রাসেল আহামেদ : এখন আর কেউ নিজের ভিত্তি বিবেক, বুদ্ধি,মনুষ্যত্ব বৃদ্ধি করার চেষ্টা করে না।সবাই আছে তার ক্যারিয়ারের খোঁজে। জীবনে কিভাবে কি করা যায়? অর্থ উপার্জন করে বিত্তশালী হওয়া যায়। যে কোনো উপায়?? এর জন্য যা করা দরকার, যা করা দরকার তাই সে করবে। এই জন্য তার ধর্ম-কর্ম ই বলি অথবা স্ব-শিক্ষা বা বুদ্ধিবৃত্তিক শিক্ষা বলি না কেনো কোনো বিষয়ে তার কর্নপাত নেই। সে শুধু ছুটে চলছে ক্যারিয়ারের পিছনে। তাইত দেখি ডিপার্টমেন্টাল পড়া পড়েও সে আর তার ডিপার্ট্মেন্টের কোনো চাকরি-বাকরি করছে না। আচ্ছা এদিকে না যাই। আমার কথা হলো সাহিত্য নিয়ে। হ্যা আজকে সময়ের বড়ই অভাব। তাই এখন আর পত্র-পত্রিকা পড়ার কারো সময় নেই। কেউ আর এখন কাজী নজরুল, রবীন্দ্রনাথ পড়ে না। বই মেলায় গিয়ে কেউ আর সাহিত্যের খোজ রাখে না। সবাই খোজ নেয় কোথায় ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট, মোটিভেশনাল বই আছে। কই চাকরির পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পাওয়া যাবে সেই বই খোঁজে।
কেউ আর মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে চায় না। টাকা কড়ি কামানোর উপায় নিয়ে কোন বই লেখা হয়েছে তা নিয়ে মেতে ওঠে।কেউ আর স্বশিক্ষিত হতে চায় না। কেউ চায় না নিজের সৃজনশীল মেধার উদ্ভাবন ঘটাতে। কেউ সাহিত্য নিয়ে এখন আর ভাবে না। সমাজের ন্যায় নীতিগুলো নিয়ে কথা বলে না। কেউ সাহিত্য পাঠ করে না। কারো এসব পড়ার সময়ই নেই। যাদের সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগ আছে এবং যারা মূলত সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনা করছে তারা ব্যতিত আর কারো তেমন ভ্রুক্ষেপ নেই। সবাই যার যার মত ব্যস্ত। কেউ টাকার পিছনে, কেউ ব্যবসার পিছনে, কেউ চাকরির পিছনে। সাহিত্য জাতির দর্পনস্বরূপ এই কথাটির উচ্ছেদ হইত ঘটেই গেছে। যে জাতির সাহিত্য যত মজবুত সে জাতিকে পরাস্ত করাটাও তত কঠিন। এই কথা এ জাতি হইত ভুলেই গেছে। শিক্ষা নিয়ে জাতির তেমন কোনো ভাবনা নেই। একগাদা তথ্য মুখস্থ করা কখনোই শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হতে পারে না। নিজ থেকে সৃজন করার ক্ষমতা জাতি হারিয়ে ফেলতেছে। জাতির মনুষ্যত্ব দুর্বল হয়ে পড়ছে।আমি বলছি না সব কিছু ছেড়ে সাহিত্যের প্রতি ঝুকে পড়তে।শুধু বলছি কিছুটা হলেও সাহিত্য নিয়ে ভাবতে।সাহিত্যের স্বাদ অনুভব করতে।
সাহিত্য(কবিতা,গল্প,উপন্যাস,নাটক,প্রবন্ধ)পড়ে নিজের মনোবৃত্তিক উন্নত ঘটবে।নিজেকে জানার একটা অবস্থা সৃষ্টি হবে।সমাজ ও জাতির ভুল গুলো নিজের চোখে ধরা পড়বে। এ থেকে নিজের শিক্ষা হবে।নিজেকে শুদ্রানো যাবে। নিজের আত্মশুদ্ধি হবে। মনুষ্যত্ব্যের বিকাশ ঘটবে।সাহিত্য শুধু একটা সামান্য গুচ্ছ বিষয় নয়। সাহিত্য হলো দেশ ও জাতির সমগ্র বিষয়। সেখানে ধর্ম, দর্শন, সংস্কৃতি, ইতিহাস সব বিষয় নিয়েই আলোচিত হয়। যার যেটা ইচ্ছা বেছে নিতে পারে। কাউ ইচ্ছা করলে সব বিষয় সম্পর্কে অবগত হতে পারে। এতে মনোবৃত্তিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিস্ফোরণ ঘটবে। এতে রাষ্ট্র ও সরকার নিয়ে আলোচনা সমালোচনা থাকছে। অন্যান্য জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতির আলোচলা থাকছে যা থেকে আমরা তাদের সম্পর্কে অবগত হতে পারি। আমরা কতটুকু এগিয়ে বা পিছিয়ে আছি তা বুঝতে পারি। যারা সত্যিকারের সাহিত্যিক বা সাহিত্য নিয়ে গভীরতর চিন্তা চেতনা জ্ঞাপন করে তারা খুবই নির্ভুল ও নিখুঁত হয়। তাদের দ্বারা সমাজ, দেশ রাষ্ট্র ও জাতির ক্ষতি হয় না। বরং তারা দেশের ভাল-মন্দ নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা করে একটি সুরাহা করে। ভুল গুলোকে তুলে ধরে আর তা থেকে পরিত্রাণের উপয়ান্তর বের করে। একজন সাহিত্যিক যতটুকু কোমল হয় ততটুকুই দৃঢ় ও রূঢ় হয়। সে প্রতিবাদে বলিয়ান ও বিচক্ষন।
একজন সাহিত্য অনুরাগী মানুষ তার অব্যক্ত কথাগুলোকে কবিতা, নাটক, গল্প, উপন্যাসের মাধ্যমে জাতির সামনে তা ফুটিয়ে তুলে। আর জাতি তা থেকে মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষা গ্রহন করে নিজের উন্নতি করে থাকে। সাহিত্যের সাথে জড়িয়ে থাকলে নিজের মধ্যে ন্যায়-অন্যায়ের দ্বার উন্মোচন হয়। লেখালেখি বা সমালোচনার মাধ্যমে একটা প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলা সম্ভব হয়।বলিষ্ঠ কন্ঠে উচ্চারিত হয় দেশ ও জাতির ভবিষ্যতের কথা। এই জন্য সাহিত্যকে জানতে আমাদের বই পড়ার প্রতি অনুরাগী হতে হবে। আমাদের বেশি বেশি পত্র-পত্রিকায় মনোনিবেশ করতে হবে। হ্যাঁ, আজ এই প্রযুক্তির যুগে আমাদের অনেক কিছুই সহজ হয়ে গেছে। আমরা ইচ্ছা করলেই যখন যখন কোনো না কোনো উপায়ে সাহিত্যের সঙ্গী হতে পারি। শুধু ক্যারিয়ারের চিন্তায় মগ্ন না থেকে নিজেদের জানার একটা চেষ্টা ত করতেই পারি। এতে শুধু আমার নয় দেশ ও জাতির জন্যও মঙ্গলজনক।
লেখক: রাসেল আহামেদ, গনিত বিভাগ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
raselahamed2093@gmail.com
এসজে/আরইউ