সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
দিনব্যাপী নানা আয়োজনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) অনুষ্ঠিত হয়েছে দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রথম পুনর্মিলনী। বিভাগের সাবেক সহস্রাধিক শিক্ষার্থী প্রথমবারের মতো মিলিত হয়েছেন তাদের সাবেক শিক্ষায়তনে। শনিবার (১৮ মার্চ) সকাল ১০টায় আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পুমর্মিলনীর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম।
অনুষদ ভবনের সামনে থেকে বের হওয়া শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী সাবেক-বর্তমান সকলের মাঝে লক্ষ্য করা যায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। শোভাযাত্রা শেষে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে পুনর্মিলনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে বিভাগটির অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. শহীদ মুহাম্মদ রেজওয়ানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভুঁইয়া, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, থিওলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ এন এম এরশাদ উল্লাহ, বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ অলী উল্লাহ, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইসলামিক থট'র মহা পরিচালক ড. এম আব্দুল আজিজ।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন সহ বিভাগের অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ' পৃথিবীর প্রায় ৭০ ভাগেরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভিতরকার অনুদান, বিভিন্ন ফাউন্ডেশন বা প্রতিষ্ঠান গঠনের মধ্য দিয়ে কার্যাদি পরিচালনা করে। আমরা যদি একটি মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষা, জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা, বর্তমান পৃথিবীর সাথে নিজেকে এগিয়ে নিতে খাপ খাওয়ানোর মতো শিক্ষা ও আদর্শ ভিত্তিক শিক্ষা অর্জন করতে না পারি, তাহলে শুধুমাত্র একজন গ্রাজুয়েট হয়ে কোন লাভ নাই।'
তিনি বলেন, 'এলামনাই এসোসিয়েশন এমন এক ধরনের প্লাটফর্ম। যে প্লাটফর্মে আমাদের এ অনুভূতি তৈরি হয় যে, আমরা যে চারা থেকে উৎপন্ন হয়েছি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর প্রতিটি বিভাগ হচ্ছে সেই চারার বীজভূমি। এই বীজভূমি আমাদেরকে বড় করে তুলেছে, বৃক্ষে পরিনত করেছে, মহিরুহে পরিণত করেছে। সেখান থেকে আজ আপনারা বৃক্ষে ফল দিচ্ছেন। সে ফলের ফলশ্রুতিতে আপনারা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। আপনাদের মধ্যে আমরা গাছ লাগিয়েছিলাম, এখন আপনাদের মধ্যে ফল ধরেছে। এখন আপনি আপনার মাতৃসম বিশ্ববিদ্যালয়কে সে ফল দিয়ে সমৃদ্ধ করুন। এই আহ্বান আপনাদের কাছে আমি রাখতে চাই। '
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেন, 'আমরা একটা আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখেছিলাম যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলাম যে মহান তা শুধু মুখে নয় তুলনার মধ্য দিয়ে দেখাবো। আমরা চেয়েছিলাম এমন একটা বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ধর্মীয় গোড়ামির উর্ধ্বে থেকে প্রকৃত অর্থে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা হবে। এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। ছাত্রী ও অমুসলিম ভর্তি বিষয়ে আমার ছয় মাসের সাজা হয়েছিল।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মান সম্মান রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। ডিসি থেকে পিওন পর্যন্ত আমরা এমন কোন আচরণ করব না,আচরণের মধ্য দিয়ে আমাদের বুকে আগুন ধরে যায় এমন দৃশ্য আমরা দেখতে চাই না। আমরা দেখতে চাই সেই দৃশ্য যেটাতে আমরা গর্ব করে বলতে পারব, আমাদের শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আর সেই কাজটি এলামনাইদের করতে হবে।'
পরে বিকাল ৩ টায় বিভাগটির অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের খসড়া গঠনতন্ত্র উপস্থাপন ও কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। এরপট স্মৃতিচারণ ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান।
এর আগে শুক্রবার বিকাল ৫টায় বিভাগটির আয়োজনে পিঠা উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হয়।
সময় জার্নাল/এলআর