ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন :
ইন্ডিয়া করোনায় লন্ডভন্ড হচ্ছে। অন্যদিকে নেপালেও ইন্ডিয়ার মত পরিনতির দিকে যাচ্ছে। শ্রীলংকাতেও কেইসের সংখ্যা ভীতিকর লেভেলে বেড়ে গেছে।
ইন্ডিয়ায় প্রতিদিন ৪+ লক্ষ কেইস রিপোর্টিং এবং ৪০০০ মারা যাচ্ছে। এগুলো অফিসিয়াল রিপোর্ট। বাস্তব সংখ্যা আরো বেশী হবে।
ইন্ডিয়ার স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা, রেকর্ড কিপিং বাংলাদেশের মত দুর্বল, বলা যায় মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। করোনা তা প্রমাণ করে দিচ্ছে।
আমেরিকা, ইউরোপের কঠিন সময়গুলোতেও স্বাস্থ্যসেবা, হাসপাতালের পরিবেশ আমার কাছে দেশের স্কয়ার, এভারকেয়ারের চেয়ে ভাল মনে হয়েছে (ভিডিও দেখলে বুঝা যায়)। এমনকি ব্রাজিলের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাও ইন্ডিয়ার চেয়ে অনেক ভাল। ইন্ডিয়া দেশের অখণ্ডতা বজায় রাখতে কিছু বায়ুবীয় শত্রু তৈরী করা, ক্রিকেট খেলা, বলিউড সিনেমার মাধ্যমে এতদিন ঢেকে রাখতে সমর্থ হয়েছিল। করোনা সব উন্মোচন করে দিচ্ছে।
বাংলাদেশের অবস্থাও এরকম হতে পারে যদি না আল্লাহ বিশেষভাবে আমাদের রহমত না করেন। আমাদের সমাজে যেভাবে অন্যায়, অবিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাতে রহমত আশা করাও কঠিন। যদি আল্লাহ বিশেষ কিছু প্রিয় বান্দার উছিলায় করোনার আজাব থেকে রক্ষা করেন...
বিজ্ঞানীদের অনেক তথ্য সঠিক ছিল না :
করোনার শুরুতে যেভাবে বলা হলো যে এটি ভয়াংকরভাবে সংক্রামক। সামাজিক দূরত্ব একটি দুর্বল কনসেপ্ট কেননা সাউথ এশিয়ার সিটিগুলোতে এত ঘিঞ্জি ঘিঞ্জি লোক বাস করে তাতে বেশিরভাগ মানুষের করোনা হয়ে যাওয়া কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা সত্যি হয়নি।
করোনায় একবার আক্রান্ত হলে অন্তত ৭ মাস পর্যন্ত (লেটেস্ট রিপোর্ট) দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। বলা হচ্ছে এটি রেয়ার ইভেন্ট। ইন্ডিয়ায় যে ম্যাসিভ স্কেলে আক্রান্ত হচ্ছে সেগুলোর বেশির দ্বিতীয়বার সংক্রমনের ঘটনা নয়। বেশিরভাগ লোকজন প্রথমবার-ই সম্ভবত আক্রান্ত হচ্ছে।
তাহলে লকডাউন সমাধান?
ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের সিটিগুলোতে লকডাউন তেমন কার্যকরি হবে না। এটা দীর্ঘদিনের কোন ব্যবস্থাপত্র নয়। যারা অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুজেন তারা অজ্ঞ, কিংবা অত্যন্ত স্বার্থপর ক্যাটেগরির মানুষ।
শুরুতে অতিরিক্ত ভীতি, আতংক সৃষ্টি করে সম্ভবত হিতে-বিপরিত হয়ে গেছে। শুরুতে উন্নয়নশীল দেশগুলোও সবাই পাগলের মত লকডাউন দিয়েছিল। এখন হাজার হাজার মারা গেলেও ইন্ডিয়া দেশব্যাপী লকডাউন দিতে পারছে না। মানুষ মানবেও না; সে অবস্থাও নেই...
তাহলে করনীয়?
ঢাল-তলোয়ার ছাড়া নিধিরামদের দেশে যত্নসহকারে #মাস্ক পরিধান করা ছাড়া আর তেমন কোন কার্যকর পন্থা সম্ভবত নেই।
যুগ যুগ ধরে লালিত ভংগুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা দূর্যোগের সময় ঠিক হয়ে যাবে, অক্সিজেন, ICU এর ব্যবস্থা হয়ে যাবে তা কল্পনা করতে শিশুদের মত আশাবাদী হতে হবে। টিকাও সহসা সংগৃহীত হবে না। প্যাটেন্ট রাইট তুলে দিলেও, টেকনোলজি ট্রান্সফার করলেও তা প্রডাক্টশনে যেতে অনেক সময় লাগবে। তাছাড়া পর্যাপ্ত স্কিলের ঘাটতিও রয়েছে। এমন না যে টিকা বানানো প্যারাসিটামল উতপাদনের মত সহজ ব্যাপার।
সবকিছু মিলে করোনার ঢেউ সামলানোর মত সমর্থ নেই। তাই ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করা আর আল্লাহর কাছে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাওয়া। আল্লাহ যদি আমাদের রক্ষা করেন...
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, বায়োমেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশন (বিআরএফ)
সহযোগী অধ্যাপক, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)।
সময় জার্নাল/ইএইচ