সময় জার্নাল প্রতিবেদক: 'দেখ তাসিব, আম গাছটায় কত মুকুল এসেছে? দেখতে কত সুন্দর লাগছে'! বরকত মিলনায়তনের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সোনালী মুকুলের মুগ্ধতায় থমকে দাঁড়ায় গনিত বিভাগের দুই শিক্ষার্থী হাফসা ও তাসিব। বসন্তে ক্যাম্পাসে এসে আমের মুকুলের এমন সৌন্দর্যে মুগ্ধ তারা।
কণকণে শীতের পরে প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন হয়েছে। ঋতুরাজের আগমনে শীতের রিক্ততা ভুলে শিমুল-পলাশ, আমের মুকুল ও অন্যান্য ফুলসহ কুকিলের কুহু ডাক বসন্তের এই রুপ বিমোহিত করছে মানুষকে। তবে বসন্তে প্রকৃতিতে এ নজরকাঁড়া রুপ ইট-পাথরের রাজধানীতে দেখা মেলা ভাঁড়।
এদিক থেকে ভিন্ন রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাস। ছোট এই ক্যাম্পাসে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও ফল গাছ। বাহারি ফুলের সাথে শোভা ছড়াচ্ছে সোনালী আমের মুকুল, কুকিলের ডাক ও শোনা যায় এ ক্যাম্পাসে। সব মিলিয়ে বসন্তে অপরূপ সৌন্দর্যের স্থানে রুপ নেয় তিতুমীরের প্রাঙ্গন।আমের মুকুলের মৌ মৌ ঘ্রাণে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে তিতুমীর কলেজ।
আমের মুকুলের সৌন্দর্য মুগ্ধ হয়ে কবি মোহাম্মদ ইরফান লিখেছেন,
'মন জুড়ানো, খেই হারানো' 'ধ্যান ভাঙ্গানো ঘ্রাণ, গাছের দু-কূল' 'আমের মুকুল জুড়িয়ে দেয় প্রাণ!' কবির ভাষার মত বসন্তের আগমনে সোনালী আম্রমুকুলের সৌন্দর্য ও মুহু মুহু ঘ্রাণে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সরকারি তিতুমীর কলেজের প্রাঙ্গনে।
তিতুমীর কলেজের বরকত মিলনায়তনের সামনে, মেয়েদের হলের সামনে, কর্মচারীদের বাসভবনে, বেলায়েত চত্বরে রয়েছে অনেকগুলো আম গাছ। প্রত্যেকটি গাছের ডালগুলোতে ধরেছে অজস্র স্বর্ণালি মুকুল।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন,
‘ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল, ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্রমুকুল ।
চঞ্চল মৌমাছি গুঞ্জরি গায় , বেণুবনে মর্মরে ক্ষিণবায় ’ ।
ভরা ফাল্গুনে এখন আমের মুকুলে ছেয়ে গেছে সব আমগাছ। সোনালী মুকুলের মাতাল করা মৌ-মৌ ঘ্রাণ তিতুমীরের বাতাস জুড়ে। মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণে ছুটে আসছে মৌমাছির দল, শোনা যায় ভ্রমরের গুঞ্জনও।
বসন্তে তিতুমীর ক্যাম্পাসে ফোঁটা বাহারি ফুল, বসন্তের ঝরঝরে বাতাসে আম্রমুকুলের গন্ধ আর ফুলে-ফুলে ভ্রমর-মৌমাছির ওড়াওড়ির দৃশ্য সত্যিই নজরকাড়া মুগ্ধতা ছড়ায় ক্যাম্পাসে আসা শিক্ষার্থীদের মাঝে।
ক্যাম্পাসের পাশে থাকার সুবাধে ক্লাস না থাকলেও মন ভালো করার জন্য সুযোগ পেলেই ক্যাম্পাসে ছুটে আসেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সাফান তাসনিম রিয়া, তিনি জানান,' বসন্ত আশার পর ক্যাম্পাসের রুপ বদলে গেছে। ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর মিলনায়তনের সামনের আম গাছটার আমের স্বর্ণালি মুকুলগুলো চোখে পড়ে। বেলায়েত চত্বরে মুকুলের মৌ মৌ গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পরে। মুকুলগুলোর উপর আবার মৌমাছি দল বেধে উড়ছে। সব মিলিয়ে উপভোগ করার মত একটা পরিবেশ।
গ্রামের বাড়ীতে থাকতে বসন্তে এমন দৃশ্য অহরহ দেখলেও ঢাকায় আসার পর সব জায়গায় এর দেখা মেলে না। তাই সময় পেলেই ক্যাম্পাসে যাই বসন্ত উপভোগ করতে।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাওসিফ মাইমুন বলেন, 'এবারও ফুল ফুটেছে। দখিন হাওয়ার গুঞ্জরণও লেগেছে প্রতিটি মুকুলের থোকায়। যা বাঙ্গালিদের মনে নিরানন্দতা। ক্যাম্পাসের প্রতিটি অঙ্গন রঙিন হয়েছে প্রকৃতির সবুজ সাজে। শীতের আবরণে থাকা কৃষ্ণচূড়া বেরিয়াছে তার খোলস ছেড়ে। ক্যাম্পাসের কোকিল বিরহের সুর তুলে যাচ্ছে।
গনিত বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান শোভন বলেন, এইতো সবে কয়েকদিন হলো শীত চলে গেলো। কনকনে শীতের মধ্যে সবাই যে একটু উষ্ঞতা খুজে। বসন্ত এই বুঝি সেই উষ্ঞতার রুপ ধরে আসে। কিন্তু এই বসন্ত উপভোগ করার সৌভাগ্য হয়বা কয়জনের।
সরকারি তিতুমীর কলেজ যে বসন্তের আগমনে সেজেছে তার পরিপূর্ণ রুপে।
এমআই
সময় জার্নাল/