ দেখতে বছরের যে কোনো সময়ই যেতে পারেন। তবে বর্ষায় অতি বৃষ্টি হলে অনেক সময় ঝুলন্ত ব্রিজের উপর পানি উঠে যায়। তখন ঝুলন্ত ব্রিজের উপরে যাওয়া মানা।
এছাড়াও হাতে সময় থাকলে কাপ্তাই গিয়ে কাপ্তাই বাঁধ, কর্ণফূলী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র, নেভি ক্যাম্প পিকনিক স্পট, জুম রেস্তোলা পিকনিক স্পট, ওয়াগ্গাছড়া টি, চিৎমরম বৌদ্ধ মন্দির, ইত্যাদি জায়গা থেকে অবশ্যই ঘুরে আসবেন।
এমআই