এম.পলাশ শরীফ, বাগেরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গুলিশাখালী গ্রামের বাসিন্দা মিলি আক্তার। ১৯৯২ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি তার জন্ম। এখন (২০ ফেব্রæয়ারি) তার বয়স ৩১ বছর ৫দিন। মিলি আক্তারের বয়স এখন ৩০ বছর। মিলি তার মা ফরিদা ইয়াসমিনের গর্ভে থাকা অবস্থায় বাবা নজরুল ইসলাম নিরুদ্দেশ হয়ে আর ফেরেননি। মিলিকে ২ বছর বয়সে নানা নানির কাছে রেখে সৌদি আরব চলে যান মা ফরিদা ইয়াসমিন। সেখানে কাটে তার একটানা ২৭ বছর। বাড়ি ফিরে দেখেন তার মিলির বয়স ঠিক বেড়েছে কিন্তু শরীরের উচ্চতা বাড়েনি। হরমোনজনিত কারনে টানা ৩০ বছরে মিলি আকাতারের শরীরের উচ্চতা হয়েছে মাত্র (২৮ ইঞ্চি) ২ ফুট ৪ ইঞ্চি। মিলির মা সৌদি আরবে থাকাকালে ২য় বিয়ে করেছেন। দু’বছর পূর্বে সেই স্বামীকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
বর্তমানে এ পরিবারের ক্ষুদ্র মিলির প্রতিদিনের জীবনযাপন রাত ১১ টায় সবার সাথে ঘুমাতে যায় সকাল ১২ টায় ঘুম থেকে উঠে নিজেই দাত বেরাস, গোসল সেরে নেয়। তবে, বেশীরভাগ সময়ই ছোট ভাইয়ের কাছেই থাকেন সে। বৃদ্ধ মাতা মোসাঃ ফরিদা ইয়াসমিন অসুস্থ তাও সে বুঝে ওঠে সময় অসময় বিরক্ত করেনা। মাঝের মধ্যে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অপচ্ছন্দের কিছু হলে চট করে রেগে যান। মোবাইলে গেম খেলা, গান শোনা, নাচ করা তার ইচ্ছ। মিলি মাছ, মাংস, পিঠা, ফলের মধ্যে আপেল ও কমলা খেতে বেশ পছন্দ করে। মায়ের কাছে বিভিন্ন সময়ে তার দাবি আমদের এরকম ছোট ঘর কেনো? সিঁড়ি দিয়ে দোতলা ঘর হবে কবে, সে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা নামা করবে। গবাদী পশু গরুর লালন পালন করার ইচ্ছা তার। কখনও বিবাহ হবে না এ রকম অনেক প্রশ্ন বিভিন্ন সময়ে তার।
সংবাদকর্মীদের কাছে পেয়ে ক্ষুদে মানুষ মিলির মা মোসাঃ ফরিদা ইয়াসমিন কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ৫ মাস বয়সে মিলিকে গর্ভে রেখে এবং সাড়ে ৩ বছর বড় মেয়ে পলি আক্তারকে ওর বাবা ফেলে রেখে চলে যায়। অভাবের সংসারে অনেক যুদ্ধ করে বড় মেয়েকে কোনমতে লেখা পড়া করিয়ে বিবাহ দেওয়া হয়। মিলি জন্ম থেকেই ওকে কোন চিকিৎসা ও ভাল খাবারও দিতে পারিনী। নিজে পরে আবার বিবাহ করি এ দুই মেয়েকে নিয়ে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাটা উপজেলার বর্তমান স্বামীর বাড়ি। সেখানেও বসবাস করতে পারেনি। স্বামীকে নিয়ে নিজের জন্মস্থানে ফিরে এসেছি। এ ঘরে একটি মাত্র ছেলে কলেজ পড়–য়া অর্থের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে তারও পড়ালেখা। ৪২ শতক জমি ক্রয় করে বসতভিটাটুকুই এখন সম্বল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন ছেলের জন্য সরকারি একটি চাকুরি হলে সংসারে সবাইকে নিয়ে দু’মুঠো খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা যেতো।
মিলিকে সাথে নিয়ে এখন ৫ জনের সংসার তার। মিলি অনেকটা স্বাভাবিকভাবে কথা বলেন, শোনেন এবং মাকে বাড়ির কাজে সহযোগীতা করেন। লেখা পড়া করবেন কিনা জানতে চাইলে মিলি বলেন, ‘বই নাই। বই পেলে আমি পড়বো’। মিলির এক ভাই ও বোন রয়েছে। অভাবের সংসার। বাবা(মায়ের ২য় স্বামী) দিনমজুরি খেটে সংসার চালান। এ অবস্থায় মিলির জন্য লেখাপড়া বা বিশেষ কিছু করার সামর্থ পরিবারটির নেই। মিলিকে যখন যে কাজে বলা হয় সেটা করে দেয় বলে জানালেন মা ফরিদা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, কোন প্রকার রাষ্ট্রীয় বা হৃদয়বান ব্যাক্তির নিকট থেকে আর্থিক সহায়তা পেলে ক্ষুদ্র ব্যবসায় নেমে হয়তো ভালো দিন কাটতো।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম তারেক সুলতান বলেন, ক্ষুদে মানুষ শুধু মিলি নয়, সকলের জন্যই সরকারের সামাজিক বেষ্টনী প্রকল্পের আওতায় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ওই পরিবারটির খোঁজ খবর নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
এমআই