মো. আমিনুল ইসলাম:
কয়লা সংকটে বন্ধের পথে ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। বকেয়া ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা ৬ মাস পরেও পরিশোধ না করায় এরই মধ্যে কয়লা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে চীনা অংশীদার। দেশের সবচেয়ে বড় এবং সর্বাধুনিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে জ্বালানি মজুদ আছে ৮-৯ দিনের। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে এটি চালু রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সরকার।
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে সবচেয়ে কম খরচে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। বিশ্ব বাজারে কয়লার বর্তমান দাম অনুযায়ী এই কেন্দ্রটি থেকে ৬ টাকায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা। ১৩২০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে প্রতি দিন কয়লা প্রয়োজন ১২-১৩ হাজার টন। দেশে কয়লার সংকট থাকায় বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করছিল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অংশীদার চীনা কোম্পানি সিএমসি। প্রতি মাসে কয়লার বকেয়া পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে সুদ সহ দেয়ার কথা।সেই হিসাবে ৬ মাসে বাকি ২৯৮ মিলিয়ন ডলার। যা পরবর্তী ৯ মাসেও পরিশোধ করেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। যার কারণে এপ্রিল মাসের পর নতুন করে কয়লার কোনো এলসি খুলেনি সিএমসি। এখন মোট বাকির ৫০ শতাংশ পরিশোধ করলেও উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদুল আলম গত ২৭ এপ্রিল গণমাধ্যমকে জানায়," ২২-২৩ তারিখের মধ্যে কয়লার মজুদ শেষ হয়ে যাবে। সরকার আজকেও যদি ডলার পরিশোধ করে, তাহলেও কয়লা আনতে আমাদের মিনিমাম ২৫ দিন সময় লাগবে। ফলে ৮-১০ দিন আমার প্লান্ট বন্ধ থাকবে। " ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি সরবরাহের এই আশঙ্কা অর্থ বিভাগসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এদিকে জ্বালানি আমদানি অব্যাহত রাখাও সরকারের অগ্রাধিকার উল্লেখ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান,এই সপ্তাহের মধ্যে সলিউশন বের করার চেষ্টা করছে সরকার। তার আশা সংকট হবেনা।
এর আগে কয়লা সংকটের কারণে বন্ধ ছিল দেশের অন্যতম রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন। তবে তা আবার চালু হয়েছে। কয়লা আমদানির জন্য কেন ডলার বরাদ্দ অগ্রাধিকার পাচ্ছে না তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অনেকে। এখনো কেন কয়লার বিল পরিশোধ করা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে ভোক্তাদের। এই গ্রীষ্মে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে তার প্রভাব ভয়াবহ হবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
দেশের মোট বিদ্যুৎতের চাহিদার ১০ শতাংশের জোগান দেয় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। বর্তমান সময়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে বিদ্যুৎতের ব্যবহার। তাই এরই মধ্যে বিভিন্ন অঞ্চলে বেড়েছে লোডশেডিং। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে বড় সংকটে পড়বে দেশ।
এমআই