মুহা: জিললুর রহমান, সাতক্ষীরা:
বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত না হলেও ভাদ্র মাসের প্রথম দিকের সামান্য বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা শহরের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। শহরের ইটাগাছা পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাইমারী স্কুলের পিছনের বস্তিসহ পশ্চিমপাশের এলাকার প্রায় দুই শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কমপক্ষে তিনটি পরিবারের ঘরের মধ্যেও পানি উঠেছে।
একইভাবে শহরের কামালনগর দক্ষিণপাড়া, পলাশপোল মেহেদীবাগ, রসুলপুর, কাটিয়া মাঠপাড়া, রথখোলা পুরাতন সাতক্ষীরা মাদ্রাসা পাড়া কুলিনপাড়া ডাংপাড়া মুনজিতপুরসহ বিভিন্ন এলাকার নিম্মাঞ্চলের অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শহরের ইটাগাছা পশ্চিমপাড়ার মফিজুল হাওলাদার ও সেফালী খাতুন জানান, গত কয়েকদিনের সামান্য বৃষ্টিপাতে তাদের ঘরের মধ্যে পানি থৈ থৈ করছে। যাওয়ার অন্য কোন জায়গা না থাকায় ঘরে চৌকির নিচে ইট দিয়ে উচু করে কোন রকমে সেখানে অবস্থান করছেন। তবে বৃষ্টি আরো হলে তাদের ঘর ছাড়তে হতে পারে।
জেলা নাগরিক কমিটির নেতা আলী নুর খান বাবুল জানান, তার বাড়ি হতে ইটাগাছা সরকারি প্রাইমারী স্কুলে পিছনে বসবাসকারী প্রায় দুই শত পরিবার সম্পূর্ণ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এভাবে বৃষ্টিপাত অব্যহত থাকলে এলাকার অনেককে ঘর ছাড়তে হবে।
শহরের কামলনগর দক্ষিণপাড়ায় আমিরুজ্জামান বাবু ছোট ময়না মাছের ঘের করেছেন। এরফলে বৃষ্টির পানি বের হতে পারছে না। যে কারণে পানি উপচে বাড়ি ঘরে ঢুকছে।
সেলিম হোসেন জানান, ভাদ্রের সামান্য মৌসুমী বৃষ্টিপাতে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেহেদীবাগে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতার ফলে এসব এলাকায় বসতি ঘরবাড়িতে হাঁটু-পানি উঠে যাওয়ায় পানিবন্দী হয়েছে একাধিক পরিবার। স্থানীয়রা জানান, বিলে মংস্য ঘেরের পাশ দিয়ে ড্রেনেজ ও পৌর এলাকায় ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না করায় বৃষ্টিপাত হলেই এসব এলাকায় কয়েক বছর ধরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। আর জলাবদ্ধতার কারণে এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম দূর্ভোগে বসবাস করছে। জলাবদ্ধতার নিরসনের ব্যবস্থা করার জন্য এলাকাবাসি পৌর কর্তৃপক্ষকে জানালেও আজও পর্যন্ত পৌরসভা কোনো নজর দেননি বলে এলাকাবাসি জানান।
পুরাতন সাতক্ষীরা কুিলন পাড়া এলাকার নাজিরুল ইসলাম বকুল জানান, পৌর এলাকার সহ জেলা পানি নিষ্কাশনের দুটি নদী বেতনাও ইছামতি দিয়ে হত । নদী দুটির মধ্যে বেতনার নাব্যতা হারিয়ে যাওয়ায় এ জলাবদ্ধা সৃষ্টি হয়েছে ।
জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য শিক্ষক শহীদুল ইসলাম জানান, অকালের সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরা শহরের পূর্বাঞ্চল। বিশেষ করে পুরাতন সাতক্ষীরা আলিয়া মাদ্রাসা পার হলেই আশাশুনি সড়কে দু’ধারে দেখা যায় জলাবদ্ধতার চিত্র। বাড়িঘরে ও যাতায়াতের পথে পানি উঠে গেছে। বিল রয়েছে ডুবে। ফসল ও বাড়ি ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকার নারী, শিশু ও বয়স্করা পড়েছে চরম বিপাকে। পানিবন্দি হয়ে দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছেন তারা।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, এই এলাকার পানি নিষ্কাশন হতো বেতনা নদীতে। নদী শাসনের ফলে বেতনা আজ অস্তিত্ব সংকটে। এছাড়া অপরিকল্পিত মাছের ঘের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। স্লুইস গেটের শক্তি নেই পানি নিষ্কাশনের। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই হাবুডুবু খেতে হয় এই এলাকার মানুষের।
এমআই